মেডিকেলে ভর্তি হতে না পারা শাপেবর হয়েছে জেসি ডেইজির

জেসি ডেইজি
জেসি ডেইজি  © টিডিসি ফটো

টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার বনাঞ্চল ভুটিয়া গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গারো পরিবারের সদস্য জেসি ডেইজি মারাক। তার স্বপ্ন ছিলো চিকিৎসক হওয়ার। মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার মেধাতালিকায় নিজের নাম  অপেক্ষমাণ তালিকায় দেখে হোঁচট খেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এই মেডিকেলে ভর্তি না হতে পারাই যেন শাপেবর হল তার। 

জানা যায়, নেত্রকোনার বিরিশিরি মিশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ঢাকার হলি ক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। বিজ্ঞান বিভাগের এই ছাত্রী অষ্টম শ্রেণিতেও পেয়েছিলেন ট্যালেন্টপুল বৃত্তি। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তিযুদ্ধ, কিন্তু কপাল মন্দ ডেইজির। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অপেক্ষমাণ তালিকায় ছিলেন। শেষমেশ ২০০৫-০৬ সেশনে ভর্তি হতে হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে।

ডেইজি বলেন, মেডিকেলে ভর্তি হতে না পারার কষ্ট নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়জীবন শুরু করেছিলাম। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর ডেইজির মনে হলো, মেডিকেলে ভর্তি হতে না পারা শাপেবর হয়েছে তার জন্য। ততদিনে শিক্ষকরাও ছিপছিপে গড়নের এই তরুণীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করতেন। স্যারদের নির্দেশনা অনুসরণের চেষ্টা করতেন। তখন তিনি প্রথম বর্ষের ছাত্রী।

প্রথমবারের মতো প্রথম বর্ষের সবাইকে একটি অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছিলেন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সালমা নাসরিন। সবাইকে চমকে দিয়ে সেই অ্যাসাইনমেন্টে ‘ডাবল এ প্লাস’ পেয়েছিলেন ডেইজি। ক্লাসে ডেইজির করা অ্যাসাইনমেন্টের খাতা দেখিয়ে অধ্যাপক নাসরিন বলেছিলেন, ‘এই অ্যাসাইনমেন্ট এত ভালো হয়েছে যে আমি শুধু এ প্লাস দিয়ে তুষ্ট হতে পারছি না, দিলাম এ ডাবল প্লাস।’

কর্মজীবনে ডেইজি এখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে কর্মরত তিনি। ৩৩তম বিসিএস প্রশাসনে চাকরির সুযোগও পেয়েছিলেন। প্রশাসনের ওপরে ওঠার অপার সম্ভাবনাকে দূরে ঠেলে দিয়ে তিনি এখন মহান শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নিলেন তিনি।

আরও পড়ুন: ব্যাংক অ্যাকাউন্টে শিক্ষার্থীদের জমা ২ হাজার ৩২৬ কোটি, বেড়েছে সংখ্যাও

জানা যায়, ডেইজির পরিবারসহ শিক্ষিত স্বজনদের মধ্যে ৮০ শতাংশ সদস্য পেশায় শিক্ষক। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। কর্মজীবনে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০১৩ সালে। শিক্ষক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস চারেক পার করার পর ৩৩তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়। সেখানে প্রশাসন ক্যাডারে চাকরির সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন ডেউজি। মা-বাবাসহ স্বজনদের সবাই ডেইজিকে অনুরোধ করল, যেন প্রশাসনে যোগ দেন। কিন্তু স্বজনদের একরকম হতাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবেন বলেই স্থির করলেন।

তিনি বললেন, প্রশাসনে যোগদান করলে হয়তো তরতর করে ওপরে ওঠা যেত, কিন্তু সহজ-সরল জীবন থেকে দূরে সরে যেতে হতো আমাকে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়েই রয়ে গেলাম। তার বাবা মধুনাথ সাংমা বলেন, গারো সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রশাসনে নারীদের কেউ ছিল না। তাই ওকে প্রশাসনে যোগ দিতে বলেছিলাম, কিন্তু মেয়ে শিক্ষকতা ছাড়তে চাইল না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট থেকে স্প্যানিশ ও জার্মান ভাষা শিখেন তিনি। ২০১৫ সালে অনিত্য মানখিনের সঙ্গে সংসার শুরু করে এখন শিক্ষকতার পাশাপাশি দুই মেয়ে নিয়ে সংসার সামলান।

তিনি জানান, বিগত শতকের আশির দশকের শেষ দিকে মধুপুরের লালমাটির গ্রাম ভুটিয়ার মধুনাথ সাংমার মধ্যবিত্ত পরিবারে তার জন্ম। চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়। মা মিনু হাজং শিক্ষক ছিলেন। মায়ের বাবা শিক্ষক, মামা-খালারা শিক্ষক। বাবা উন্নয়ন সংগঠনে চাকরি করলেও শুরুটা ছিলো শিক্ষকতা দিয়ে। ছোট সহোদর বোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

ডেইজি সম্পর্কে চট্টগাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক শ্রাবণী মল্লিক বলেন, একাডেমিক হাইপ্রোফাইলের ডেইজিকে পেয়ে চবির এই ইনস্টিটিউট সমৃদ্ধ। শিক্ষার প্রতি তিনি খুবই ডেডিকেটেড। বিশেষ করে ক্ষুদ্র জাতি সত্তা তথা নিজের মান্দি ভাষার বিশেষ সৌন্দর্যের ব্যাখ্যার তত্ত্ব খুঁজে বেড়ান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence