ঢাবি ছাত্রদলে অস্থিরতা, নতুন কমিটির দাবি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:১০ AM , আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৩:৩২ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলে অস্থিরতা চরমে। মেয়াদহীন কমিটির নেতৃত্ব মানতে নারাজ নেতাকর্মীরা। অনুসারীদের নিয়ে আলাদা কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন গ্রুপ। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। স্থবিরতা কাটাতে নতুন কমিটির দাবি করেছেন নেতাকর্মীরা।
তথ্যমতে, ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় কমিটি। তিন মাসের মেয়াদ থাকলেও কমিটি ইতিমধ্যে পার করেছে দুই বছর দুই মাস। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১২টি হলে আংশিক কমিটি গঠন করতে পারলেও কর্মী সংকটের কারণে ছাত্রী হলে এখানো কমিটি দিতে পারে নি সংগঠনটি। সম্প্রতি সলিমুল্লাহ মুসলিম (এস এম) হলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই হলের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে। তারা হলের নতুন কমিটির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, কর্মী সংকটের কারণে নিয়মিত মধুর ক্যান্টিনে রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারছেন না শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সদস্য সচিব আমানুল্লাহ আমান। বহিরাগতদের নিয়ে মধুর ক্যান্টিনে আসেন রাকিব। নেতাকর্মীরা জানান, সাধারণত রোববার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার মধুর ক্যান্টিনে আসেন তারা। কিন্তু করোনার কারণে এক মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সময়ে মধুর ক্যান্টিনে আসেনি ছাত্রদল। তবে ছাত্রলীগ ও অন্যান্য সংগঠন নিয়মিতই মধুর ক্যান্টিনে অবস্থান করেছে। সর্বশেষ গত ২২ ফেব্রুয়ারি মধুর ক্যান্টিনে আসে শাখা ছাত্রদল। এসময় কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। মধুর ক্যান্টিনে না আসলেও সন্ধ্যার পর টিএসসিসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় গ্রুপ গ্রুপ হয়ে আড্ডা দেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
শিক্ষার্থীবান্ধব কর্মসূচিতে নিরব ঢাবি ছাত্রদল
শিক্ষার্থীবান্ধব কর্মসূচিতে নিরব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। বিবাহিতদের ছাত্রী হলে না থাকতে দেয়া, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বিরোধী আন্দোলন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিট বাতিল ইস্যুতে চুপ ছিলো শাখা ছাত্রদল। এসব ইস্যুতে সরব ছিলো ক্যাম্পাসের অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলো। শাবিপ্রবির ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ব্যানারে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশন কর্মসূচি পালন করেছে ঢাবি ছাত্রদল। একই ইস্যুতে রাজু ভাস্কর্যেও সমাবেশ করে। সমালোচনার পর বিবাহিত ছাত্রীদের হলে থাকতে না দেয়ার ঘটনায় আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব স্বাক্ষরিত একটি প্রেস রিলিজ সাংবাদিকদের পাঠানো হয়। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সমস্যা সমাধানের পর আগের তারিখ দিয়ে লোক দেখানো প্রেস রিলিজ দিয়েছে তারা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক বিএনপিপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক ড. তাজমেরী এস ইসলামকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে প্রেস রিলিজ দিয়েছিলো আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, জাতীয় বিভিন্ন ইস্যু, বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমর্থনে বারবার কর্মসূচি দিতে বললেও রাজি হননি বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি। তারা সব সময় ভিসি ও প্রক্টরের দোহাই দেন। বলেন, তারা কর্মসূচি দিতে নিষেধ করেছে তাই এখন প্রোগ্রাম করা যাবে না।
সব কাজে ‘ভাইয়ার দোহাই’
ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ‘ভাইয়া’ নামে ডাকেন। সংগঠনটির সাংগঠনিক অভিভাবকও তিনি। তাদের অভিযোগ, শীর্ষ নেতারা মাঠের কর্মীদের দমিয়ে রাখতে ও নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে ‘ভাইয়ার দোহাই’ দেন। ২০১৯ সালে কমিটির গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত শাখার নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কোনো পরিচিতি সভা করতে পারেনি আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। এছাড়া শাবিপ্রবির ঘটনায় অনশন কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৮-২০০৯ সেশনের নেতাদের বক্তব্য দিতে দেয়া হয়নি। যদিও ওই ব্যাচের জুনিয়রদেরও বক্তৃতা করার সুযোগ দেয়া হয়। এ নিয়ে অভিযোগ উঠলে, ভাইয়ার নির্দেশ আছে বলে তাদের থামিয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বেশ কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা তো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে পারি না। দায়িত্বে যারা আছেন তারাই শুধু কথা বলেন। দায়িত্বপ্রাপ্তরা ‘ভাইয়াকে রেপারেন্স’ দিয়ে আমাদের যা বলেন তাই আমরা বিশ্বাস করি।
আরও পড়ুন- তিন মাসের কমিটিতে ২ বছর পার
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে সর্বশেষ হাসপাতালে ভর্তির পর তার সুস্থতা কামনায় আলাদা কোনো কর্মসূচি পালন করেনি শাখা ছাত্রদল। বিএনপি ও এর অন্যান্য অঙ্গসংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি পালন করেছে।
এদিকে স্থবিরতা কাটাতে নতুন কমিটির বিকল্প দেখেন না নেতাকর্মীরা। তারা বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের এমন বেহাল দশা পুরো সংগঠনে প্রভাব ফেলে। সূত্র জানায়, শীঘ্রই বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি ঘোষণা করবে ছাত্রদল। এ লক্ষ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে সভাও করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। পদপ্রত্যাশীদের একপক্ষের দাবি কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে। আরেক পক্ষ সিলেকশনের মাধ্যমে নেতৃত্ব চায়।
এ বিষয়ে ঢাবি শাখার ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তার হোসেন বলেন, আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামের কথা বিবেচনা করে সংগঠনের স্বার্থে রাজনৈতিক মাঠের ও ক্যাম্পাসের বাস্তবতানুয়ায়ী আমরা সিলেকশনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ত্যাগীদের দিয়ে পরবর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ কমিটি চাই। সর্বোপরি দেশনায়ক তারেক রহমান মহোদয়ের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক এইচ এম আবু জাফর বলেন, নতুন কমিটি না হওয়ায় স্থবির হয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা ইউনিট। আহ্বায়ক-সদস্য সচিব একই গ্রুপের হওয়ায় তারা নিজেদের মতো করেই সংগঠন পরিচালনা করছে। বাকীদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হয় না। ছাত্রবান্ধব বেশ কিছু ইস্যুতে তারা চুপ ছিলো। বারবার তাগাদা দেয়ার পরও তারা কোনো কর্মসূচি করেনি। সব সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রক্টরের দোহাই দেয়। তিনি আরও বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় কাউন্সিল করে কমিটি গঠনের সুযোগ নেই। কারণ আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব এক গ্রুপের হওয়ায় তারা নিজেদের মতো করেই হল কমিটিতে অনুসারীদের পদায়ন করেছে। অন্য গ্রুপের নেতাকর্মীদের সে সুযোগ দেয়নি। যার কারণে কাউন্সিল করলে পুনরায় একই গ্রুপ থেকেই নেতা হবে। স্থবিরতা কাটবে না।
আরও পড়ুন- ‘সেকেন্ড টাইম’ চালুর দাবিতে নীলক্ষেত অবরোধ
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করেছি। শীঘ্রই নতুন কমিটি হয়ে যাবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের সুস্থতা কামনায় মসজিদে দোয়া মাহফিল করেছি। শিক্ষার্থীবান্ধব কোনো কর্মসূচি আমরা বাদ দেই নি। সব কর্মসূচিই পালন করেছি। মধুর ক্যান্টিনে না যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, করোনার মধ্যে আমাদের ক্যাম্পাসে যাওয়া নিষেধ ছিলো। এসব বিষয়ে জানতে সদস্য সচিব আমানুল্লাহ আমানকে কল দিলেও ধরেন নি তিনি।