ঢাবি ভর্তিতে আসন কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত ‘গণবিরোধী’: ছাত্র ফ্রন্ট

ঢাবি ও ছাত্র ফ্রন্ট
ঢাবি ও ছাত্র ফ্রন্ট  © লোগো

আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভর্তির আসনসংখ্যা অন্তত ১ হাজার কমিয়ে ৬ হাজারে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এমন সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সকল স্তরের শিক্ষার্থীদেরকে এরূপ গণবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানায়।

আরও পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন কমছে ১ হাজার

সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক প্রগতি বর্মণ তমা এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, আমরা শিক্ষা সংকোচনের উদ্দেশ্যে গৃহীত এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সাম্রাজ্যবাদী প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে ইউজিসি প্রণীত শিক্ষার্থীবিরোধী ‘উচ্চশিক্ষার কৌশলপত্র: ২০০৬—২০২৬’ এর শিক্ষা সংকোচন নীতি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় এরূপ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতি আরও বলা হয়, প্রশাসন— শ্রেণিকক্ষের আকার, সংখ্যা তথা অবকাঠামোগত দূর্বলতার অজুহাত দেখিয়ে আসন কমানোর কথা বলছে। অথচ একই প্রশাসন এই অবকাঠামো খাতে ৯ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প নিয়েছে। ১৫ বছর মেয়াদী এই প্রকল্পে— হল, লাইব্রেরি, ক্লাসরুম সহ অসংখ্য অবকাঠামো নির্মাণের কথা বলা আছে। তারপরও তারা অবকাঠামোর ঘাটতির অজুহাত দেখাচ্ছে। অবকাঠামো নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীদের জন্য যথাযথ পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব প্রশাসনের।

“তারা সেই দায়িত্ব এড়িয়ে সহজ পদ্ধতি বেছে নিতে চাচ্ছে। আসন সংখ্যা কমিয়ে শিক্ষার্থীদেরকেই বঞ্চিত করছে, যেন অবকাঠামো নিশ্চিত করার দায় খোদ শিক্ষার্থীদেরই। অপরপক্ষে সান্ধ্যকোর্স চালু রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সেখানে রেগুলার ব্যাচের তুলনায় বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। ফলত অবকাঠামো বিদ্যমান ও বিস্তৃত করার সুযোগ থাকার পরও তারা আসন সংখ্যা কমাচ্ছে।”

তাছাড়া প্রশাসন উচ্চশিক্ষাকে ‘প্রয়োজন’ ও ‘দক্ষতাভিত্তিক’ করে শিক্ষিত বেকার কমানোর জন্য আসনসংখ্যা কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বলতে পারি যে— প্রশাসন বোঝাতে চাচ্ছে সরাসরি ম্যানেজেরিয়াল ও অন্যান্য গতানুগতিক চাকরীতে প্রবেশ করার জন্য যেসকল বিভাগের (যেমন: মার্কেটিং, সিএসই) ডিগ্রি প্রয়োজন সেগুলো বাদে অন্যান্য বিভাগগুলোর (যেমন: নৃবিজ্ঞান) আসন সংখ্যাই হ্রাস করবে। ফলে প্রয়োগভিত্তিক বিভাগের আধিপত্য বাড়িয়ে তারা খন্ডিত মনন তৈরির চেষ্টা করছে। অর্থাৎ বলা যায় শিক্ষিত বেকার কমানোর নামে তারা ‘শিক্ষিত’ই কমিয়ে দিচ্ছে— বলা হয় বিবৃতিতে।

তারা আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এরূপ দায়— দায়িত্বহীন শিক্ষা সংকোচন নীতি পুরো দেশে বিদ্যমান শিক্ষা সংকোচনের নীতির সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে। শিক্ষিত বেকার কমানোর ও দক্ষতা ভিত্তিক জনগোষ্ঠী তৈরির নামে সরকার একদল অনুগত ‘শ্রমিক’ তৈরি করতে চায়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সাবজেক্টগুলোর অন্তর্নিহিত মূল্যকে গুরুত্ব না দিয়ে যথাযথ ক্ষেত্র তৈরি করতে ব্যর্থ হয়ে বর্তমানে তারা শিক্ষার্থীদের উপর দায় চাপাচ্ছে। একই সাথে সুবোধ চাকুরীজীবী তৈরির জন্য পড়িয়ে সাহিত্য, দর্শন, সঙ্গীত, রাজনীতি, বিজ্ঞান ইত্যাদি ‘ঝামেলাপূর্ণ’ বিষয় আড়াল করতে চায়। উচ্চশিক্ষাকে সংকুচিত করে এক বিরাট অংশের জনগণকে বিশ্বের সর্বাধুনিক বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক ও বৈপ্লবিক চিন্তার সঙ্গে সংযোগহীন করতে চায়।

“এরকম জনবিরোধী নীতির বিরোধীতা না করে তথাকথিত স্বায়ত্ত্বশাসিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন উল্টো সরকারেরই পদলেহন করছে। আমরা বলে দিতে চাই এর আগে শিক্ষার্থীরা পরাধীন দেশে মজিদ খান শিক্ষানীতি, স্বাধীন দেশে শরীফ খান শিক্ষানীতি, কুদরত-ই-খুদা শিক্ষানীতি, শামসুল হক শিক্ষানীতি ইত্যাদি উচ্চশিক্ষা সংকোচনকারী নীতির বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন করেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সড়ে না দাড়ায় তাহলে ছাত্র সমাজ তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলে সার্বজনীন শিক্ষার অধিকার ছিনিয়ে আনবে।”


সর্বশেষ সংবাদ