ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে না যাওয়ায় আবারও ঢাবি শিক্ষার্থীকে মারধর

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা  © সংগৃহীত

সংগঠনের কর্মসূচিতে না যাওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলে এক ছাত্রকে রুমে গিয়ে ‘চড়-থাপ্পড়’ ও ‘অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার অভিযোগ উঠেছে। একইসঙ্গে ওই ছাত্রকে সিট থেকেও নামিয়ে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছে হল ছাত্রলীগের এক নেতা।

আজ রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী সাগর সরকার হল ছাত্রলীগের পদপ্রার্থী সত্যজিৎ দেবনাথের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনে হল কর্তৃপক্ষকে লিখিত দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে না যাওয়ায় ঢাবি ছাত্রকে বেধড়ক পেটালো জয়ের অনুসারী

অভিযুক্ত ওই নেতার নাম সত্যজিৎ দেবনাথে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক উৎপল বিশ্বাসের সঙ্গে রাজনীতি করতেন।

সামনে হল কমিটিতে সত্যজিৎ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের গ্রুপ থেকে হলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী।

সাগর সরকারের অভিযোগ, আজ দুপুর আড়াইটার দিকে সত্যজিৎ তার কয়েকজন সমর্থককে নিয়ে ১০০১১ নম্বর রুমে গিয়ে তাকে শারীরিকভাবে নাজেহাল করেন।

আরও পড়ুন: ঢাবির নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু ১ জানুয়ারি

তিনি বলেন, ২৯ ডিসেম্বর আমার ফাইনাল পরীক্ষা।এজন্য ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে নিয়মিত যেতে পারছি না। আজকে দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করে রুমে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম, সেই মহূর্তে সত্যজিৎ দেবনাথ তার সমর্থকদের নিয়ে রুমে ঢুকে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। এক পর্যায়ে তিনি আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন শুরু করেন। পরে ১০তলা থেকে আমার বিছানা নিচে ফেলে দেন।

সামনে পরীক্ষা থাকায় এ নিয়ে মানসিকভাবে চাপে থাকার কথা জানিয়েছেন তিনি। এ ঘটনার পর ১০ তলায় নিজের রুম থেকে নেমে গেলেও সাগর হলে রয়েছেন।

আরও পড়ুন: ৬১.৫ শতাংশ শহুরে কিশোর-কিশোরী মানসিক চাপে ভুগছে

অভিযোগের বিষয়ে হল হল ছাত্রলীগ নেতা সত্যজিৎ বলেন, শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়নি। একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে বা ধমক-টমক দেওয়া হয়েছে। শারীরিক নির্যাতনের কথাটা বাড়িয়ে বলা হচ্ছে।

কেন ধমক দিয়েছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ও প্রোগ্রামে ইরেগুলার ছিল, তাই দেওয়া হয়েছে।

হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক উৎপল বিশ্বাস বলেন, মাস্টার্সের একজন ছাত্রের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ দুঃখজনক। বিষয়টা এখন অন্যরা ফোন করে জানিয়েছে। হলে না থাকায় বিষয়টা পুরোপুরি জানতে পারিনি।

“হলে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক থাকলেও এখন আর ওভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। নামেমাত্র আমরা আছি। সামনে হল কমিটি দেওয়া হবে, তাই গ্রুপিং করে জুনিয়রদের নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।”

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, কর্মসূচিতে না যাওয়ার কারণে কোনো শিক্ষার্থীর গায়ে হাত তুলবে, এধরনের রাজনীতি ছাত্রলীগ করে না।

“ছাত্রলীগের কোনো প্রার্থী কেন, কোনো কর্মীরও এটা করার সুযোগ নাই। কেউ করে থাকলে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।”

আরও পড়ুন: ঢাবির খ ইউনিটে ১১১টি আসন খালি

এ বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মিহির লাল সাহা বলেন, আমরা ঘটনাটা জেনেছি এবং লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টা খতিয়ে দেখে আমরা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেব।

এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর সংগঠনের কর্মসূচিতে না যাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন হলের এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করে ওই হলের ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী (হল কমিটি) এক কর্মীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্তের নাম সিফাত উল্লাহ সিফাত। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী।

পরবর্তীতে মারধরের ওই শিক্ষার্থী অভিযোগ দিলে হল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয় সিফাত উল্লাহ সিফাতকে। জানা গেছে, সিফাত হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা ইমরান সাগরের অনুসারী এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী। 


সর্বশেষ সংবাদ