রংপুর মেডিকেলের রাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নতুন কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

রংপুর মেডিকেল কলেজ
রংপুর মেডিকেল কলেজ  © সংগৃহীত

রাজনীতি নিষিদ্ধ রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) ক্যাম্পাসে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। এঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছাত্রদলের কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।

বুধবার (২৬ মার্চ) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে মো. আল মামুনকে সভাপতি ও শামছুদ্দোহা আলম সরনকে সাধারণ সম্পাদক করে ছয় সদস্যবিশিষ্ট রংপুর মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে এই কমিটিকে আগামী ত্রিশ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।

এদিকে রংপুর মেডিকেল কলেজে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে মতামত ব্যক্ত করছেন রমেকে অধ্যয়নরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রমেক ইন্টার্স ডক্টরস সোসাইটি ডেন্টাল ইউনিটের সভাপতি আশিকুল হক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ক্যাম্পাসে পলিটিক্স চালু হোক, এটা কখনই চাই না। ছাত্রলীগের যে ভয়াবহতা দেখেছি আমরা, কখনোই সেটা স্মরণ করতে চাই না আর। ক্যাম্পাসে যে কেউ সেবামূলক বা গঠনমূলক কার্যক্রম হাতে নিক, সংস্থা চালু করুক। বাট নো নেমড বেইজড পলিটিক্স।

মুজতাহিদ মুমিন নামে ৫১ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, সর্বপ্রকার রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসে যারা রাজনীতি ফিরিয়ে এনে ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে তাদেরকে রুখে দিতে হবে অঙ্কুরেই। ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থী সোহান হাসান লিখেছেন, আমরা ক্যাম্পাসে রাজনীতি চাই নাহ।আবার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে চাই না। সব সময় সুন্দর একটি পরিবেশ চাই।

অন্যদিকে 'রাজনীতি মুক্ত রংপুর মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে রাজনীতি ফিরিয়ে আনার পাঁয়তারার বিরুদ্ধে' সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের লক্ষ্যে গত বছরের ১২ ই আগস্ট রমেক এর অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ক্যাম্পাসে ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারীদের সকল ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিধান রাখা হয়। অথচ ২৬ মার্চ ২০২৫ ইং তারিখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল রংপুর মেডিকেল কলেজে তাদের কমিটির ঘোষণা করে। কলেজ প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত অগ্রাহ্য করে কতিপয় শিক্ষার্থীর এহেন নিন্দনীয় কাজের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা উক্ত কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করছি এবং ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি।

ছাত্রদলের নতুন কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার বিষয়ে এমবিবিএস পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী আবুল হাশেম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিগত স্বৈরাচারের আমলে আমরা ছাত্ররাজনীতির ভয়ংকর রূপ দেখেছি। রমেক ক্যাম্পাসে আবারো ছাত্ররাজনীতির পূর্বের ভয়ংকর রূপ আমরা দেখতে চাই না। কলেজ প্রশাসন থেকে অফিসিয়ালি রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পরেও পেশি শক্তির জোরে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে কমিটি দিয়েছে। আমরা এই কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি। কলেজ প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে প্রয়োজনে আমরা শিক্ষার্থীরা আবারো ২৪ নিয়ে আসবো তারপরেও ক্যাম্পাসে কোন প্রকার লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে দিবো না।

এ বিষয়ে রমেক ছাত্রদলের নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামছুদ্দোহা আলম সরন মুঠোফোনে প্রতিবেদককে জানান, আমরা গতকাল কেন্দ্র থেকে কমিটির অনুমোদন পেয়েছি। জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এখন রাজনৈতিক দল গঠন করছে। তাহলে  আমাদের ক্যাম্পাসে কমিটি দিলে সমস্যা কোথায়? যারা বিরোধিতা করছে তারা শিবিরসহ বিভিন্ন গুপ্ত  রাজনীতির সাথে জড়িত। রাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে কীভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,আমি ব্যস্ত আছি।পরে আপনার সঙ্গে কথা বলবো।

এ বিষয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজের প্রফেসর ডা. মো. শরিফুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, যে কেউ দলীয় কমিটি ঘোষণা করতেই পারে। ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ রয়েছে। যদি কেউ দলীয় পরিচয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করে তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ