সর্বোচ্চ সহনশীল ধৈর্য নিয়ে সব ক্যাম্পাসে বিচরণ করছে ছাত্রদল: রাকিব
- ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:২৮ PM , আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৩:১১ PM
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেছেন, ছাত্রদল ছাত্ররাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। ছাত্রদল পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্ররাজনীতি করে। ছাত্ররাজনীতির পাশাপাশি পড়াশোনা করে না। আমরা নির্দেশনা দিয়েছি অহেতুক নয়াপল্টনে কার্যালয়ে (ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়) যাওয়ার দরকার নেই। তোমাদের ক্যাম্পাস তোমরা সেখানেই ছাত্ররাজনীতি করবে।
আজ সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকা কলেজ কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আত্মিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত জুলাই গণঅভ্যুত্থান শহীদ স্মৃতি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট-২০২৪ ফাইনাল খেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ছাত্রদল সর্বোচ্চ সহনশীল ধৈর্য নিয়ে সকল ক্যাম্পাসে বিচরণ করছে। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী বলতে পারবে না আমরা জোর জবরদস্তিমূলক ভাবে মিছিল মিটিংয়ে নিয়ে আসতে বাধ্য করি, হলে কেউ বলতে পারবে না ছাত্রদল জোর জবরদস্তিভাবে বা প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তার করে রুম দখল করেছে। এমন নজির কেউ দেখাতে পারবে না। এমন কর্মকাণ্ডকে ছাত্রদল প্রশ্রয় দেয় না।
‘‘শুরু থেকে আমরা আহ্বান জানিয়েছি ছাত্রদলের নেতাকর্মী কর্তৃক সাধারণ শিক্ষার্থীরা হয়রানির শিকার হয় আমরা তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। ইতোমধ্যে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ কর্তৃক পরীক্ষিত ছাত্রদলের ৪০০ নেতাকর্মীদের বহিষ্কার করতে বাধ্য হয়েছি। শুধুমাত্র তাদের সামান্য মানবিক ভুলের কারণে। আমরা সেই মানবিক ভুলকেও ক্ষমা করিনি, প্রশ্রয় দেয়নি।’’
তিনি আরও বলেন, বিগত ১৮ বছরে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড দেখে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছাত্র রাজনীতির প্রতি বিতৃষ্ণা চলে এসেছে। তাদের ধারণা এসেছে ছাত্ররাজনীতি বলতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে হব,আধিপত্য বিস্তার করতে হবে, চাঁদাবাজি করতে হবে, শিক্ষকদের সাথে দুব্যর্বহার করতে হবে, সর্বক্ষেত্রে পাওয়ার এক্সারসাইজ করতে হবে। সর্বশেষ আওয়ামী লীগ উপহার দিয়েছে ছাত্রসংগঠনকে ভোট চুরির অপরাজনীতির অংশ হতে হবে। ১৯৭১ সালের পর ছাত্ররাজনীতিতে কোন ছাত্রসংগঠন বলতে পারবে না সে ছাত্র ইউনিয়ন হয়ে থাকুন বা অপরাপর বাম সংগঠন হোক না কেন তাদের যত অপরাধ রয়েছে আমাদের মত করে কখনোই এই ধরনের সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার নজির অতীতে কোন ছাত্রসংগঠন দেখাতে পারিনি। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতির কারণে ডিস্টার্ব ফিল না করে সেই ধরনের গঠনমূলক ছাত্ররাজনীতি করতে হবে।
ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের বিভিন্ন অপকর্মের সমালোচনা করে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, বিগত সময়ে নিউমার্কেট ও আশেপাশে ছাত্রলীগ কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি করতো এখন আর চাঁদাবাজির কথা কেউ বলতে পারবে না। ফ্যাসিস্ট আমলে দীর্ঘদিন ধরে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেছি। বারবার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার মুখোমুখি হয়েছি। সেখানে ঢাবির ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ছিল তাই নয় ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা গিয়েও সেখানে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। অতীতে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের অবৈধ মন্ত্রী যদি নিউমার্কেটে আসতো সাধারণ শিক্ষার্থীদের সেখানে নিয়ে যেতে বাধ্য করা হতো।
‘‘আওয়ামী লীগের কর্মসূচি থাকলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঢাকা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের জোর জবরদস্তি করে কর্মসূচিতে নিয়ে যেত। ছাত্রদল প্রমাণ করেছে একজন সাধারণ শিক্ষার্থীকে জোর জবরদস্তি করে কর্মসূচিতে নিয়ে যেতে বাধ্য করে না। ছাত্রদলের একজন নেতাকর্মী কোন অনৈতিক, অন্যায় এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থের বিরোধী কোন কাজ করে আমাদেরকে অবহিত করবেন তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিব। অতীতে কোন ছাত্র সংগঠনের এ ধরনের বুকের পাটা ছিল না যে তারা সত্যের পক্ষে অবস্থান নিবে। শেষদিন পর্যন্ত আমরা সততা সত্যের পক্ষের অবিচল থাকবো।’’
ঢাকা কলেজে ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচের উদ্ধোধক হিসেবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ মীর মুগ্ধের পিতা মীর মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিগত দিনের যে রাজনীতি ছিল সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সুশিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। এজন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। দেশের দুর্যোগ মুহূর্তে এগিয়ে আসতে হবে। বিগত দিনের কলুষিত ছাত্ররাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিগত সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। ছাত্রদলের প্রতি আহ্বান একটি সুষ্ঠু রাজনীতি যেন গড়ে উঠে এটা খেয়াল রাখবেন। মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। মানুষের বিপদে আপদে পাশে থাকবেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, সুশৃঙ্খল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হয়েছে জুলাই বিপ্লবের কারণে। গত ৩০ বছরে ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠনের এমন আয়োজন দেখিনি। ছাত্রদল সভাপতির নিয়ম শৃঙ্খলার ব্যাপারে যে নির্দেশনা তা ক্যাম্পাসে সুশৃঙ্খলা পরিবেশ বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পজিটিভ ধারণ পাবে। বৃহত্তর ছাত্রসংগঠন হিসেবে ছাত্রদলের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরে আসলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে শৃঙ্খলা আসবে।
এ সময় ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক পিয়াল হাসান বলেন, শিক্ষার পাশাপাশি ক্রিয়াঙ্গনে ছাত্রদলের অবদান রয়েছে। আরাফাত রহমান কোকোসহ বিএনপি ও ছাত্রদলের বিভিন্ন নেতাকর্মী ক্রিয়াঙ্গনের সাথে যুক্ত রয়েছেন।
উল্লেখ্য, ঢাকা কলেজস্থ জেলাভিত্তিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে 'শহীদ স্মৃতি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট-২০২৪ আয়োজন করে আত্মিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।