ফেনীতে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১৫

দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ
দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ  © টিডিসি ফটো

ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলায় বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা দ্বন্দের জেরে ছাত্রদলের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আজ রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পাকিস্তান বাজার থেকে শুরু হয়ে দাগনভূঞা বাজার ও পরে সরকারি ইকবাল মেমোরিয়াল কলেজ রোডে প্রায় একঘণ্টা ধরে চলে এ সংঘর্ষ।

আহতরা হলেন- রাজিব, মানিক, জাবেদ, মিরাজ, সোহেল, হৃদয়, সাদ্দাম, মামুন, পারভেজ, জিতু, জনিসহ অন্তত ১৫ জন। তারা স্থানীয় ছাত্রদল ও যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বলে জানা যায়।

স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সূত্রে জানা যায়, দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে দেড় মাস ধরে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ভাই ও দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকবর হোসেন এবং জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি কাজী জামশেদুর রহমান ফটিকসহ বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। রোববার আকবর হোসেনের অনুসারী ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক জাবেদ একটি মিছিল বের করলে জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি কাজী জামশেদুর রহমান ফটিকের অনুসারীরা মিছিলে বাধা দেন। পরে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। পাকিস্তান বাজার থেকে শুরু হয়ে দাগনভূঞা বাজার ও পরে সরকারি  ইকবাল মেমোরিয়াল কলেজ রোডে প্রায় একঘণ্টা ধরে চলে এ সংঘর্ষ। একপর্যায়ে কাজী জামশেদুর রহমান ফটিক ঘটনাস্থলে আসলে দুই পক্ষ আবারও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

এ ব্যাপারে দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকবর হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে একটি মিছিল বের করেছিল। এতে জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি কাজী জামশেদুর রহমান ফটিকের নেতৃত্বে তার লোকজন ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। পরে তারা ছাত্রদল কর্মী জাবেদের বাড়িতে হামলা করেছে। হামলায় ছাত্রদল নেতা রাজিব, মানিক, জাবেদসহ অন্তত ১০-১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি। 

তিনি আরও বলেন, যারা হামলা চালিয়েছে, আমরা ভিডিও ফুটেজে তা দেখেছি। ফটিকের সঙ্গে আসা ব্যক্তিরা আগে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিল। সেখানে ছাত্রদলের কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি। আমি মনে করি, এটি আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নের গভীর ষড়যন্ত্র। আওয়ামী লীগকে এখানে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই এই ষড়যন্ত্র চলছে।

জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি কাজী জামশেদুর রহমান ফটিক  বলেন, উপজেলা বিএনপির এ বিতর্কিত কমিটিকে কোনো কর্মসূচি পালন না করার জন্য জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা বারবার তা উপেক্ষা করছেন। আজও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকবর হোসেনের লোকজন ছাত্রদলের ব্যানারে একটি মিছিল বের করলে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা বাজারে তাদের বাধা দেয়। পরে তাদের লোকজন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গুলি, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও হামলা চালিয়ে আমাদের বেশকিছু নেতাকর্মীদের আহত করেছেন। 

এ ব্যাপারে দাগনভূঞা থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আলী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পসকে বলেন, দুপুরে দাগনভূঞা বাজারে ছাত্রদলের দুই গ্রুপ মারামারি ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, গত ২২ ডিসেম্বর ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলালের একক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সোনাগাজী এবং দাগনভূঞা উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তারপর থেকেই দাগনভূঞা উপজেলার কমিটি বাতিলের দাবিতে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ গত (২৮ জানুয়ারি) দাগনভূঞা উপজেলার সদর ইউনিয়নের করিমপুর এলাকায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর আগে ১৮ জানুয়ারি ফেনী প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন এ দুই উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা।


সর্বশেষ সংবাদ