বিয়ের স্বীকৃতি চেয়ে ছাত্রলীগ নেতার মার খেল তরুণী

ফুয়াদ হোসেন
ফুয়াদ হোসেন  © টিডিসি রিপোর্ট

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের এক নেতার কাছে বিয়ের স্বীকৃতি চাওয়ায় মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন এক তরুণী। গত ২৪ মে ওই তরুণী ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বলছে, তারা এ অভিযোগ খতিয়ে দেখছেন। অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেবেন।

ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম ফুয়াদ হোসেন ওরফে শাহাদাত। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি। এর আগে ছাত্রলীগের আইন সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। ফুয়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন।

লিখিত অভিযোগে ওই তরুণী বলেন, ফুয়াদ হোসেনের সঙ্গে তার ১০ বছরের সম্পর্ক। এই দীর্ঘ সময় তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিষয়ে তিনি গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে জানিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বিষয়টি মীমাংসা করার দায়িত্ব দেন।

পরে তিনি শেখ ওয়ালী আসিফের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি গত ৫ এপ্রিল মীমাংসা করতে বসার সময় নির্ধারণ করেন। কিন্তু গত ৩ এপ্রিল ফুয়াদ তাকে অনেক অনুরোধ করে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করার জন্য তার বাসায় ডেকে নেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন ওই তরুণী।

তিনি বলেন, বাসায় যাওয়ার পর সমাধান না করে ফুয়াদ তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি লাথি মারেন এবং মারাত্মকভাবে জখম করেন। তিনি উপায় না পেয়ে ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি শেখ ওয়ালী আসিফকে তৎক্ষণাৎ বিষয়টি জানান। পরে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন।

অভিযোগে ওই তরুণী আরও বলেন, সামাজিকভাবে স্বীকৃতি চাওয়ার পর থেকেই ফুয়াদ আমার পরিবারের সবার নামে মামলা দেওয়া এবং বিভিন্নভাবে ক্ষতি করার হুমকি দেন। এমনকি আমাকে প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকি ও আমার মানসম্মান নষ্ট করার হুমকি দিচ্ছেন। তার এসব কার্যকলাপে আমি আতঙ্কিত। ২০১৬ সালে মুসলিম আইন অনুসারে আমাদের বিয়ে হয় এবং সব নথি নিজের কাছে আটকে রাখেন ফুয়াদ। পরে তিনি তা অস্বীকার করেন।

এদিকে, ছাত্রলীগ নেতা ফুয়াদও এ তরুণীর বিরুদ্ধে থানায় তিনটি জিডি করেছেন। গত বছরের ৩ নভেম্বরের জিডিতে ফুয়াদ বলেছেন, ওই তরুণীর সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে তার বন্ধুত্ব তৈরি হয়। সেই সূত্রে বিভিন্ন সময় তাদের দেখা-সাক্ষাৎ হয় এবং তারা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যান। সেই সুবাদে ওই তরুণী নিজের মুঠোফোনে তার ছবি তোলেন।

পরে ঢাকায় তার বাসাভাড়াসহ বিভিন্ন খরচ দিতে তাকে বাধ্য করেন এবং বিভিন্নভাবে টাকাপয়সা চেয়ে ফোনে হুমকি দেন। টাকা না দিলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি পোস্ট করে সম্মানহানির হুমকিও দেন তিনি।

এ বিষয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগ নেতা ফুয়াদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে। তার পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি ওই তরুণীর করা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, তার বিরুদ্ধে ওই তরুণী যেসব অভিযোগ করেছেন, তার পুরোটাই মিথ্যা ও বানোয়াট। তিনি বলেন, ওই তরুণীর সঙ্গে তার কখনো বিয়ে হয়নি। তার সম্মানহানির উদ্দেশ্যে ওই নারী মিথ্যা অভিযোগ করছেন। ওই নারীর বিরুদ্ধে তিনি একাধিক জিডি করেছেন।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ৩ এপ্রিল ওই তরুণী তাকে ফোন করে মারধরের ঘটনা জানিয়েছিলেন। তিনি তাকে বলেছিলেন, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পেলে তারা বিষয়টি দেখবেন। তবে পরে ফুয়াদ হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে অভিযোগের সত্যতা পেলে নিয়ম অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ