১৫ সংগঠন নিয়ে ছাত্রদলের ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য’

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত ছাত্র প্রতিনিধি সভা
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত ছাত্র প্রতিনিধি সভা  © সংগৃহীত

১৫টি ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন নিয়ে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য’র ঘোষণা দিয়েছে বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। আজ শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত ছাত্র প্রতিনিধি সভায় এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে এতে বিএনপি জোটের শরীক একাধিক দলের ছাত্র সংগঠন স্থান পায়নি বলে জানা গেছে।

ভোটাধিকার, সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস, সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে এ ঐক্যের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বলে ছাত্র প্রতিনিধি সভায় জানানো হয়েছে।

ছাত্র সংগঠনগুলো হলো- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জেএসডি), গণতান্ত্রিক ছাত্রদল (এলডিপি), নাগরিক ছাত্র ঐক্য, জাগপা ছাত্রলীগ, ছাত্র ফোরাম (গণফোরাম মন্টু), ভাসানী ছাত্র পরিষদ, জাতীয় ছাত্রসমাজ (কাজী জাফর), জাতীয় ছাত্রসমাজ (পার্থ), জাগপা ছাত্রলীগ (লুৎফর), ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, বিপ্লবী ছাত্র সংহতি ও রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহাই দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত মর্মবস্তুকে; মানুষের মর্যাদা, ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে, গণতন্ত্র হত্যা করে বর্তমান সরকার কর্তৃত্ববাদী কায়দায় দেশ পরিচালনা করছে। সরকারের দেশ চালানোর কোনো রাজনৈতিক ও নৈতিক বৈধতা নেই। দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে অকার্যকর করে দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তার রাষ্ট্রীয় পরিচয় হারিয়ে দলদাসে পরিণত হয়েছে। সবকিছুকে করা হয়েছে এক ব্যক্তির ক্ষমতার অধীনস্থ।

আরো বলা হয়, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আজ বিপন্ন। সার্বভৌমত্ব ভয়ংকর হুমকির সম্মুখীন। এই সরকার জাতীয় স্বার্থকে বাজি রেখে তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর। রাষ্ট্রের প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানকে দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে জনস্বার্থের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। তারা তাদের একচেটিয়া ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া। এক দফা ও সংস্কারে প্রস্তাবিত ৩১ দফার আলোকে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবন্তই পারে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে।

আরো পড়ুন: নেতাকর্মীদের নিয়ে হোটেলে খেয়ে বিল দেন না ছাত্রলীগ নেতা মারুফ

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, শিক্ষা ব্যবস্থার অগণতান্ত্রিক, বৈষম্যমূলক ও অনুৎপাদনশীল কাঠামো অটুট থাকায় একদিকে শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরদিকে শিক্ষার মান ক্রমশ নিম্নমুখী হচ্ছে। প্রশ্নফাঁস শিক্ষার মূল ভিত্তিকে দূর্বল করে দিয়েছে। বাংলাদেশের যেকোন দুঃসময়ে এদেশের শিক্ষার্থীরা সবার আগে প্রতিবাদমুখর হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী চরিত্রকে দমনে ছাত্রলীগকে পেটোয়া বাহিনী হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। আধিপত্য জারি রাখতে যা খুশি তাই করার লাইসেন্স দিয়ে দেয়া হয়েছে।

ছাত্রলীগের কাঠামোগত নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক পরিসর ধ্বংস হয়েছে উল্লেখ করে আরো বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হলে গণরুম-গেস্টরুমে শিক্ষার্থীদের নিপীড়ন-নির্যাতন অতীতের সমস্ত রেকর্ডকে অতিক্রম করেছে। ফেনী নদীর পানির নায্য বন্টনের দাবি জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার জন্য বুয়েট শিক্ষার্থী আবরারকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গেস্টরুমে নির্যাতনের বলি হয়েছেন ঢাবি শিক্ষার্থী হাফিজুর মোল্লা। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা-মামলা নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ সময় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভ্যাট আরোপ না করা, বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতন-ফি কমানো এবং অভিন্ন নীতিমালা ও কাঠামো নির্ধারণ, পাঠ্যপুস্তক সংস্কার, মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণের সমস্ত ব্যবস্থা এবং শিক্ষা শেষে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, সহজ শর্তে ঋণ, সকল জাতিসত্ত্বার সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ ৯ দফা ঘোষণা করা হয়। এর ভিত্তিতে বৃহত্তর ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে ক্রিয়াশীল গণতান্ত্রিক ১৫টি ছাত্র সংগঠন সম্মিলিত ভাবে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যে’র যাত্রা ঘোষণা করেছে।


সর্বশেষ সংবাদ