ফের ঢাবিমুখী ছাত্রদল, এগুচ্ছে খণ্ড কর্মসূচীতে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সরব উপস্থিতি ছাত্রদলের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সরব উপস্থিতি ছাত্রদলের  © ফাইল ছবি

নির্বাচনের আগে বিএনপির এক দফা বাস্তবায়নে সক্রিয় দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। একদফা কর্মসূচীকে সামনে রেখে ছাত্ররাজনীতির প্রাণকেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়মুখী হয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে দেয়াল লিখন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে সংগঠনটি। ছাত্রদলের এই তৎপরতাকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের এই মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে শঙ্কায় আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।     

ছাত্রদলের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রলীগের বাধার মুখে ক্যাম্পাসে আসতে পারেনি  ছাত্রদল। অসংখ্যবার ঢাবিতে কর্মসূচী পালন করতে আসলে ও ছাত্রলীগের হামলার মুখে পড়েন তারা। অসংখ্য নেতাকর্মী হামলায় আহত হয়েছেন।

সর্বশেষ ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল ঢাবিতে কর্মসূচীর সুযোগ পায়। মধুরক্যান্টিনেও নিয়মিত বসত ছাত্রদল। যদিও সেই সময় হলে যাওয়ার সুযোগ হয়নি সংগঠনটির। কিন্তু এর কিছুদিন পর আবার ছাত্রলীগের বাধার মুখে পড়ে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এরপর থেকে গত ২ বছরে ৭-৮ বার ঢাবিতে আসতে চাইলেও ছাত্রলীগের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি বিএনপির নির্বাচন কেন্দ্রীক এক দফার কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৎপরতা বাড়িয়েছে সংগঠনটি।

আরও পড়ুন: এক যুগ পর চবিতে প্রকাশ্যে মিছিল করল ছাত্রদল

বিএনপির হাইকমান্ডের আন্দোলনে জোর

সম্প্রতি ঢাকার প্রবেশমুখে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচীতে সক্রিয়তা দেখাতে না পারায় খোদ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে অব্যহতি দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে বিএনপির হাইকমান্ড একটি মেসেজ দেয় আন্দোলনে সক্রিয় না থাকলে যে কেউ অব্যাহতি পাবেন। জানা যায়, বিএনপির আন্দোলনের জোর দেওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়মুখী হয়েছে ছাত্রদল।

ছাত্রদল নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ক্যাম্পাসে সক্রিয় হওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে ঢাবির বিভিন্ন প্রবেশমুখে আড্ডা দেওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ সক্রিয় দেখা যাচ্ছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের। ‘আমরা দ্রুত ফিরছি, মাত্র কয়দিনের অপেক্ষা’ লিখে স্ট্যাটাস দিতে দেখা যায় তাদের।

এদিকে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর রবিবার ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের দেয়ালে ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ স্লোগান লিখে আলোচনা তৈরি করে ঢাবি ছাত্রদল। ছাত্রদল নেতা আনিসুর রহমান খন্দকার অনিকের নেতৃত্বে মধুর ক্যানটিন ছাড়াও ডাকসু ক্যাফেটেরিয়া, কলা ভবনসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দেয়ালে ২০টির বেশি দেয়াল লিখন করেছে তারা।

এসব দেয়ালে ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’, ‘ঘুরে দাঁড়াও বাংলাদেশ’, ‘তারেক রহমান বীরের বেশে আসবে ফিরে বাংলাদেশে’ স্লোগান লেখা হয়। যদিও এদিন দুপুরের দিকে মধুর ক্যানটিনের লেখা মুছে দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

আরও পড়ুন: ২১ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কমিটি

এর একদিন পর ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। ঢাবি ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক তারেক হাসান মামুন, আমানউল্লাহ আমান, হাসান আবিদুর রেজা বায়জীদ এবং নূরে আলম ভূঁইয়া ইমনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি কলভবনের প্রধান ফটক থেকে বের হয়। পরে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।

ঢাবি ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশব্যাপী বিএনপির লংমার্চ শেষে অক্টোবরে ঢাকাকেন্দ্রিক টানা আন্দোলন চলবে। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও পুরোদমে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ছাত্রদল। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত স্যাংশন ও বিএনপির সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি চূড়ান্ত রূপ লাভের অপেক্ষা থাকায় নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জীবিত।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সম্প্রতি আমরা কর্মসূচীর মাধ্যমে দুইটি বার্তা দিতে চাই। একটি হলো ছাত্রলীগের হামলা, পেশীশক্তির বিপরীতে সৃজনশীল কর্মকান্ডের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করতে চাই এবং দেশনায়ক তারেক রহমান শীঘ্রই দেশে ফিরবেন তার আগমনী বার্তা দিতে চাই’। এছাড়াও কেন্দ্র নির্দেশ দিলে আমরা ঢাবিতে কর্মসূচী পালন করবো।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা আগে ও সক্রিয় ছিলাম। কিন্তু প্রশাসন এবং ছাত্রলীগের বাধারমুখে আমরা আমাদের অধিকার হারিয়েছি। সামনের দিনে আমাদের অধিকার ফিরে পেতে এবং সহঅবস্থানের জন্য আমরা ক্যাম্পাসে যাবো। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে আমরা পাশে থাকবো। আর অবশ্যই নির্বাচন সামনে রেখে আমরা সক্রিয় হবো।

আরও পড়ুন: রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকলে পদ হারাতে যাচ্ছেন ছাত্রদল নেতারা

এদিকে, ক্যাম্পাস দখল ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করলে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘লন্ডনের প্রেসক্রিপশনে তারা কাজ করতে চায়। আর তাদের সবাই কর্মসূচী পালন করেনি। তাদের মধ্যে গ্রুপিং আছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা আশংকায় আছে ,কখন তারা নিজেদের মধ্যে মারামারিতে লিপ্ত হয়’। তিনি আরো বলেন, ‘ঢাবি শিক্ষার পরিবেশকে কেউ যদি নষ্ট করতে চায় তাহলে ছাত্রলীগ তাদেরকে মোকাবেলা করবে’।

ছাত্রলীগ এবং ছাত্রদলের ক্যাম্পাসে মুথোমুখি নিয়ে আতংক বিরাজ করছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে। জানতে চাইলে সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘হল থেক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জোর করে প্রোগ্রামে নেওয়া হয়। ক্যাম্পাসে যদি দুই ছাত্রসংগঠনের মারামারির মাঝে আমাদেরকে নেওয়া হয়, তখন কোনো ক্ষতি হলে নিজের ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়বে। আমাদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হবে।  নির্বাচনের আগে হল ছেড়ে দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বারবার বলছে।’


সর্বশেষ সংবাদ