চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল স্টেশনে মেহেদীর ‘টাইম পাস চা’ স্টল
- আমান উল্যাহ আলভী
- প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৪, ১২:১৩ PM , আপডেট: ১৫ জুন ২০২৪, ০২:১১ PM
বেশিরভাগ মানুষদের কাছে চা একটি আবেগের নাম। কারণ তারা মন ভালো থাকলে চা খায়, মন খারাপ থাকলে চা খায়, ঠান্ডা লাগলেও চা খায় আবার গরম লাগলেও চা খায়। চায়ের পরে আবারও চা। এভাবে চলে তাদের জীবন।
চা প্রেমী মানুষের সেবায় এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশনে দিয়েছেন ‘টাইম পাস চা’ নামের একটি দোকান। পরিবারকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার ইচ্ছে থেকেই এমন উদ্যোগ মেহেদী হাসান আদির।
তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের ২য় বর্ষে শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায় হলেও তার শৈশব কেটেছে ঢাকায়। পরিবারে তিন ভাইয়ের মধ্যে আদির সবার ছোট। তার একজন ছোট বোন রয়েছে।
আদির দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বড় ছেলেরাই কেন সবসময় পরিবারের দায়িত্ব নেবে, কষ্ট করে যাবে নীরবে। আমি এই বিষয়টা মানতে পারছিলাম না। তাই আমি পড়াশোনার পাশাপাশি নিজে কিছু করার পরিকল্পনা করি। সে ভাবনা থেকে এ চা স্টল দিয়েছি। এখন চায়ের আয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ ও পরিবারকেও সাহায্য করছি।
এমন ব্যতিক্রমী চিন্তা নিয়ে তিনি বলেন, আমার কাছে স্টেশনে বসে বসে এই চা বিক্রি করাটাকে সহজ ও কম পরিশ্রমের বলে মনে হয়। কারণ আমাদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টিউশনি করার জন্য শহরে যাওয়া-আসা একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে শাটল ট্রেন। আমাদের এই শাটলে শিক্ষার্থীর তুলনায় বগি সংখ্যা অনেক কম। ফলে ট্রেনে দাঁড়ানোরও জায়গা পাওয়া যায় না। অনেক কষ্ট করে ৫-৬ ঘণ্টা সময় নষ্ট করে টিউশনি করিয়ে যদি আমাকে ৩-৪ হাজার টাকা সম্মানিত দেয়। তবে এটা কীভাবে মেনে নেওয়া যায়।
তিনি বলেন, যেখানে ক্যাম্পাসে একবেলা আলু ভর্তা বা ডিম দিয়ে ভাত খেলেই আমার ৪৫ থেকে ৫০ টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে, আর রিকশা সিএনজি ভাড়ার কথা তো নাই বললাম। তো এই ৩-৪ হাজার টাকা দিয়ে মাস কীভাবে চলবে একজন শিক্ষার্থীর! আমার কাছে চা বিক্রি করাটাকে স্বাধীন পেশা মনে হলো। যেখানে আমি ক্লাস-পড়াশোনার পর সন্ধ্যা ৭ থেকে রাত ১০ পর্যন্ত সময় দিই। আর যখন ইচ্ছে হয় বাসায় বিশ্রাম নিই।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে ২৫০০ টাকা পুঁজিমে এ ব্যবসা শুরু করেন আদির। শুরুতে গ্যাস চুলা না থাকায় হলের বান্ধবীরা তাকে চা বানিয়ে দিয়ে সহযোগিতা করতেন। তিনি বলেন, প্রথম প্রথম আমি যেন লজ্জা না পাই সেজন্য আমার বান্ধবীরা সাহস যোগাতে আমার পাশে বসে থাকতো। বন্ধু, বান্ধবী, সিনিয়র ভাই-আপু জুনিয়র সবাই এসে আমার সাথে গল্প করতো, চা খেতো, অভিনন্দন জানাতো।
আদিরের ‘টাইম পাস চা’ দোকানে রং চা, দুধ চা, আর কফি পাওয়া যায়। সাঁড়া পেলে আগামীতে আরও নতুন কিছু নিয়ে আসার কথাও জানান তরুণ এই উদ্যোক্তার।