যে ক্ষোভ থেকে ক্রিকেটের জন্য বাংলাকে বেছে নিয়েছিলেন শামি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:০২ PM , আপডেট: ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১২:০৮ PM
উত্তরপ্রদেশে বাড়ি হওয়া সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় প্রথম সারির ক্রিকেটে ক্যারিয়ার গড়েছেন মোহাম্মদ শামি। বলা যায় ভারতীয় দলের হয়ে খেলা থেকে শুরু করে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ড গড়ার এই যাত্রার ভীত বাংলায় গড়েছিলেন শামি।
কিন্তু নিজ প্রদেশ ছেড়ে ক্রিকেট দুনিয়ায় নিজেকে মেলে ধরার ব্রত নিয়ে কেনো পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন মোহাম্মদ শামি তা জানার আগ্রহ অনেকের। বিশ্বকাপে দূর্দান্ত খেলার পর সম্প্রতি এসব বিষয় নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।
ক্রিকেটার শামিকে বিশ্বের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে কলকাতা ময়দান। তবুও শামি আসলে বাংলার নন। আদতে উত্তরপ্রদেশের আমরোহার বাসিন্দা তিনি। উত্তরপ্রদেশে ক্রিকেটে হাতেখড়ি হলেও ক্লাব ক্রিকেট খেলার জন্য প্রথম থেকেই শামি বেছে নিয়েছিলেন কলকাতার ময়দানকে। বাংলার হয়েই খেলেন ঘরোয়া ক্রিকেট। খেলার জন্য বছরের একটা বড় সময় থাকতেন কলকাতাতেই।
কলকাতার ময়দান, ইডেন গার্ডেন্স সব কিছুই তার অতি চেনা। উত্তরপ্রদেশে ক্রিকেটার তৈরি হয় না, এমন নয়। মোহাম্মদ কাইফ, সুরেশ রায়না, কুলদীপ যাদব, পীযূষ চাওলা, প্রবীণ কুমার, ভুবনেশ্বর কুমার— গত কয়েক বছরে উত্তরপ্রদেশের বহু ক্রিকেটার দেশের হয়ে খেলেছেন। তাহলে কেনাে শামিকে ছোট বয়সেই নিজের রাজ্য ছাড়তে হয়েছিল?
জানা গেছে, নিজের রাজ্য উত্তরপ্রদেশের হয়েই খেলতে চেয়েছিলেন শামি। কিন্তু একটি ঘটনার পর শামি সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেছিলেন। সেই বঞ্চনা, অপমানের কথা নিজেই ভারতীয় গণমাধ্যমে বলেছেন বলে খবর প্রকাশ করেছে আনন্দবাজার পত্রিকা।
আরও পড়ুন: এখন থেকে রাজনীতি করবেন সাকিব আল হাসান: ওবায়দুল কাদের
বৈষম্যের অভিযোগ তুলে শামি বলেছেন, ‘উত্তরপ্রদেশের ট্রায়ালে দু’বছর অংশ নিয়েছিলাম। প্রথম বার শুরুতে সবকিছুই ঠিক ছিলো। সবকিছু ভালই মনে হতো। কিন্তু ফাইনাল রাউন্ড এলেই উত্তরপ্রেদেশের লোকেরা আমাকে লাথি মেরে বাইরে বের করে দিতো। আমাকে বলা হতো, এখানে তোমার কোনও প্রয়োজন নেই।’
তার পরের বছর আরও খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল জানিয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বলেছেন, ‘পরের বছরও একই রকম ঘটনা ঘটেছিল। প্রায় ১৬০০ ছেলে এসেছিল ট্রায়ালে। তিন দিনে সবাইকে দেখে রঞ্জি ট্রফির দল তৈরি করার কথা ছিল। সে বার আমার সঙ্গে দাদাও ছিলেন। প্রধান কর্তাদের একজনের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন দাদা। আমার দাদাকে ওই কর্তা এমন একটি কথা বলেছিলেন, যা আমরা জীবনে কখনও ভাবতে পারি না। তিনি বলেছিলেন, ‘যদি আমার চেয়ার নাড়িয়ে দিতে পারে, তা হলে তোমার ভাই সুযোগ পেয়ে যেতে পারে। না হলে সুযোগ নেই। আমি দুঃখিত।’ আমার দাদা তাঁকে জবাবে বলেছিলেন, ‘আমার ভাই আপনার চেয়ার নাড়াতে তো পারবেই, দরকার হলে আপনার চেয়ার উল্টেও দিতে পারে। ওর গায়ে এতটাই শক্তি আছে। কিন্তু আমি চাই না এভাবে আমার ভাই সুযোগ পাক। সে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে সুযোগ পেলেই খুশি হব।’ তাতে ওই কর্তা বলেছিলেন, ‘তা হলে তোমার ভাইয়ের জায়গা নেই এখানে। প্রতিভা দিয়ে এখানে কিছু হয় না।’ দাদাও মুখের উপর উত্তর দিয়েছিলেন, ‘তা হলে আমার ভাই কোনও দিন উত্তরপ্রদেশের হয়ে খেলবে না।’
দু’বছর খারাপ অভিজ্ঞতা হওয়ার পর শামি কখনও উত্তরপ্রদেশের হয়ে খেলার কথা ভাবেননি। বেছে নিয়েছিলেন বাংলাকে। এই রাজ্যের হয়ে ২০১০ সালের ১৭ নভেম্বর ইডেনে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল তার। সেই থেকেই শামি বাংলার। এবার বিশ্বকাপে সাফল্যের পর অবশ্য উত্তরপ্রদেশেও স্বীকৃতি পাচ্ছেন তিনি। তার গ্রামে একটা ছোট ক্রিকেট স্টেডিয়াম তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। বিশ্বকাপ ফাইনালের পর শামিকে বুকে টেনে নিয়ে সান্ত্বনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও।
চলতি বিশ্বকাপে ভারতের সব থেকে সফল বোলার মোহাম্মাদ শামি। বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তিনি। মাত্র ৭ ম্যাচ খেলে ২৪টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। এর আগে এক বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে সব থেকে বেশি উইকেট নিয়েছিলেন জাহির খান। তাকে ছাপিয়ে গিয়েছেন শামি।
চলতি বিশ্বকাপে তিনটি ম্যাচে ৫ বা তার বেশি উইকেট নিয়েছেন ভারতীয় পেসার। সেমিফাইনালে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে তার ৭ উইকেট খেলার ছবিটাই বদলে দেয়।