কলেজ পর্যন্ত পড়ার সুযোগ হয়নি ফুটবলে মনোযোগী মেসির
- আফরিন সুলতানা শোভা
- প্রকাশ: ০৬ মে ২০২৩, ১২:১৮ PM , আপডেট: ০৭ মে ২০২৩, ০২:২০ PM
আর্জেন্টাইন সুপারস্টার লিওনেল মেসি নবীন-প্রবীণ সবার কাছে ফুটবলের 'নায়ক'। বিশ্বকাপে তাঁর চোখ ধাঁধানো পারফর্ম্যান্স এখনও ভুলতে পারেনি বিশ্ববাসী। আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের বিশ্বকাপ খরা ঘুচেছে লিওনেল মেসির হাত ধরে। মেসি যেন এক আশ্চর্য প্রতিভার নাম। এই শতাব্দীতে ফুটবলের কথা বললে লিওনেল মেসির নামটি আসবে বারবার ফিরে।
আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন জন্মগ্রহণ করেছিলেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। বাবা হোর্হে হোরাসিও মেসি কাজ করতেন রোজারিওর একটি স্টিল কারখানায়। আর মা সেলিনা মারিয়া কুচ্চিত্তিনি ছিলেন পার্ট-টাইম ক্লিনার। চার ভাইবোনের মধ্যে মেসি তৃতীয়। তার বড় দুই ভাই রদ্রিগো ও মাতিয়াস। ছোট বোন মারিয়া সল। ছোটবেলা থেকেই তাদের পরিবার ছিল ফুটবলপ্রেমী। বড় দুই ভাই ও দুই মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে ফুটবল খেলেই বাল্যকাল কেটেছে তার।
মেসির জন্ম রোজারিওতে। খুব অল্প বয়সেই জন্মস্থান ছাড়লেও চতুর্থ গ্রেড পর্যন্ত সেখানেই পড়াশোনা করেছেন মেসি। মনিকা তখন মেসির শিক্ষক ছিলেন। তাঁর হাত ধরেই লিখতে ও পড়তে শিখেছেন মেসি। তারপর বিচ্ছেদ ঘটে তাদের।
মেসি সবসময় একটি বল নিয়ে স্কুলে যেতেন। প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করার পর, তার পরিবার ১৩ বছর বয়সে বার্সেলোনায় স্থানান্তরিত হয়। তিনি বার্সেলোনার বিখ্যাত লা মাসিয়াতে যোগ দেন, ফুটবলের অন্যতম সেরা প্রশিক্ষণ সুবিধা পেতে। সেখানেই মেসি ১৩তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। কলেজ পর্যন্ত যাওয়ারও সুযোগ হয়নি তার।
সাধারণ পড়াশোনায় অসাধারণ মেসি
লিওনেল মেসি মাত্র ১৩ বছর বয়সে আর্জেন্টিনা থেকে স্পেনের বার্সেলোনায় চলে আসেন। ১১ বছর পর্যন্ত তিনি আর্জেন্টিনার কোলেজিও জেনারেল লাস হেরাস স্কুলে পড়েছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ ২০১৫ সালে মেসিকে সম্মাননা জানায়। স্কুলে মেসি আর দশজন সাধারণ শিক্ষার্থীর মতোই পড়ালেখা করেছেন। স্পেনে থিতু হওয়ার পর বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাবের ইয়ুথ একাডেমি লা মাসিয়াতে তাঁর প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এই একাডেমির শিক্ষার্থী হিসেবে একটি এলিমেন্টারি স্কুলে মেসি পড়াশোনা করেছেন বলে জানা যায়। মেসির ভাষা স্পানিশ। তিনি ইংরেজি ভাষা জানেন না।
চার বছর বয়সী একটা বাচ্চা রাস্তায় বাবার সঙ্গে খেলছে। বছরখানেক পর তাকে টেনে নিল স্থানীয় দল গ্রান্দোলি। সেটিও মজার এক গল্প। ১৯৮৬ সালে জন্ম নেওয়া বাচ্চা-কাচ্চাদের নিয়ে গড়া দলের একটা ম্যাচ ছিল। ম্যাচটা গ্রান্দোলির, দলের নাম ‘টিম-৮৬’। একজন খেলোয়াড় তখনো আসেনি। কোচ মেসিকে দলে নেন। সে জন্য আগে মেসির দাদিকে রাজি করাতে হয়েছিল। ম্যাচে মেসির খেলা দেখে তো সবার আক্কেলগুড়ুম। এত ভালো! নির্ঘাত ম্যারাডোনার মতো হবে! গ্রান্দোলি মেসিকে নিয়ে নিল। সেটা তার ফুটবলার হওয়ার পথে প্রথম ধাপ।
আর্জেন্টিনার শিশুরা ৬ বছর বয়সে স্কুল শুরু করে। তারা ৬-১১ বছর বয়সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং তারপর ১১-১৭ বছর বয়সের মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা শুরু করেন। আর্জেন্টিনায় মেসির স্কুল জীবন সম্পর্কে তেমন কিছু জানা না গেলেও তথ্য বলছে তিনি রোজারিওর লাস হেরাসের ইস্কুয়েলা নামে একটি বিদ্যালয়ের পড়াশোনা করেছিলেন। তখন তিনি থাকতেন সান্তা ফে প্রদেশে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে মেসির গোল উদযাপন—এডিট করা ছবি ভাইরাল
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ-১৮ এর খবরে মেসির পড়াশোনা সম্পর্কে বলা হয়েছে, পড়াশোনায় মেসি একজন মাঝারি ধরনের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি সবসময় একটি বল নিয়ে স্কুলে যেতেন। প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করার পর, তার পরিবার ১৩ বছর বয়সে বার্সেলোনায় স্থানান্তরিত হয়। তিনি বার্সেলোনার বিখ্যাত লা মাসিয়াতে যোগ দেন, ফুটবলের অন্যতম সেরা প্রশিক্ষণ সুবিধা পেতে। সেখানেই মেসি ১৩তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। কলেজ পর্যন্ত যাওয়ারও সুযোগ হয়নি তার।
আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম দিয়ারিও ওলের কাছে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে মেসি জানিয়েছেন, 'ছাত্র হিসাবে আমি কেমন ছিলাম? আমি পড়াশোনা পছন্দ করতাম না এবং এটা আমার জন্য কঠিন ছিল, তবে আমি ভালো ব্যবহার করেছিলাম।'
মেসির পরিবারে খুব বেশি আর্থিক সচ্ছলতা না থাকলেও তার পিতা চাইতেন তার সন্তানদের জীবন উজ্জ্বল হোক। তার জন্য তিনি সবরকম পরিশ্রম করেছে। একইসঙ্গে মেসি ও তার ভাইদের ফুটবলের প্রতি উৎসাহিতও করেছেন। ছোটবেলা থেকেই মেসি তার ভাইদের সাথে ফুটবল খেলতে মাঠে যেতেন।
ওই সাক্ষাৎকারে একই কথা স্বীকার করেছেন মেসি নিজেই। তিনি বলেন, 'আমার কোনো কিছুর অভাব হয়নি। কারণ আমার বাবা সারা দিন কাজ করতেন এবং সম্ভবত আমাদের কোনো কিছুর অভাব যাতে না হয় তা নিশ্চিত করার জন্যই তিনি সেখানে (পরিবারের সঙ্গে) ছিলেন না। তিনি অনেক বেশি কাজ করতেন এবং অতিরিক্ত সময়েও কাজ করতেন।'
মেসির দাদি চাইতেন মেসি বড় ফুটবলার হয়ে উঠুক। তার উৎসাহেই মেসির বাবা তাকে ফুটবল খেলার সরঞ্জাম কিনে দেয়। আর মাত্র চার বছর বয়সে মেসিকে ফুটবল ট্রেনিং ক্লাবে ভর্তি করে দেন। ১৯৯৩ সালে মাত্র ছয় বছর বয়সে ক্লাব নিওয়েল’স ওল্ড বয়েজে যোগ দেন মেসি। একই সময় স্থানীয় যুবশক্তি ক্লাব ‘দ্য মেশিন অব ’৮৭’-এর সদস্য হিসেবেও খেলেন তিনি। যার ফলে ওই ক্লাবটি পরবর্তী চার বছরে একটি মাত্র খেলায় পরাজিত হয়।
আরও পড়ুন: একাই তিন পুরস্কার পেলেন মেসি
কিন্তু মাত্র ১০ বছর বয়সেই গ্রোথ হরমোনের সমস্যা ধরা পড়ে মেসির। যার ফলে আর বেড়ে উঠবে না মেসি তবে এই রোগ চিকিৎসায় সারিয়ে তোলা যাবে। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন প্রচুর অর্থের। মাসে অন্তত এক হাজার ডলার। চিন্তিত হয়ে পড়েন মেসির বাবা-মা। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তার ভবিষ্যৎ। অসহায় বাবা ধর্না দিতে থাকেন স্থানীয় বিভিন্ন ক্লাবগুলোতে।
নিউওয়েলস ক্লাব প্রথমে রাজি হলেও আসলে অত অর্থ ব্যয় করার সামর্থ্য নেই তাদের। বাবা যান বুয়েনেস এইরেসে ক্লাব রিভার প্লেটে। কিন্তু সেখানেও একই সমস্যা। একজন খেলোয়াড়ের জন্য স্থানীয় ক্লবগুলোর আসলে এ বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয়ের সামর্থ্য নেই! দিশাহারা হয়ে যান বাবা-মা।
ওই সময়ে সামনে আসেন বার্সেলোনার তৎকালীন ক্রীড়া পরিচালক কার্লোস চার্লি রেক্সাস। এই ভদ্রলোকের তখনকার কাজ ছিল দেশ-বিদেশ ঘুরে ঘুরে বার্সার বিখ্যাত ‘লা মেসিয়া’ একাডেমির জন্য প্রতিভাবান ফুটবলার খুঁজে বের করা। সেবার ছোট-বড় বহু ক্লাব ঘুরেও আর্জেন্টিনার কিশোর ফুটবলারদের দেখে তেমন মন ভরছিল না তার। খুঁজছিলেন এমন কাউকে, যাকে নিয়ে ভবিষ্যৎ স্বপ্ন দেখতে পারবেন তিনি।
মাঠের সব থেকে ছোটখাটো, সব থেকে দুর্বল ছেলেটা তার থেকে আধহাত লম্বা লম্বা খেলোয়াড়দের বিন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়ে একের পর এক গোল দিয়েই যাচ্ছে। বলটা মনে হচ্ছে চুম্বক দিয়ে ওর পায়ে লাগানো আছে। মুগ্ধ রেক্সাস তখনই খোঁজ করলেন তার বাবা-মার। মেসিকে তার চাই-ই চাই।
বার্সেলোনার জার্সিতে লিওনেল মেসির অভিষেক হয় ১৬ অক্টেবর ২০০৪ সালে। মেসির বয়স তখন ১৭ বছর ৩ মাস ২২ দিন। অভিষেকের সাত মাস পর ২০০৫ সালের ১ মে ক্লাবের জার্সিতে প্রথম গোল পান এই ক্ষুদে জাদুকর। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। লা মাসিয়া থেকে উঠে আসা এই আর্জেন্টাইন ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় জুড়ে কাতালুনিয়ার দলটিকে দিয়েছেন মুঠোভরে, দিয়ে যাচ্ছেন এখনও। বিশ্বসেরা এই তারকার ফুটবলের আঙিনায় যত প্রাপ্তি।
২০১৭ সালের জুনে মেসি বিয়ে করেন দীর্ঘ দিনের বান্ধবী রোকুজ্জোকে। মেসির স্ত্রীর নাম আন্তোনেয়া রোকুজ্জো। রোকুজ্জোকে তিনি ৫ বছর বয়স থেকে চিনতেন। ২০ বছর বয়সে দুজনের প্রেমের সম্পর্ক প্রথম প্রকাশ্য হয়। এই দম্পতির তিনটি ছেলে। ২০১২ সালে জন্ম নেয় থিয়াগো। ২০১৫ সালে মাতেও। এবং ২০১৮ সালে জন্ম নেয় চিরো। মেসি ফুটবল বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলোয়াড়দেরও একজন। ইউনিসেফ, নিজের মেসি ফাউন্ডেশনসহ আরও কিছু দাতব্য সংস্থার সঙ্গে তিনি জড়িয়ে আছেন।
মেসির ১০ নম্বর জার্সি অর্জন
রোনালদিনিয়ো’র প্রস্থানের পর মেসি তার ১০ নম্বর জার্সি পেয়ে যান। এই মৌসুমে মেসি ২০০৮ ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার-এর পুরস্কারে ৬৭৮ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে কোপা দেল রে’র একটি খেলায় মেসি ২০০৯ সালে তার প্রথম হ্যাট্রিক করেন। খেলায় বার্সেলোনা ৩–১ ব্যবধানে জয় লাভ করে। ২০০৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, মেসি রেসিং স্যান্তেনদার এর বিপক্ষে খেলার দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে নেমে জোড়া গোল করেন। ঐ খেলায় ১–০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকেও মেসির কর্তৃত্বে বার্সেলোনা ১–২ ব্যবধানে জয় লাভ করে।
মেসির আকাশের দিকে দুহাত হাত উঁচিয়ে করা গোল উদযাপনটি বিশ্ব বিখ্যাত। এই উদযাপনটি করার মাধ্যমে তিনি তার প্রয়াত হওয়া দাদীকে শ্রদ্ধা জানান। লিও মনে করেন তার দাদী মারা গেলেও তার ছায়া এখনো লিও’র মাথার উপরে রয়েছে এবং তিনি উপর থেকে সব সময় তাকে দেখছেন।
মেসির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার
ক্লাব ফুটবলে এমন কোনো শিরোপা নেই, যার স্বাদ পাননি লিওনেল মেসি। ১১ বছর বয়স থেকেই মেসি স্পেনে লালিত-পালিত হয়েছিলেন বলে তাঁর নিজের স্পেনীশ নাগরিকত্ব আছে। ২০০৪ সালে তাকে স্পেনের অনূর্ধ্ব-২০ দলের হয়ে খেলার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তবে মেসি তার জন্মের দেশ আর্জেন্টিনার হয়েই খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
২০০৫ ফিফা যুব চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি আর্জেন্টিনার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। হাঙ্গেরির বিপক্ষে বন্ধুত্বপূর্ণ ম্যাচের মধ্য দিয়ে মেসি ২০০৫ সালের আগস্টে পুরোপুরি আন্তর্জাতিকভাবে নিজের প্রথম আত্মপ্রকাশ করিয়েছিলেন।
২০০৬ সালে তিনি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিলেন। বিশ্বকাপ খেলতে আর্জেন্টিনার সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হয়ে মাঠে অভিষেক হয় তার। কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা বাদ পড়ে গিয়েছিলো। ২০০৮ সালে তিনি বেইজিং অলিম্পিক ফুটবলে আর্জেন্টিনার হয়ে একটি অলিম্পিক স্বর্ণপদক জিতেছিলেন।
২০১০ বিশ্বকাপে, মেসি দশ নম্বরের জার্সি পরেছিলেন। সেই ঐতিহাসিক দিয়াগো ম্যারাডোনার ১০ নম্বরের জার্সি। এবং ২০১০ সালে আর্জেন্টিনাকে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে সহায়তা করার জন্য দুর্দান্ত খেলেছিলেন।
জাতীয় দলের হয়ে ১৭৪ ম্যাচে ১০২ গোল করলেন মেসি। বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছেন ৫ বার (২০০৬, ২০১০, ২০১৪, ২০১৮, ২০২২)। বিশ্বকাপে গোল ১১টি (আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ)। বিশ্বকাপের ফাইনাল ২ বার (২০১৪ ও ২০২২)। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ১৯৪ মিনিট খেলেছেন মেসি। তার চেয়ে বেশি খেলেছেন কেবল ইতালি সাবেক তারকা ডিফেন্ডার পাওলো মালদিনি (২ হাজার ২১৭ মিনিট)। অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড মেসির (১৮)।
দেশের হয়ে কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন (২০২১), কনমেবল-উয়েফা কাপ অব চ্যাম্পিয়ন্স (২০২২), সামার অলিম্পিক্স (২০০৮, স্বর্ণ পদক), ফিফা যুব বিশ্বকাপ (২০০৫) চ্যাম্পিয়ন।
মেসির আকাশের দিকে দুহাত হাত উঁচিয়ে করা গোল উদযাপনটি বিশ্ব বিখ্যাত। এই উদযাপনটি করার মাধ্যমে তিনি তার প্রয়াত হওয়া দাদীকে শ্রদ্ধা জানান। লিও মনে করেন তার দাদী মারা গেলেও তার ছায়া এখনো লিও’র মাথার উপরে রয়েছে এবং তিনি উপর থেকে সব সময় তাকে দেখছেন। এ কারণেই আকাশের দিকে দু হাত উঁচিয়ে এ ভঙ্গিমার মাধ্যমে লিও তার দাদীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
২০০৭ সালে লিও মেসি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠা করেন মেসি। এ ফাউন্ডেশনটির মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত ও অসুস্থ শিশুদের সাহায্য করা হয়। তাদের চিকিৎসা,পড়াশোনা এবং অন্যান্য খরচ বহন করা হয় ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে। লিও তার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, শৈশবে তিনি কঠিন একটি সময় পার করেছিলেন শারীরিক অসুস্থতার কারণে। শারীরিকভাবে অসুস্থ শিশুদের অসহনীয় যন্ত্রনাকর সময় কাটাতে হয় সেটা তিনি জানেন। এই ফাউন্ডেশনটির মাধ্যমে তিনি দুস্থ শারীরিকভাবে অসুস্থতার স্বীকার অসহায় শিশুদের সাহায্য করার চেষ্টা করেন।
মেসির ব্যক্তিগত অর্জন:
* ব্যালন ডি’অর - রেকর্ড ৭ বার (২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২ (প্রথম চারবার ফিফা ব্যালন ডি’অর নামে), ২০১৫, ২০১৯, ২০২১ (শেষের তিনবার শুধু ব্যালন ডি’অর))
* বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল (সেরা খেলোয়াড়): ১ বার (২০১৪)
* ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার: ২ বার (২০০৯, ২০২৩)
* ফিফা ‘দা বেষ্ট’ মেন’স প্লেয়ার (বর্ষসেরা ফুটবলার): ২০১৯, ২০২৩
* ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু (ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে লিগে সর্বোচ্চ গোল): ৬ বার (২০০৯-১০, ২০১১-১২, ২০১২-১৩, ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯)
* আর্জেন্টিনার বর্ষসেরা ফুটবলার: ১৪ বার (২০০৫, ২০০৭, ২০০৮, ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৩, ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৯, ২০২০, ২০২১)।
আরও পড়ুন: ব্যবসায়ে মনোযোগী মেসি, খুলছেন প্রতিষ্ঠান
মেসির ক্লাব ক্যারিয়ার
লিওনেল মেসির তারকাখ্যাতির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে বার্সেলোনার। তবে আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে ক্লাবটি ছাড়তে বাধ্য হন মেসি। ২০২১ সালে পিএসজিতে যোগ দেওয়ার আগে পেশাদার ক্যারিয়ারের পুরোটাই কাতালান ক্লাবটিতে খেলেন তিনি। দলটির হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ (৭৭৮) ও গোলের রেকর্ড (৬৭২) দুটিই তার।
বার্সেলোনার হয়ে ৩৫টি শিরোপা জিতেছেন মেসি। এর মধ্যে রয়েছে ১০টি লা লিগা, চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, তিনটি উয়েফা সুপার কাপ, সাতটি কোপা দেল রে ও তিনটি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ শিরোপা। ২০২১ সালে দুই বছরের চুক্তিতে লিগ ওয়ানের ক্লাব পিএসজিতে যোগ দেন মেসি।
ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগ মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ডে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পাশে বসেছেন মেসি। দুজনেরই গোল সংখ্যা ৪৯৫টি করে।
গত বছর কাতার বিশ্বকাপে ৩৬ বছরের অপেক্ষা ফুরায় আর্জেন্টিনার। প্রথমবারের মতো মেসির হাতে ওঠে বিশ্বকাপ শিরোপা। এর পাশাপাশি টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার হিসেবে গোল্ডেন বল জিতে নেন মেসি। এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে পেয়েছেন ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের স্বীকৃতি।
ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হারিয়ে আর্জেন্টিনার মেসির হাতে বিশ্বকাপ। রেকর্ড আর প্রাপ্তির খাতায় নতুন অধ্যায় যুক্ত করেই চলেছেন লিওনেল মেসি।