আমরা পরীক্ষা দিতে চাই— এসএসসিতে বসতে না পেরে ৯ ছাত্রীর আকুতি

প্ল্যাকার্ড হাতে ছাত্রীরা
প্ল্যাকার্ড হাতে ছাত্রীরা  © সংগৃহীত

‘আমরা পরীক্ষা দিতে চাই’, ‘আমাদের অপরাধ কি’ এমন সব প্ল্যাকার্ড হাতে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় বসার আকুতি জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বিএসএফ (বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা) মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৯ ছাত্রী। সোমবার (১৩ জুন) শহরের চাষাঢ়ায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে এসএসসি পরীক্ষায় বসা ও প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানববন্ধন করেছে ওই ৯ ছাত্রীসহ মোট ১১ জন শিক্ষার্থী।

তারা জানায়, এবার এসএসসি পরীক্ষায় বসতে তারা নিয়মিত বিদ্যালয়ে গিয়েছেন, স্কুলের শিক্ষকদের পরামর্শে পড়েছেন প্রাইভেট, পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন ফিও নেওয়া হয়েছে, অংশগ্রহণে নেওয়া হয়েছে মডেল টেস্ট। অথচ, পরীক্ষার মাত্র ২ সপ্তাহ আগে জানতে পারলেন কারও রেজিস্ট্রেশনই করতে পারেনি। ফলে আসন্ন ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে পারছে না ওই ছাত্রীরা।

এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন না করিয়ে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক মো. খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে। তাই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন নয় ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকেরা। ওই সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন শিক্ষার্থীরা। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মেহেরুন বলেন, স্কুলটিতে বিগত ১০ বছর যাবৎ লেখাপড়া করছি। আমরা ২০১৯ সালের অষ্টম শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হই।

আরও পড়ুন: কুবিতে একাত্তর টিভির গাড়ি ভাঙচুর।

ছাত্রীরা জানান, ২০২০ সালে আমরা যখন নবম শ্রেণিতে উর্ত্তীণ হয়েছি। তখন আমরা ১৫০০ টাকা করে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য প্রধান শিক্ষককে টাকা দেই। ২০২১ সালে আবারও ৩৫০০ টাকা করে নিয়েছে দশম শ্রেনিতে ভর্তি হওয়ার টাকা। কিন্তু ২০২০ সালে রেজিস্ট্রেশনের টাকা নিলেও তখন তিনি রেজিস্ট্রেশন করেনি। তিনি তার স্কুল সরকারিকরণ করার জন্য আমাদের নবম শ্রেণিতে রেখে অনেক শিক্ষার্থী দেখাতে এটা করেছে।

ছাত্রীরা আরো জানান, আমাদের বলেছিল নবম শ্রেণিতে থাকার জন্য। কিন্তু আমরা এতে রাজি হইনি। আমরা দশম শ্রেণিত উঠে এসএসসি পরীক্ষা দিবো সেটা বলেছিলাম। কিন্তু স্যার ইচ্ছাকৃত ভাবে আমাদের তখন রেজিস্ট্রেশন করেনি। বরং ২০২৩ সালে পরীক্ষার জন্য নাকি রেজিস্ট্রেশন করেছে। এই দুই বছরে আমাদের কাছ থেকে অনেক টাকা আত্মসাৎ করেছে। আমরা যখন এসএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপেরর জন্য বলি তখনই তিনি আজ না কাল বলে এভাবে ঘুরাতে থাকে। হঠাৎ একদিন ডেকে বলে তোমাদের রেজিস্ট্রেশন হয়নি তোমার পরীক্ষা দিতে পারবে না। কেন করেনি এমন প্রশ্নে তখন তিনি আর কোন সদউত্তর দিতে পারেনি।

স্কুল ছাত্রী কবিতা বলেন, আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। কখনো বেতন, টেস্ট পরীক্ষা, পরীক্ষা, রেজিস্ট্রেশন বিভিন্ন ভাবে দুই বছর টাকা নিয়েছে। এখন আমরা পরীক্ষা দিতে পারছি না। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে চাই।

স্কুল ছাত্রী সোনালী বলেন, আমরা ৯ জন ছাত্রী এই ২০২২ সালের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষা দিতে চাই। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের বিনীত আবেদন এই সমস্যা সমাধান করে আমাদের পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দিন।

তিনি বলেন, এখানে আমাদের কোন দোষ নাই। এখানে সব দোষ প্রধান শিক্ষকের। তিনি নিজের স্বার্থের জন্য টাকা আত্মসাৎ করে আমাদের রেজিস্ট্রেশন করেননি। আমরা শুধু পরীক্ষা দিতে চাই।’

অভিভাবক শিল্পি বেগম বলেন, আমাদের সন্তানের একটা বছর নষ্ট করে দিয়েছে এ শিক্ষক। তিনি ইচ্ছাকৃত ভাবে রেজিস্ট্রেশন করেননি। একই সঙ্গে আমরা বোর্ডে গিয়ে যোগাযোগ করেছি যাতে রেজিস্ট্রেশন করে পরীক্ষা দিতে পারে। কিন্তু সেখানেও এই ছাত্রীদের নামে মিথ্যা তথ্য দিয়ে এসেছে। যে তারা পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে। আমরা এর শাস্তি চাই।

তিনি বলেন, আমাদের সন্তানদের এই একটা বছর নষ্ট করবেন না। তাদের পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। আর শিক্ষকের কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক।

অভিভাবক জামিয়া আক্তার বলেন, আমরা ডিসি অফিসে গিয়ে মৌখিক ভাবে জানিয়েছি। তারা লিখিত দিতে বলেছে। আমরা আগামীকাল লিখিত অভিযোগ দিবো।

এ সময় স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. খলিলুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেও নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।


সর্বশেষ সংবাদ