ক্যাসিনো ব্যবসায় অভিযুক্ত উইলস লিটলের গভর্নিং বডির সভাপতি

  © টিডিসি ফটো

ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান টিটুর বিরুদ্ধে। অথচ দ্বিতীয় মেয়াদে এই ব্যক্তিকেই রাজধানীর খ্যাতনামা উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের (জিবি) সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটিতে পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন নব নির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, শিক্ষক এবং অভিভাকেরা। পাশাপাশি টিটুকে সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার দাবিও জানান তারা।

তারা জানান, প্রথম মেয়াদে টিটু প্রতিষ্ঠানটিতে কোটি কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা ধরনের দুর্নীতি করেছেন। সম্প্রতি ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত বলে তার নাম এসেছে। এমন ব্যক্তিকে অন্তত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি পদে বসানো সম্পূর্ণ নৈতিকতা বিরোধী।

স্কুল ও কলেজের পরিচালনা পর্ষদের কাঠামো অনুযায়ী ১১ সদস্য থাকে। এর মধ্যে অধ্যক্ষ পদাধিকারবলে সদস্য সচিব। স্থানীয় সংসদ সদস্যের অভিপ্রায়ে একজন সভাপতি মনোনয়ন দেয় বোর্ড। বাকি ৯ সদস্যের মধ্যে দাতা সদস্য, শিক্ষক প্রতিনিধি এবং অভিভাবক প্রতিনিধি থাকেন। অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অভিযোগ করে জানিয়েছেন, গত ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে সভাপতি টিটু এবং প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আবুল হোসেন নানা কূটকৌশলের মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার করে নিজেদের পছন্দমত লোকদেরকে পরিচালনা পর্ষদের বিভিন্ন পদে বসিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করে জিবি’র ১১ জন সদস্যের মধ্যে অন্তত ৯ জনই তাদের ঘনিষ্ঠ এবং বেশির ভাগই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছেন। যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তাদেরকে নানান হুমকি-ধমকিও দেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক ও প্রতিনিধি বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা টিটু প্রতিষ্ঠানটিতে গত দুই বছর আগে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ইচ্ছামত দুর্নীতি করেছেন। গত দুই বছর ধরে তিনি একচ্ছত্র রাজত্ব কায়েম করে রাখছেন। কোটি কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন তিনি। কোনো শিক্ষক তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা তার অন্যায় অনিয়মের প্রতিবাদ করলেই ওই শিক্ষককে বরখাস্ত এবং শোকজ দেন। স্কুলে শিক্ষক সঙ্কট না থাকলেও ৩০ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। যাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫-১০ লাাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। টিটু স্কুলে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসেন এবং স্কুলের যাবতীয় সিদ্ধান্ত তিনি নিজেই নেন। শুধু তাই নয়, সভাপতি তার সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও স্কুলে বসেই করেন।’

তারা আরও জানান, ‘সম্প্রতি সভাপতি টিটু ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। এছাড়া এই প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে তার কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি তদন্তও হয়েছে। কিন্তু কোনো এক রহস্যজনক কারণে সেই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে না। ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত একজন ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি নির্বাচিত করা প্রতিষ্টানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা। তাছাড়া স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসমাজ দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে সভাপতি পদে দেখতে চায়না। তাই টিটুকে এ পদ থেকে সরিয়ে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তারা দাবি জানান।

নীতিমালা অনুযায়ী স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সাংসদ রাশেদ খান মেনন শিক্ষাবোর্ডে আরিফুর রহমান টিটুসহ তিনজন সভাপতি প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করেন। এতেই আরিফুর রহমান টিটু প্রতিষ্ঠানের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।

দুর্নীতিগ্রস্ত ও ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিতে কিভাবে সভাপতি পদের জন্য নাম প্রস্তাব করেন জানতে রাশেদ খান মেননের কাছে ফোন করা হলে তিনি প্রশ্নটি শোনেন। এরপর ‘আমি একটি প্রোগ্রামে ব্যস্ত আছি’ জানিয়েই তিনি ফোন রেখে দেন।
এদিকে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও ঢাকা দক্ষিন সিটি করপোরেশনের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক আরিফুর রহমান টিটু এবং প্রতিষ্টানের অধ্যক্ষ আবুল হোসেনের মোবাইল ফোনে গতকাল বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েকবার ফোন করা হলে তারা রিসিভ করেন নি।

অন্যদিকে আরিফুর রহমান টিটুর দুর্নীতির অভিযোগটি তদন্তকারী কর্মকর্তা মাউশির উপ-পরিচালক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের সভাপতি, কয়েকজন সদস্য এবং অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নিয়োগ, কেনাকাটায় অস্বচ্ছতাসহ বেশকিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমরা সূক্ষ্মভাবে তদন্ত করছি। তদন্তে যা যা পেয়েছি তার সব বিষয় প্রতিবেদনে থাকবে। কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা প্রতিবেদন দাখিল করব।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence