৩২ শতাংশ স্কুলশিক্ষকের প্রশিক্ষণ নেই

ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক
ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক  © ফাইল ছবি

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিক্ষক হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো পাঠদানের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা। শিক্ষক হতে হলে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। তবে দেশের সরকারি-বেসরকারি স্কুলের ৩২ শতাংশের বেশি শিক্ষক প্রশিক্ষণ ছাড়াই পাঠদান করছেন। এতে করে শিক্ষার্থীরা পর্যাপ্ত জ্ঞান আহরণ করতে পারছেন না। 

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি-বেসরকারি স্কুলে মোট শিক্ষক রয়েছেন দুই লাখ ৬৬ হাজার ৫৬৮ জন। এই শিক্ষকদের মধ্যে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এক লাখ ৭৯ হাজার ৯৭৯ জন। কোনো রকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই পাঠদান করছেন ৮৬ হাজার ৫৮৯ জন। সে হিসাবে দেশের নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক এবং স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল পর্যায়ের বিদ্যালয়ে পাঠদানে নিয়োজিত ৩২ দশমিক ৪৮ শতাংশ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ নেই। 

প্রশিক্ষণ গ্রহণের ক্ষেত্রে নারী শিক্ষকদের তুলনায় এগিয়ে রয়েছেন পুরুষ শিক্ষকরা। ব্যানবেইসের প্রতিবেদন বলছে, স্কুল পর্যায়ে পুরুষ শিক্ষক রয়েছেন এক লাখ ৮৯ হাজার ৭৩৬ জন। এদের মধ্যে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন  এক লাখ ২৮ হাজার ৭৭২ জন। শতকরা হিসেবে যা ৬৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ। অন্যদিনে নারী শিক্ষকের সংখ্যা  ৭৬ হাজার ৮৩২ জন। এদের মধ্যে ৫১ হাজার ২০৮ জন অর্থাৎ ৬৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, একজন শিক্ষকের দক্ষতার ওপর নির্ভর করে শ্রেণিকক্ষে আকর্ষণীয় পাঠদান ও মানসম্পন্ন শিক্ষাদান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশের পর শিক্ষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে হয় তবে আমাদের দেশে সেটি হয় না। সরকার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলেও অনেক শিক্ষকের প্রশিক্ষণে অনীহা রয়েছে। এছাড়া আমাদের দেশের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এত বিপুল পরিমাণ শিক্ষককে সামনাসামনি প্রশিক্ষণ দেওয়া কঠিন। প্রশিক্ষণের জন্য শিক্ষকদের তাদের কর্মস্থল বা নিবাস ত্যাগ করতে হয়। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিক আহসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মূলত তিনটি কারণে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের সংখ্যা অনেক কম। এর মধ্যে একটি হলো আমাদের সামনাসামনি প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া। এলাকার বাইরে সশরীরে প্রশিক্ষণের কারণে শিক্ষকরা তাদের প্রতিদিনের ক্লাস ঠিকমতো নিতে পারেন না। তার নিত্য প্রয়োজনীয় কাজগুলো সে করতে পারে না। এছাড়া যে ব্যবস্থাপনায় আমরা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি সেটি তার স্কুলের সাথে মেলেনা। এজন্য শিক্ষকদের বড় একটি অংশ প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহ দেখায় না। দ্বিতীয়ত আমাদের এখানে শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশের পূর্বে প্রশিক্ষণের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। অন্যান্য দেশে টিচিং প্রফেশনে প্রবেশের পূর্বে প্রশিক্ষণ নিতে হয়। তাই শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশের পূর্বে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কোর্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আধুনিক দেশগুলো স্কুলে থাকা অবস্থাতেই শিক্ষকদের অফলাইন এবং অনলাইনে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করছে। তবে আমরা এখনো সরাসরি বা সশরীর মডিউলে পরিচালনা করছি। আমাদের দেশে শিক্ষকের সংখ্যা অনেক বেশি। বিপুল পরিমাণ শিক্ষককে সশরীরে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা অনেক কঠিন। তাই আমাদের অনলাইনে এবং প্রতিষ্ঠানে থাকাকালীন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলেই প্রশিক্ষিত শিক্ষকের সংখ্যা বাড়বে। 

প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তুলনায় সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা এগিয়ে রয়েছেন। ব্যানবেইসের প্রতিবেদন বলছে, দেশের বেসরকারি পর্যায়ের স্কুলগুলোতে মোট শিক্ষক রয়েছেন ২ লাখ ৫৪ হাজার ৯৫৩ জন।এদের মধ্যে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এক লাখ ৬৯ হাজার ৩৯১ জন। শতকরায় যা ৬৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। আর সরকারি স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা  ১১ হাজার ৬১৫ জন। প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ১০ হাজার ৫৮৮ জন। শতকরায় যা ৯১ দশমিক ১৬ শতাংশ। 

প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের এগিয়ে থাকার কারণ হিসেবে ঢাবি অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিক আহসান বলেন, সরকারি-বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ গ্রহণের যে পার্থক্য সেটি মূলত ইনক্রিমেন্টের কারণে। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলে সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধি পায়। তবে বেসরকারি স্কুলে সেই সুযোগ নেই। এটিও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মধ্যে বিস্তর ফারাক তৈরি করে দিচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ