‘ব্ল্যাকবক্স’ কীভাবে কাজ করে, বিমানে কোথায় থাকে?

ব্ল্যাকবক্স
ব্ল্যাকবক্স  © সংগৃহীত

ভারতের আহমেদাবাদ থেকে উড্ডয়ন করা মাত্রই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হয় এয়ার ইন্ডিয়ার একটি যাত্রীবাহী বিমান। স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৩৯ মিনিটে আকাশে ওঠার এক মিনিটের মধ্যেই ৬২৫ ফুট উচ্চতা থেকে শহরের মেঘানিনগরের চিকিৎসকদের একটি হোস্টেলের উপর ভেঙে পড়ে সেটি। এতে প্রাণ হারান ২৬৫ জন, আহত অন্তত ৬০।

এই ভয়াবহ ঘটনার পরপরই শুরু হয়েছে তদন্ত। কী কারণে বিমানটি ভেঙে পড়ল, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এর প্রকৃত উত্তর লুকিয়ে আছে ব্ল্যাকবক্সে। তদন্তকারী সংস্থা এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি) জানায়, বিমানটির ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করা হয়েছে এবং এর বিশ্লেষণের মাধ্যমেই দুর্ঘটনার আসল কারণ উদঘাটনের চেষ্টা চলবে।

ব্ল্যাকবক্স আসলে কী?

● উৎপত্তি

১৯৫৩ সালে অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানী ডেভিড ওয়ারেন সর্বপ্রথম ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (CVR)-এর ধারণা দেন। তিনি বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক জেট বিমান ‘কমেট’-এর এক দুর্ঘটনার তদন্তে অংশ নিয়ে বুঝেছিলেন, পাইলটদের কণ্ঠস্বর রেকর্ডিং থাকলে দুর্ঘটনার কারণ নির্ণয় সহজ হবে। ১৯৫৬ সালে তিনি প্রথম প্রোটোটাইপ তৈরি করেন। তবে এই প্রযুক্তি বাণিজ্যিকভাবে গ্রহণ করতে সময় লেগে যায় আরও কয়েক বছর।

● দেখতে কেমন?

‘ব্ল্যাকবক্স’ নাম হলেও এটি উজ্জ্বল কমলা রঙের হয়ে থাকে। দুর্ঘটনার পর দ্রুত শনাক্তের সুবিধার জন্যই এই রঙ বেছে নেওয়া হয়।

● কী দিয়ে তৈরি?

এটি অত্যন্ত টেকসই ধাতু—টাইটানিয়াম ও স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে তৈরি। ফলে আগুন, আঘাত বা গভীর সমুদ্রের চাপে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে এটি দীর্ঘদিন কার্যকর থাকতে পারে।

● কী কাজ করে?

ব্ল্যাকবক্স মূলত দুইটি অংশে বিভক্ত—

CVR (Cockpit Voice Recorder): শেষ দুই ঘণ্টার ককপিটের সব শব্দ, কথোপকথন এবং এলার্ম রেকর্ড করে।
FDR (Flight Data Recorder): বিমানের অন্তত ২৫ ঘণ্টার ফ্লাইট সম্পর্কিত তথ্য— যেমন উচ্চতা, গতি, ইঞ্জিন পারফরম্যান্স ইত্যাদি সংরক্ষণ করে।

এই দুটি যন্ত্র মিলেই তদন্তকারীদের দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ শনাক্ত করতে সহায়তা করে। বিশেষত, ইঞ্জিনের নয়েজ, পাইলট ও এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের কথোপকথন এবং যেকোনো যান্ত্রিক ত্রুটির সংকেত পাওয়া যায় এখান থেকে।

● কোথায় থাকে?

বিমানের লেজের দিকে, অর্থাৎ যেখানে দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা তুলনামূলক কম, সেখানেই ব্ল্যাকবক্স রাখা হয়।

ব্ল্যাকবক্সের রেকর্ডিং বিশ্লেষণের মাধ্যমে বোঝা যাবে, দুর্ঘটনার পেছনে পাইলটের ভুল, যান্ত্রিক ত্রুটি না কি প্রাকৃতিক দুর্যোগ—কোনটি দায়ী। ফলে এর তথ্যই হতে পারে পুরো ঘটনার তদন্তে সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি।


সর্বশেষ সংবাদ