মেডিকেল ভর্তিচ্ছু হুমায়রার অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি পরিদর্শক নাফিসার

ভর্তিচ্ছু হুমাইরা ইসলাম ছোঁয়া ও পরিদর্শক ডা. নাফিসা ইসলাম
ভর্তিচ্ছু হুমাইরা ইসলাম ছোঁয়া ও পরিদর্শক ডা. নাফিসা ইসলাম   © সংগৃহীত

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় নকল না করলেও হুমাইরা ইসলাম ছোঁয়া নামে এক ভর্তিচ্ছুর উত্তরপত্র ছেঁড়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত পরিদর্শক ডা. নাফিসা ইসলাম। তিনি বলেছেন, সেদিন তার দায়িত্বরত কক্ষে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অভিযোগ করা ভর্তিচ্ছুর চেহারাও তার মনে নেই বলে তিনি জানান।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। হুমাইরার পরিবারের দাবি, তিনি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শেখ কামাল ভবনের অষ্টম তলার ৮২৩ নম্বর কক্ষে। পরীক্ষা শুরুর প্রায় ৪০ মিনিট পর হুমাইরার পাশে বসা এক পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস জব্দ করা হয়। এ সময় হলের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা হুমাইরার উত্তরপত্রও কেড়ে নেন এবং ছিঁড়ে ফেলেন।

এ সময় দাবির মুখে যাচাই করে হুমাইরার উত্তরপত্র সঠিক ছিল বলে প্রমাণ হয়। পরে দুঃখ প্রকাশ করে তাকে নতুন একটি ওএমআর শিট দেওয়া হয়। তবে তখন সময় বাকি ছিল অল্প। এতে হুমাইরার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। কক্ষের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির ভুলের শিকার হন ওই ভর্তিচ্ছু।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনায় একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষৎকারে ডা. নাফিসা ইসলাম বলেন, ৮২৩ নম্বর কক্ষে কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমার জানা মতে সেখানে কিছুই হয়নি। সেখানে ১০৬ জন পরীক্ষার্থী ছিল। দুজন অনুপস্থিত ছিল। পরীক্ষা শেষে বাকিদের খাতা গণনা করে নেয়া হয়েছে।

‘‘পরীক্ষায় কোনো ডিভাইস পাওয়া বা এরকম কিছু হলে হল সুপার এ বিষয়ে সাধারণত নিয়ন্ত্রণ কক্ষকে জানান। কিন্তু আমার রুমে এরকম কোনো ডিভাইস পাওয়া তো দূরের কথা, এ রকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি। সুন্দর মতো পরীক্ষা হওয়ার পর আমরা বের হয়ে আসি।’’

তিনি বলেন, আমাকে যতটুকু দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, আমি সেটাই পালন করেছি। সবার চেহারা তো মনে রাখা সম্ভব না। কোনো কিছু ঘটলে মানুষ মনে রাখে। কিন্তু যেখানে কিছুই হয়নি, একজন শিক্ষর্থীও ভুল করেননি, ফলে ওএমআর শিটও পরিবর্তন করে দেয়া হয়নি। তাহলে কীভাবে মনে রাখবো? তার খাতায় আমার সাইন নেই; সাইন থাকারও কথা না। কারণ সেখানে আমরা দুজন নারী ছিলাম। আমার সাইডে অভিযোগকারীর রোলও পড়েনি।

সর্বশেষ গত ১১ ফেব্রুয়ারি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। সেদিন দুপুরে ওএমআর শিট ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ জানাতে অধিদপ্তরে ছুটে আসেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তার পরিবারের সদস্যরা। এরপর সেদিন প্রথম সামনে আসে এ ঘটনা।

পরে এ ঘটনা তদন্তে চার সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর। কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক কাজী আফজালুর রহমানকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে।

সদস্যসচিব করা হয়েছে অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানকে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের থোরাসিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আলম ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. কামাল হোসেন।

এরপর গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ঘটনার বিবরণ শুনতে ভুক্তভোগী দাবি করা মেডিকেল ভর্তিচ্ছু হুমায়রাকে ডেকেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটি। তাকে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণসহ যথাসময়ে অধ্যক্ষের কার্যালয়, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, শেরেবাংলা নগর ঢাকা-১২০৭ এ উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য জানানো হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ