পরীক্ষার্থী ১৯ জন, ১৮টি স্বাক্ষর— হলে নাম ধরে ডাকলাম, কাজল মন্ডল, নিঃশব্দ

শিক্ষক সাফায়েত ও ছাত্র কাজল
শিক্ষক সাফায়েত ও ছাত্র কাজল  © ফাইল ছবি

মেসে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) অর্থনীতি ডিসিপ্লিনের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কাজল মন্ডল। আজ রবিবার (৫ জুন) দুপুরে তার সমাপনী পরীক্ষা ছিল। কিন্তু পরীক্ষার হলে না গিয়ে মেসেই থেকে তিনি এই আত্মহননের পথ বেছে নেন। পরে  গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। 

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই হলরোডের এক মেসে। তার বাড়ি যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলায়।

তার সহপাঠীরা জানায়, আজকে বিভাগের পরীক্ষা থাকা সত্যেও পরীক্ষা দিতে যাননি কাজল। পরে তার সহপাঠীরা পরীক্ষা শেষে তার খোঁজ নিতে আসলে মেসে রুমের দরজা ভেতর থেকে লক করা পায়। বার বার নক করে কোনো আওয়াজ না মিললে দরজার ছিদ্র দিয়ে ঝুলন্ত লাশ দেখা যায়।

তাদের ধারণা, ব্যক্তিগত ও ক্যারিয়ার কেন্দ্রীক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হাতাশা থেকে সুইসাইড করতে পারেন কাজল। এ ঘটনার আগে কাজল তার ফেসবুক আইডির শেষ স্টোরিতে নিজের ছবি দিয়ে লিখেন ‘I wana to come again but with properly (আমি আবার আসতে চাই তবে সঠিকভাবে)।

এদিকে, পরীক্ষার হলে তার অনুপস্থিতিতে দায়িত্বরত শিক্ষকরা তার খোঁজ নিয়েছিলেন। তারা জানান, এদিন পরীক্ষার হলে কাজল মন্ডল ছাড়া বাকি শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। তার খোঁজ নিয়ে পরীক্ষা হলে ডাক দিয়েছিলেন দায়িত্বরত শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক সাফায়েত হোসেন। পরীক্ষা শেষে কাজলের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি বিষটি উল্লেখ করেন।

সাফায়েত হোসেন ফেসবুকে লেখেন, আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার ডিউটি ছিল। কর্তব্যরত রুমে অর্থনীতি ডিসিপ্লিনের ২য় ও ৩য় বর্ষের সমাপনী পরীক্ষা ছিল।সকাল ১০টা, পরীক্ষা শুরু। পরীক্ষা শুরুর একটু পরে পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্রে স্বাক্ষর করতে শুরু করি। পরীক্ষার্থীদের খাতায় স্বাক্ষর শেষ করলাম। তারপর  পরীক্ষার্থীদের স্বাক্ষর গণনা করে দেখলাম ১৮টি স্বাক্ষর অর্থাৎ উপস্হিত ১৮ জন । কিন্তু পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ অফিসের তথ্য অনুযায়ী অর্থনীতি ২য় বর্ষের পরীক্ষার্থী সংখ্যা ১৯ জন। যাচাই করে দেখলাম  শিক্ষার্থী কাজল মন্ডল এর নামের পাশে স্বাক্ষর এর অংশটুকু ফাঁকা রয়েছে। আমি নাম ধরে ডাকলাম, কাজল মন্ডল। নিঃশব্দ।  কিছুক্ষণ পর একজন পরীক্ষার্থী বলল, স্যার ও (কাজল) আজকে আসে নি । 

তিনি আরও লেখেন, আমি তার নামের পাশে Absent  এবং অনুপস্থিতি গণনার ঘরে তার স্টুডেন্ট আইডি লিখে স্বাক্ষর করে রেখে দিলাম। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ অফিস থেকে অর্থনীতি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক Khan Mehedi Hasan এবং সমাজ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের Tuhin Roy স্যার তদারকিতে আসলে কাজল মন্ডলের অনুপস্থিতির কথা জানালাম। যথারীতি পরীক্ষা শেষ হল। উত্তরপত্র জমা নিয়ে অফিসে জমা করলাম। তখন বাজে প্রায় ১:২০ মিনিট হঠাৎ শুনলাম ক্যাম্পাসের একটা ছেলে একটু আগে সুইসাইড করেছে (১:১০)। তখন খুব হতাশ হলাম। সহকর্মীরা মিলে বলা শুরু করলাম চারিদিকে কি শুরু হল। ডিপ্রেশন, আত্মহত্যাই কি সমাধান ইত্যাদি।  কিন্তু একটু পরে জানতে পারলাম যে ছেলেটা সুইসাইড করেছে তার নাম কাজল মন্ডল, অর্থনীতি ২য় বর্ষের ছাত্র। শুনে ভেতরটা জানি কেমন করে উঠল আমার। অসীম নিস্তব্ধতায় ডুবে গেলাম আমি। স্বপ্নরা যেন আর লাশ না হয়!


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence