মোহসীনিয়া মাদ্রাসা যেভাবে হলো কবি নজরুল কলেজ

হাজী মুহাম্মদ মহসিনের জন্মদিনে কলেজে নেই কোন আয়োজন

কবি নজরুল সরকারি কলেজ
কবি নজরুল সরকারি কলেজ  © ফাইল ছবি

ভারতীয় উপমহাদেশের দানবীর হিসেবে খ্যাত হাজী মুহাম্মদ মহসিনের মোহসীনিয়া ফান্ডের আর্থিক সহায়তায় ১৮৭৪ সালে রাজধানীর পুরান ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় মোহসীনিয়া মাদ্রাসা (ঢাকা মাদ্রাসা)। যা আজকের সরকারি কবি নজরুল সরকারি কলেজ। ১৪৭ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে পড়ালেখা করছেন ১১ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী।

অথচ হাজী মুহাম্মদ মহসিনের জন্মদিনে এই কলেজে নেই কোনও আয়োজন। ১৭৩২ সালের আজকের এইদিনে (৩ জানুয়ারি) ভারতের হুগলীতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

এ বিষয়ে কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক এবিএসএ সাদী মোহাম্মদ বলেন, আমাদের কলেজ মোহসীনিয়া ফান্ডের টাকায় প্রতিষ্ঠিত। আমাদের একটা আয়োজন করা উচিত ছিল। কিন্তু বিষয়টা আয়োজকদের কারও মনে ছিল না।

তিনি আরও বলেন, কলেজের শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিকদেরও একটা দায়িত্ব আছে। এসকল বিষয় তাদেরও আমাদের মনে করিয়ে দেয়া উচিত।

কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আতিক হাসান শুভ বলেন, আমাদের কলেজ মোহসীনিয়া ফান্ডের টাকায় প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু দুঃখের বিষয় পুরো ক্যাম্পাসে হাজী মুহাম্মদ মহসিনের কোনো স্মৃতি চিহ্ন নেই। তার জন্মদিনেও কলেজে নেই কোনো আয়োজন।

মোহসীনিয়া মাদ্রাসা যেভাবে হলো কবি নজরুল কলেজ
কবি নজরুল সরকারি কলেজ একসময় ছিল একটি মাদ্রাসা। একটি পরিপূর্ণ মাদ্রাসা কালের পরিক্রমায় কিভাবে তার ধর্মীয় পরিচয় সম্পূর্ণ হারিয়ে সাধারণ শিক্ষার একটি কলেজে পরিণত হতে পারে তার সাক্ষ্য বহন করছে প্রতিষ্ঠানটি। শুধু ধর্মীয় পরিচয়ই নয়, মুছে গেছে প্রতিষ্ঠানটির আসল নামও।

দানবীর হিসেবে খ্যাত হাজী মুহম্মদ মুহসীনের রেখে যাওয়া অর্থে ১৮৭৪ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয় মোহসীনিয়া মাদ্রাসা। খুব অল্প সময়ে চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে এ মাদ্রাসার খ্যাতি। ১৭৮০ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত আলিয়া মাদ্রাসার সাথে তুলনা করা হতো এই মাদ্রাসাকে। সে কারণে মাদ্রাসাটি পরিচিতি পায় ঢাকা মাদ্রাসা নামে এবং এ নামেই বেশি প্রসিদ্ধি লাভ করে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে পরবর্তীকালে মাদ্রাসাটি দুর্ভাগ্যের শিকার হয়। ১৯১৫ সাল পর্যন্ত মাদ্রাসাটি হাজী মুহম্মদ মুহসীনের রেখে যাওয়া অর্থে পরিচালিত হতো।

অনেকের মতে, ১৯১৪-১৫ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার নিউ স্কিম মাদ্রাসা চালু করার কারণে এ মাদ্রাসাসহ আরো অনেক মাদ্রাসা শেষ পর্যন্ত বিলুপ্ত হয়ে যায়। বিভিন্ন ধরনের সংস্কারের কারণে এসব মাদ্রাসা তাদের ধর্মীয় চরিত্র অনেকটা হারিয়ে ফেলে। ফলে মুখ ফিরিয়ে নেয় ধর্মীয় শিক্ষায় আগ্রহী ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ। নিউ স্কিম মাদ্রাসা চালুর পর মোহসীনিয়া বা ঢাকা মাদ্রাসাটিকে এর আওতায় নেয়া হয় এবং ১৯১৫ সালে এর নাম রাখা হয় ঢাকা হাই মাদ্রাসা।

বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, পরের বছর ১৯১৬ সালে মাদ্রাসার অ্যাংলো-পার্সিয়ান বিভাগ আলাদা করে প্রতিষ্ঠা করা হয় গভর্নমেন্ট মুসলিম হাইস্কুল। এরপর ১৯২৩ সালে মোহসীনিয়া মাদ্রাসাকে রূপান্তর করা হয় ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে।

এভাবে মাত্র ৪৯ বছরের মাথায় মোহসীনিয়া মাদ্রাসাটি হয়ে গেল একটি কলেজ। ১৯৬৮ সালে এর নতুন নামকরণ করা হয় সরকারি ইসলামিয়া কলেজ। ১৯৭২ সালে আবার প্রতিষ্ঠানটির নতুন নামকরণ করা হয় কবি নজরুল সরকারি কলেজ। একটি প্রতিষ্ঠান কী উদ্দেশে চালু হয়েছিল এবং কিভাবে তার আসল নাম পরিচয় মুছে যেতে পারে তার সাক্ষী হিসেবেই যেন আজো ভিন্ন নামে দাঁড়িয়ে আছে প্রতিষ্ঠানটি।

১৯২৩ সালে মোহসীনিয়া মাদ্রাসা বিলুপ্ত করে সেখানে কলেজ শিক্ষা চালু করলেও ১৯৪৭ সালে এখানে আবার মাদ্রাসা শিক্ষা চালু হয়। তবে তা মোহসীনিয়া মাদ্রাসা পুনরায় চালুর মাধ্যমে নয়।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসা ঢাকায় স্থানান্তর করা হয় ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা নামে। আজকের ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার কার্যক্রম চালু করা হয় মোহসীনিয়া মাদ্রাসার ভবনে। দীর্ঘ দিন এখানে থাকার পর ১৯৬১ সালে বর্তমান বকশিবাজার ভবনে স্থানান্তর করা হয় ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার কার্যক্রম।


সর্বশেষ সংবাদ