গুচ্ছ ভর্তির ধীরগতি নিয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা  © সংগৃহীত

প্রথমবারের মতো সরকারি ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। শুরুর দিকে এই আয়োজন সর্ব মহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ালেও ভর্তি পরীক্ষার ধীর গতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তবে গুচ্ছ কমিটি জানিয়েছে, খুব শীঘ্রই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে।

গত ১৭ অক্টোবর বিজ্ঞান বিভাগের 'এ' ইউনিটে, ২৪ অক্টোবর মানবিক বিভাগের 'বি' ইউনিটে এবং ১ নভেম্বর বাণিজ্য বিভাগের 'সি' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০ অক্টোবর এ ইউনিটের ফল প্রকাশ হয়। ২৬ অক্টোবর বি ইউনিটের ও ৩ নভেম্বর সি ইউনিটের ফল প্রকাশ হয়। ফল প্রকাশের পর দুই মাসের বেশি সময় গেলেও অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় এখনো মেধা তালিকা প্রকাশ করতে পারে নি।  

আরও পড়ুন- গুচ্ছ ভর্তি আবেদন ফি দ্বিগুণ, ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ভর্তিচ্ছুদের

গুচ্ছ কমিটি জানায়, কয়েক ধাপে গুচ্ছের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে। ভর্তি পরীক্ষার পর প্রতিটি ইউনিটের পরীক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম প্রস্তুত করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। গুচ্ছভুক্ত প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে ভর্তি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিজেদের শর্ত উল্লেখসহ দরখাস্ত আহ্বান করবে। ইউনিটভিত্তিক মেধাক্রম অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ ব্যবস্থাপনায় ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে।

তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য মেধাতালিকা প্রকাশ করেছে। ধাপে ধাপে চলছে ভর্তি প্রক্রিয়াও। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দীর্ঘসময় নিয়ে আলাদা আলাদা ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয়ায় ভর্তির দিন-তারিখও আলাদা হচ্ছে। এতে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ভর্তিচ্ছুরা। আবার অনেকেই অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাতালিকায় আসলেও পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন নিয়ে সেখানে ভর্তি হচ্ছে না। এতে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও বিপাকে পড়ছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে মাত্র ৩২০ জন শিক্ষার্থী। মেধা তালিকায় আসার পরও অনেকেই সেখানে ভর্তি হন নি। ফলে ক্যাম্পাসটিতে ১১২০টি আসন খালি আছে।

সূত্র জানায়, ঢাকা, বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, কৃষি গুচ্ছ, প্রকৌশল গুচ্ছে ভর্তি পুরোপুরি শেষ হয় নি। প্রথমে ভর্তি করিয়ে আসন শূণ্যতায় যাতে বিশ্ববিদ্যলয়গুলো না পড়ে সেজন্য সময় নিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করছে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

মেধাতালিকায় ভালো স্কোর পেয়েও এখনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হননি বাকী বিল্লাহ। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন তার। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এখনো মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়নি।

আরও পড়ুন- গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের দাবি ভর্তিচ্ছুদের

বাড়ির পাশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ নিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হননি তাবাসসুম সুরাইয়া। তার মা রাজিয়া আক্তার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, তাবাসসুমের বাবা প্রবাসী। করোনার প্রভাবে ব্যবসায় ক্ষতি হয়েছে। আর্থিক সঙ্কট রয়েছে। আবার মেয়েকে একা ঢাকায় পাঠাবেন না বলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করান নি। ভালো স্কোর থাকায় ভরসা করে আছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন। কিন্তু সেখানে এখনো মেধাতালিকাই প্রকাশ করেন নি। এনিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।  

জানা যায়, গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি কার্যক্রমের সময়সূচি একেকরকম হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন কিংবা ভর্তি বাতিল করতে ফের বাড়তি অর্থ গুণতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়বে তুলনামূলক কম নম্বর প্রাপ্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন- ঢাবির হল থেকে বহিষ্কার হলেন সেই ছাত্রলীগ কর্মী সিফাত উল্লাহ

ভর্তিচ্ছু রবিন আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে মাইগ্রেশন চরম বিপাকে ফেলবে তুলনামূলক কম নম্বর প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের৷ রবিন বলেন, ধরুন কেউ যদি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েও ভর্তি না হয় অর্থাৎ ওই ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী যদি মনে করেন আরো ভালো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হতে পারে এবং পরে দেখা গেল, তার ধারণা ভুল অর্থাৎ তার আর কোথাও ভর্তির সুযোগ হয়নি। এক্ষেত্রে ওই শিক্ষার্থী কোথায় যাবে? এদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময়তো ততদিনে শেষ হয়ে যাবে। বিপরীতে, কেউ যদি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে ভর্তি হয় এবং পরবর্তীতে দেখা গেল, সে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো ভালো বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। সেক্ষেত্রে তাকে পূর্বে ভর্তি হয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বাতিল করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে মোটা অংকের অর্থ বহন করতে হবে৷ যা মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য অনেকটাই দুঃসহ। গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি অনুরোধ সব বিশ্ববিদ্যালয় যেন এক সাথে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করে।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির আহবায়ক ও ব্যবসা প্রশাসন অনুষদের ডিন ড. সেলিম হোসেন বলেন, ফলাফল সংক্রান্ত কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় মেধা তালিকা প্রকাশে একটু দেরি হচ্ছে। কাজ চলছে। খুব শীঘ্রই ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

সার্বিক বিষয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং গুচ্ছভূক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামী ১ ও ২ তারিখের মধ্যেই অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, বুয়েটসহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যলয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া পুরোপুরি শেষ হয়নি।  কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি এখন ভর্তি করায় পরে দেখা যাবে ওই শিক্ষার্থী বুয়েটেও চান্স পেয়েছে তখন সে বুয়েটেই ভর্তি হবে। আবার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আসনটাও খালি হয়ে যাবে। যাতে প্রত্যেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে সেজন্য সময় নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।


সর্বশেষ সংবাদ