গুচ্ছ পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা ভর্তি নিয়ে দোটানায়

গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা
গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা  © প্রতীকী ছবি

প্রথমবারের মতো সরকারি ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি কমাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেটি এখন বিষাদে পরিণত হয়েছে।

শুরুর দিকে এই আয়োজন সর্ব মহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ালেও ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি বৃদ্ধি, পরীক্ষা কেন্দ্র নির্বাচন, পরীক্ষার ফলে ভুল, ভর্তি পরীক্ষার মেরিট পজিশন না দেয়া এবং বিষয় পছন্দের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফি দিয়ে আবেদন প্রভৃতি এই আয়োজনের সফলতা ঢাকা পড়েছে।

পরীক্ষায় মেধাতালিকা না দিয়ে ফলাফলে শুধু প্রাপ্ত নম্বর প্রকাশ করায় চরম অনিশ্চয়তা ও ভোগান্তিতে পড়েছেন ভর্তিচ্ছুরা।

তথ্যমতে, এবার ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ফলে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আলাদা আলাদা ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয়ায় ভর্তির দিন-তারিখও আলাদা হচ্ছে। এতে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ভর্তিচ্ছুরা।

আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আশা-নিরাশার দোলাচলে কম নম্বরপ্রাপ্তরা

গত ৭ ডিসেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশ হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর থেকে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়ে চলবে আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের ১২ হাজার ৪০০ টাকা আর অন্যান্য অনুষদের ১০ হাজার ৪০০ টাকা ফি দিয়ে ভর্তি হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশ হয়েছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) শনিবার (১১ ডিসেম্বর) প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশ হয়েছে। ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে আগামী মাসের শুরু দিকে।

জবির বিজ্ঞান অনুষদের একটি বিভাগে ভর্তি হওয়া জানে আলম (ছদ্মনাম) এক শিক্ষার্থী জানান, ১২ হাজার ৪০০ টাকা ফি দিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর শাবিপ্রবির মেধাতালিকায় এসেছি। জবিতে যে বিভাগে ভর্তি হয়েছি সেটার চেয়ে শাবিপ্রবির বিভাগটি তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো। এখন জবিতে ভর্তি বাতিল করে শাবিপ্রবিতে ভর্তি হতে গেলে সমপরিমান টাকা দরকার হবে। এসব অতিরিক্ত টাকা ম্যানেজ করা সম্ভব নয়। শুরু এই ভর্তিচ্ছু নয়, গুচ্ছের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অনেকেই এমন দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

আরও পড়ুন: গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় কার লাভ হলো

জানা যায়, সাধারণভাবেই পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি ভালো বিষয় নিয়ে পড়ার আগ্রহ থাকে অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের। তবে এবার গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ভর্তি কার্যক্রমের সময়সূচি একেকরকম হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন কিংবা ভর্তি বাতিল করতে ফের বাড়তি অর্থ গুণতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়বে তুলনামূলক কম নম্বর প্রাপ্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা।

এ প্রসঙ্গে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী রবিন বলেন,বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে মাইগ্রেশন চরম বিপাকে ফেলবে তুলনামূলক কম নম্বর প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের৷ রবিন বলেন, ধরুন কেউ যদি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েও ভর্তি না হয় অর্থাৎ ওই ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী যদি মনে করেন আরো ভালো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হতে পারে এবং পরে দেখা গেল, তার ধারণা ভুল অর্থাৎ তার আর কোথাও ভর্তির সুযোগ হয়নি, এক্ষেত্রে ওই শিক্ষার্থী কোথায় যাবে? এদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময়তো ততদিনে শেষ হয়ে যাবে। বিপরীতে, কেউ যদি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে ভর্তি হয় এবং পরবর্তীতে দেখা গেল,সে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো ভালো বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। সেক্ষেত্রে তাকে পূর্বে ভর্তি হয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বাতিল করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে মোটা অংকের অর্থ বহন করতে হবে৷ যা মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য অনেকটাই দুঃসহ। গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি অনুরোধ সব বিশ্ববিদ্যালয় যেন এক সাথে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করে।

আরও পড়ুন: স্বস্তির গুচ্ছ পরীক্ষায় ভোগান্তি বাড়ল কয়েকগুণ

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম থেকে তানজিদ এহেসান রিয়াদ বলেন, মাইগ্রেশন হলে ঠিক আছে, কিন্তু এক জায়গায় ভর্তি হলে আরেক জায়গায় যাওয়ার জন্য পূর্বোক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বাতিল করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য নতুন করে ফের টাকা দিতে গেলে সেক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ব্যপক ক্ষতি হবে। তাছাড়া ভর্তির তারিখ আগ-পিছ হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ভর্তির তারিখ নিয়েও দ্বিধায় পতিত হবে, অনেকক্ষেত্রে দেখা যাবে তারা তারিখ নিয়ে সংশয়ের কারণে আবেদন ও করতে পারবে না। অন্তত মাইগ্রেশনের ক্ষেত্রে ভর্তি কমিটির একটু সদয় হওয়া উচিত।

এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ থেকে আশিক আহমেদ (ছদ্মনাম) বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার প্রাথমিক আবেদন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যে যে ধাপগুলো অতিক্রম হচ্ছে প্রায় প্রতিটি ধাপই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। সবশেষ ভর্তি কার্যক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো নিজেদের মতো করে পৃথক পৃথক তারিখ দিয়ে আবেদনের সময়সীমা নির্ধারণ করে দিচ্ছে। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক ভর্তির ক্ষেত্রে মেধাতালিকা,অপেক্ষমান তালিকাও আলাদা আলাদা সময়ে দেওয়া হবে। একজন শিক্ষার্থী একের অধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হতেই পারে। তবে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে এই নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি জানা যাবে। এখন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমেই ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে অপেক্ষমান তালিকা থেকে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে, সেটা এখন বোঝা মুশকিল। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেন হাতছাড়া না হয়, সেজন্য প্রথমে আবেদন করে রাখা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচিত হবে সেখানেই একজন শিক্ষার্থী ভর্তি হবে। পরবর্তীতে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেও আর্থিক সমস্যার কারণে ভর্তি হয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাতিল করে অন্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে না অধিকাংশ শিক্ষার্থী। যা শিক্ষার্থীদের জন্য চরম দুঃখজনক।

আরেক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী মুহাম্মদ আফিফ মুস্তাকিম বলেন, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় শুরু থেকেই নানা অনিয়মের কারণে আমরা শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এখনো বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি আবেদনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি, অন্যদিকে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন প্রক্রিয়াও ইতিমধ্যে শেষ। কিন্তু কখন ফলাফল প্রকাশ, ভর্তিপ্রক্রিয়া, মাইগ্রেশন ইত্যাদি শুরু হবে তা সুনির্দিষ্ট করে কোথাও উল্লেখ নেই। এতে করে আমরা শিক্ষার্থীরা এক প্রকার অনিশ্চিয়তায় ভুগছি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি কার্যক্রমের দিন-তারিখ একেক সময় হওয়ায় মাইগ্রেশন প্রক্রিয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

তার মতে, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়েও যদি আমাদের এত ভোগান্তি পোহাতে হয় তাহলে আর এ পরীক্ষার মাহাত্ম্য কোথায়? যেহেতু ভর্তি প্রক্রিয়ার আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র এবং একটি ফি জমা নেওয়া হবে তাই আমরা চাই যেন একটি সুন্দর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে এটি করা হোক নতুবা যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তিপ্রক্রিয়া আলাদা নেন তাহলে যেন তারা পরস্পরের মধ্যে একটা সমন্বয় করে তারিখ ঠিক করেন যাতে আমাদের বাড়তি খরচ কিংবা ভোগান্তি পোহাতে না হয়।

এসব বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল কোন ব্যক্তি মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে সম্প্রতি গুচ্ছ ভর্তি কমিটির সদস্য ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন বলেছিলেন, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্ত ছিল তিনটি ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবার পর প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা আলাদাভাবে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি ও ফিসহ যাবতীয় বিষয় নির্ধারণ করবে। এরপর প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজস্ব নিয়ম ও আইন অনুযায়ী একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে ভর্তি আবেদন ও ফি নির্ধারণ করবে। তাই এ সংক্রান্ত বিষয়ে হস্তক্ষেপের কোন সুযোগ গুচ্ছ কমিটির নেই।


সর্বশেষ সংবাদ