ঢাকা কলেজ

ছাত্র সংসদ নেই ২৭ বছর, তবুও চলছে বায়বীয় ফি আদায়

ঢাকা কলেজ
ঢাকা কলেজ  © ফাইল ছবি

দীর্ঘ প্রায় ২৭ বছর ধরে ঢাকা কলেজে নেই কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের কোন কার্যক্রম। তবুও প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের দিতে হচ্ছে এর ফি। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আদায়কৃত ফি তাদের কাছে জমা আছে। তবে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন, কার্যক্রম না থাকলে ফি আদায় কেন?  

ঢাকা কলেজে সর্বশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৯৩-৯৪ মেয়াদে৷ এরপর দীর্ঘ ২৭ বছরের বেশি সময় ধরে ছাত্র সংসদ কার্যকর নেই। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বছরে ২৫ টাকা হারে ছাত্র সংসদ ফি আদায় করছে৷

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু ছাত্র সংসদের বেলাতেই নয়, শিক্ষার্থীদের এমন বায়বীয় ফি গুণতে হচ্ছে আরও বেশ কয়েকটি খাতে।

ঢাকা কলেজে নেই কোনো চিকিৎসাকেন্দ্র, নেই আবাসিক চিকিৎসকও। সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র, ইনডোর গেমস ও জিমনেশিয়ামও মৃত। কোনও কার্যক্রম না থাকা এসব খাতের জন্যও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দীর্ঘদিন যাবত ফি আদায় করে আসছে কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষার্থীদের নিয়মিত বেতনের সাথে সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংসদ বাবদ ৫০টাকা, ইনডোর ক্রীড়া বাবদ ৪০টাকা, চিকিৎসার জন্য ২০টাকা এবং পরিবহণ ফি বাবদ ৫০০ টাকা পরিশোধ করতে হয়।

সরেজমিনে গিয়ে ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় পাঁচ বছর ধরে ঢাকা কলেজের চিকিৎসা কেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে। তালাবদ্ধ চিকিৎসা কেন্দ্রটির সামনের বারান্দায় টেবিল ও বেঞ্চ স্তুপ আকারে রাখা আছে।

এছাড়া, ক্যাম্পাসে ইনডোর খেলাধূলা এবং সহিত্য ও সংস্কৃতির তেমন কোনো কর্মকাণ্ড দেখা না গেলেও শিক্ষার্থীদের ফি ঠিকই দিতে হচ্ছে।

অন্যদিকে, করোনার কারণে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও ছাত্রদের পরিবহন ফি আদায়ও বন্ধ করেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ। উল্টো বাড়ানো হয়েছে ফি এর পরিমাণ। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২৫০ টাকা ফি আদায় করা হলেও তা গত বছর বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়।

বায়বীয় এসব ফি আদায় নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

তারা বলছেন, এমনিতেই করোনাভাইরাসের এই সময়ে অনেকের পরিবারে আর্থিক অস্বচ্ছলতা এসেছে। তার মধ্যে বন্ধ থাকা ছাত্র সংসদ আর সেবা না নিয়ে অন্যান্য ফি আদায় সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ব্যাপার।

ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী আবুজর গিফারী বলেন, করোনার কারণে অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক এখন আয়শূন্য। আমাদের আর্থিক অবস্থাও খারাপ। এরপর এসব অতিরিক্ত ফি আদায় তাই একদমই অযৌক্তিক। আমরা এসব ফি পরিহারের আহবান জানাচ্ছি।

আরেক শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম বলেন, এত বছর ধরে ছাত্রসংসদ নেই, কোনো কার্যক্রম নেই অথচ বছরের পর বছর ফি নেয়া হচ্ছে। এত বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অথচ কোন আবাসিক চিকিৎসক নেই। হঠাৎ করে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হলে সমস্যায় পড়তে হয়। গত দেড় বছর ধরে আমরা পরিবহন সেবা পাচ্ছি না তারপরও কেন আমরা পরিবহন ফি দেবো?

তাই আমরা দাবি জানাই পরিষেবার বাইরে কোন ফি যেন শিক্ষার্থীদের থেকে নেয়া না হয়, বলেন রফিকুল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক ছাত্র বলেন, যেখানে দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের উপর চাপ কমাতে এসব ফি মওকুফ করছে, সেখানে ঢাকা কলেজের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানে ফি আদায় শিক্ষার্থীদের জন্য কষ্টকর।

অবিলম্বে বর্ধিত এসব ফি মওকুফের আহবান জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

কার্যক্রম না থাকা সত্ত্বেও ফি আদায়ের বিষয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকারের কাছে।

অধ্যাপক সেলিম উল্লাহ জানান, ছাত্র সংসদের ফি ওটার তহবিলেই জমা আছে। ওখান থেকে এক টাকাও খরচ হয়নি।

আর সরকার তো আমাদের ফি আদায় করতে নিষেধও করে নাই, বলেন তিনি।

চিকিৎসা ফি আদায়ের বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, মেডিকেল সেন্টারটি কতিদন ধরে বন্ধ তা আমার জানা নেই। আমরা এটা চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। সরকারি ভাবে ডাক্তার নিয়োগের জন্য আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছি। চেষ্টা করছি দ্রুত একজন ডাক্তার নিয়োগ দেয়ার জন্য।

আর পরিবহন ফি বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ.টি.এম. মইনুল হোসেন জানান, জ্বালানি খরচ ছাড়াও গাড়ি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, মবিল পরিবর্তনসহ বেশ কিছু স্থায়ী খরচ আছে। এজন্যই এই ফি নেওয়া হচ্ছে।

অধ্যাপক মইনুল হোসেন বলেন, মূলত পরিবহন পরিচালনার ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারিভাবে কোনো প্রকার সহায়তা আমরা পাইনা। যেহেতু ঢাকা কলেজে নতুন করে আরও চারটি বাস যুক্ত হয়েছে, তাই সেসব বাসের ড্রাইভার ও সহকারী নিয়োগ এবং পরিচালনার ব্যয় নির্বাহের জন্য পরিবহন ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

তবে শিক্ষার্থীরা দাবি জানালে পরিবহন ফি কমানো যায় কিনা তা বিবেচনা করা হবে বলে জানান কলেজের উপাধ্যক্ষ।


সর্বশেষ সংবাদ