ভাস্কর্যে ভাস্বর বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য  © টিডিসি ফটো

বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে তার ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার আপামর জনসাধারণ পাকিস্তানি হানাদারদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বাঙালি জাতি দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বাংলাদেশ নামক লাল সবুজের ভূখন্ডের সৃষ্টি হয়েছিল। এ ইতিহাস বড় গৌরবের। বাংলদেশ এবং বঙ্গবন্ধু যেন এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

বঙ্গবন্ধু বাঙালির প্রাণে ও হৃদয়ের সঙ্গে মিশে আছেন। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিস্মরণে বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে নির্মিত হয়েছে ভাস্কর্য। নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ও আদর্শকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে প্রবাহিত করার জন্য। বঙ্গবন্ধুর স্মরণে নির্মিত এসব অসংখ্য ভাস্কর্য দেশ ছাড়িয়ে দেশের সর্বত্রই প্রায় রয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও রয়েছে এসব ভাস্কর্য। এসব ভাস্কর্যের মধ্যে মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব, শাশ্বত মুজিব এবং মুক্তির আহবান অন্যতম।

মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব: বাঙালির এই মহান আন্দোলনের যিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে বঙ্গবন্ধু আর স্বাধীন বাংলাদেশ এক অপরের পরিপূরক। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে সামনে তাকালেই চোখে পড়বে শির উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি স্মরণে নির্মিত মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালটি। এটি গুগল সার্চেও শীর্ষে।

২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এ ম্যুরালটি উদ্বোধন করেন। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ধারণ করা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যুরালটি গুগল সার্চে শীর্ষে রয়েছে। নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতির পিতার আদর্শ সঞ্চারিত হবে বলে আশা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

৩১ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৭ ফুট প্রস্থের ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩৭ লাখ টাকা। মূল বেদির ওপর আড়াই ফুট উঁচু ও ২০ ফুট চওড়া বেদি আছে। যেখানে বিভিন্ন দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয়। আর মূল প্রতিকৃতির ডান দিকে চার ফুট চওড়া ও ২০ ফুট উঁচু প্রাচীরে লেখা আছে ‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সাথে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালবাসা, অক্ষয় ভালবাসা, যে ভালবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’ বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত এই বাণী আমাদের দেশপ্রেম বাড়িয়ে তোলে।

মুক্তির আহবান: বঙ্গবন্ধুর যে কয়েকটি বাক্য পুরো বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল তা ছিল ৭ মার্চের ভাষণ। বলা হয়ে থাকে এ ভাষণের মধ্যেই স্বাধীনতার বীজ নিহীত ছিল। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মিত ৭ই মার্চের ভাষণ সম্বলিত মুক্তির আহ্বান ম্যুরালে কথা।

এটি একটি অনন্য স্থাপনা। ৯ ফুট উচ্চতা ও ১৮ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট ৭ মার্চের ভাষণ সম্বলিত ‘মুক্তির আহ্বান’ ম্যুরালটি দাঁড়িয়ে আছে বাঙালি জাতির মুক্তির ইতিহাস নিয়ে। এটি ২০২০ সালের ২৬ মার্চ উদ্বোধন করা হয়। ম্যুরালটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ফটকেই অবস্থিত।

শাশ্বত মুজিব: মুক্তির আহ্বান ম্যুরালের ঠিক বিপরীত দিকে নির্মিত হয়েছে শ্বাশত মুজিব ম্যুরাল। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু হলের ফটকের দুই পাশে দুটি ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়েছে। এ ম্যুরাল দুটি হলের মহত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ।

শ্বাশত মুজিব ম্যুরালটি সাড়ে ১০ ফুট উচ্চতা ও ৭ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট। এ ম্যুরালটিও দাঁড়িয়ে আছে বাঙালি জীবনের আলোর দিশারী হিসেবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের তত্ত্বাবধানে এর নকশা করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কনক কুমার পাঠক।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধীনে রয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’। ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ এর দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। ২০১৭ সালের ২০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩৫তম সিন্ডিকেটে বাংলা বিভাগের অধীনে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।

বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখার সভাপতি আব্দুর রউফ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু একটি আবেগ, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার নাম। তাই শুধু নির্দিষ্ট দিবসে বা কোন দিনে বঙ্গবন্ধুকে চর্চা করলে হবে না। বছরের প্রতিটি দিনই আমাদের নিকট বঙ্গবন্ধু সমান শ্রদ্ধার পাত্র। বিশ্ববিদ্যালযয়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মিত ভাস্কর্য গুলো নিয়মিত পরিচর্যা রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতির বার্তা পৌঁছে দিতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম বলেন, ‘আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মশতবার্ষিকী পালন করতে পারছি এটা আমাদের জন্য বড় পাওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্যগুলো অত্যন্ত নান্দনিক। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এসব ভাস্কর্য ইতিহাস জানতে নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করবে। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ও আদর্শ নতুন প্রজন্মের মোধ্যে প্রবাহবান থাকুক এটাই প্রত্যাশা।’


সর্বশেষ সংবাদ