বিষাক্ত মদপানে রাবি দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় আটক ৩
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০১৯, ১০:০৮ PM , আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৯, ১০:৩১ PM

গাঁজা, ইয়াবা ও অ্যালকোহল একসঙ্গে পান করায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় তিন যুবককে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার দিবাগত রাতে রামেক হাসপাতালে মারা যান রাবি আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুহতাসিম রাফিদ খান এবং তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তূর্য রায়। এ ঘটনায় অসুস্থ রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রকিবুল রাজশাহী মেডিকেল কলেজে (রামেক) হাসপাতালের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, রাবির দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর বিষয়ে থানায় অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা হয়েছে। অন্যদিকে ময়নাতদন্ত শেষে রবিবার রাতে তাদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। খুলনার দৌলতপুর থানার কবির আলম খান ছেলে মুহতাসিম রাফিদ খানের এবং নীলফামারীর ডেমরা থানার ছোট রাউতরা গ্রামের পুনেন্দ্র রায়, তার ছেলে তূর্য রায়ের লাশ গ্রহণ করেন।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, নগরীর উপরভদ্রার সাঈদ টাওয়ারের মেসে তূর্য থাকতেন। গত শুক্রবার রাতে তিনি তার দুই বন্ধু রাফিদ ও রাকিবুলকে সেখানে ডাকেন। এরপর তারা তিনজন ইয়াবা, গাঁজা ও পানির সঙ্গে অ্যালকোহল মিশিয়ে পান করেন। এরপর থেকেই তাদের অবস্থার অবনতি হতে থাকে।
মেস মালিক তোহরাব হোসেন সাংবাদিকদের জানান, শনিবার রাত ১০টার দিকে রাফিদ তাকে ফোন করে মদপানের কারণে তাদের অসুস্থতার কথা জানান। তোহরাব তাদের হাসপাতালে নিতে চাইলে তারা হাসপাতালে না যেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ৩টার দিকে তারা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তোহরাব তাদেরকে রামেক হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রথমে রাফিদ এবং পরে তূর্য রায় মারা যান।
রামেক হাসপাতালের চিকিৎসক নাফিস রহমান বলেন, হাসপাতালে পৌঁছার পরই রাফিদ ও তূর্যের মৃত্যু হয়েছে। রাকিবুল এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মদের সঙ্গে একাধিক নেশাজাতীয় দ্রব্য পানে সৃষ্ট বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মৃত্যুর কারণ আরও সুনির্দিষ্টভাবে নিশ্চিত করতে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক উভয়ের ভিসেরা সংরক্ষণ করেছেন। ঢাকার মহাখালিতে ভিসেরা পরীক্ষার পর তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের সাথে যুক্ত করা হবে। ওই প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে তাদের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে বলেও জানান তিনি।
অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলায় আটক তিন যুবক :
এদিকে ওই দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। রবিবার বিকেলে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় মামলা করা হয়। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন তিন যুবককে আটক করেছে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম।
আটককৃতরা হলেন ইফতেখায়ের হোসেন ওরফে সুমন (৩৭)। তিনি রাজপাড়া থানার সিপাইপাড়া এলকার আব্দুর রওফের ছেলে, মো. লুৎফর রহমান (৩৮) কাশিয়াডাঙ্গা কোট বরসি এলাকার মৃত হোসেন আলীর ছেলে, জনি শেখ ওরফে শুভ (২৪) বোয়ালিয়া বড়কুঠি এলাকার বাচ্চু শেখের ছেলে বলে জানা গেছে।
এর আগে নগরীর জিরো পয়েন্টে এলাকার স্টার মেডিকেল হল ওষুধের দোকানের মালিকসহ আরও দুই কর্মচারীকে আটক করা হয়েছিল। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না থাকায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান মহানগর পুলিশের মুখপাত্র।
বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমানুল্লাহ বলেন, এ ঘটনায় সন্দেহভাজন তিনজনকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী গত শুক্রবার রাতে মদপান করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। শনিবার রাতে তাদের রামেক হাসপাতালে ভর্তির পর সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান।