কুয়েটের ঢেউ এবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিদায় ঘণ্টা বাজছে ভিসি শুচিতা শরমিনের?
- জুবায়ের রহমান
- প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৫, ০৪:২৮ PM , আপডেট: ২১ জুন ২০২৫, ০২:০১ PM

সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ভিসি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ পদত্যাগ করেছেন। এর আগে তার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। কুয়েটের এই ঘটনা যেতে না যেতেই ভিসি অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার (৮ মে) তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও।
২০২৪ সালের ঐতিহাসিক ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়, পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ওই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষক হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। নিয়োগের পর থেকে উপাচার্যের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা এবং প্রশাসনিক দুর্বলতার অভিযোগ উঠতে শুরু করে। এসব অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা গত এক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। অনেকে অবশ্য বলছেন, আন্দোলনের পেছনে ইন্ধন জোগাচ্ছেন ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. মামুন অর রশিদ, যিনি বিএনপিপন্থী শিক্ষক ও স্থানীয় হিসেবে প্রভাবশালী।
এছাড়াও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহের সিন্ডিকেটে এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। এর ফলে কলিমুল্লাহ স্টাইলে ক্যাম্পাসে না গিয়ে উপাচার্য অধিকাংশ সময় ঢাকায় থাকেন বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি রেজিস্ট্রারের অপসারণ দাবিতে আন্দোলন করায় শিক্ষার্থীদের নাম মামলা করেছেন উপচার্য। ফলে উপাচার্য-বিরোধী আন্দোলনে তুঙ্গে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। এ ঘটনায় ভিসির বাসভবনসহ ও প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলনে শিক্ষকদের সরাসরি অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এখন এটি এক নতুন মোড় নিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শরমিনের দাবি, আন্দোলনকারীদের ভুল বোঝানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) বলছে, তাকে (অধ্যাপক শরমিন) উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের পর থেকেই বেশ কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত পরিলক্ষিত হয়েছে। এখন সমস্যাটি আরও জটিল হয়ে উঠছে।
জানা গেছে, বেরোবির সাবেক ভিসির দুর্নীতির নামে ৮০০ পৃষ্ঠার প্রকাশিত শ্বেতপত্রে একাধিকবার ড. শুচিতা শরমিনের নাম রয়েছে এবং কলিমুল্লাহ সিন্ডিকেটের লোকবলকেই এখানে একের পর এক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকদের দেওয়া এক অভিযোগপত্রে সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম ৬৬ বছর বয়স পূর্তিতে গত ১ ফেব্রুয়ারি অবসরে যাওয়ার কথা থাকলেও উপাচার্যের একক সিদ্ধান্তে বিধিমালার বাইরে গিয়ে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে তাকে পত্র দেয়া হয়।
একইভাবে আইনের তোয়াক্কা না করে উপাচার্য তার একক সিদ্ধান্তে একজনকে ‘পিএ টু ভিসি’ এবং আরেকজনকে ‘পিএ টু রেজিস্ট্রার’ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, এই নিয়োগসমূহ কোনো সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপন কিংবা আলোচনায়ও আনা হয়নি। নিয়োগপ্রাপ্ত নতুন দুইজন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী এবং নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর ঘনিষ্ঠ বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে বলছে, তাদের নিয়োগ অবৈধ হওয়ায় বেতন-ভাতাদির প্রস্তাব সংক্রান্ত নথি ট্রেজারার অনুমোদন ছাড়াই উপাচার্য একক স্বাক্ষরে অনুমোদন করছেন। শিক্ষকদের অভিযোগ, এটা বিধি-বহির্ভূত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক নীতিমালা অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্যুকৃত তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত সকল চেক ট্রেজারার অর্থ পরিচালক যৌথভাবে স্বাক্ষর করবেন। ৩ লাখ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারারের যৌথ স্বাক্ষরে এবং ৫ লক্ষ টাকা এবং তদূর্ধ্ব সকল চেকে ট্রেজারার ও ভিসি যৌথভাবে স্বাক্ষর করবেন। কিন্তু এই বিধি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে সকল চেক ভিসি একক স্বাক্ষরে পাস করেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন অনুসারে প্রো-ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অ্যাকাডেমিক কার্যাবলির প্রশাসনিক তত্ত্বাবধান করবেন মর্মে দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেও ভিসির নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো অ্যাকাডেমিক নথি তার নিকট মতামত, অনুমোদন বা পর্যবেক্ষণের জন্য প্রেরণই করা হয় না। প্রো-ভিসিকে বাদ দিয়েই নথিভিত্তিক ও সভাভিত্তিক সকল অ্যাকাডেমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানি সকল বিভাগের চেয়ারম্যানদের নিয়ে অ্যাকাডেমিক অগ্রগতি সংক্রান্ত একটি সভা আয়োজন করে চিঠি প্রদান করলে সেটিকে বিধি-বহির্ভূত বলে পাল্টা চিঠি দেন রেজিস্ট্রার। রেজিস্ট্রারের দেওয়া চিঠির প্রতিবাদে ৫০ জন শিক্ষক প্রতিবাদ জানিয়ে ভিসিকে পাল্টা চিঠি দেন। তাদের মতে, রেজিস্ট্রারের দেওয়া যুক্তি ও ব্যাখ্যা অনুযায়ী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ যাবৎকালে অনুষ্ঠিত বিভাগসমূহের অ্যাকাডেমিক কমিটির সভা, পরীক্ষা কমিটির সভা ও প্রাধ্যক্ষের হল প্রশাসনিক সভা ইত্যাদি অনেক কিছু অবৈধ হয়ে যায়।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ভিত্তিতে গঠিত দুটি কমিটির বাইরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক সভায় প্রো-ভিসি ও ট্রেজারারকে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। আইন অনুসারে প্রতি তিনমাসে সিন্ডিকেট সভা হওয়ার কথা থাকলেও সেটির কোনো উদ্যোগ নেন না ভিসি। সপ্তাহের দুই থেকে তিনদিন ক্যাম্পাসে অবস্থান করলেও কখনো কখনো পুরো সপ্তাহজুড়েই ক্যাম্পাসে থাকেন না তিনি। শিক্ষকরা বলছেন, ফলে দাপ্তরিক কর্মকাণ্ডে মারাত্মক জট ও অচলাবস্থা লেগেই থাকে।
এদিকে একটি বিভিন্ন ফাইলে ভিসি স্বাক্ষর না করায় বিভিন্ন সময় কাজে ব্যাঘাত ঘটেছে প্রশাসনের থাকা লোকজনের। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টির দুইজন হল প্রভোস্টসহ রিসার্চ সেলের একজন পদত্যাগ করেছেন।
এছাড়াও আইনের তোয়াক্কা না করেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণতম শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. মুহসিন উদ্দীনকে ভিসি আইন-বহির্ভূতভাবে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটের সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী ভিসিকে সিন্ডিকেটের বা অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যকে অব্যাহতি প্রদানের ক্ষমতা দেয়া হয়নি। এই সদস্যপদ কীভাবে অর্জিত হবে এবং কীভাবে সমাপ্ত হবে তা আইনের ১৭ ও ২০ ধারায় উল্লেখ্য করা হয়েছে।
জানা গেছে, অব্যাহতিপ্রাপ্ত ড. মো. মুহসিন উদ্দীন কখনো তিনি আওয়ামী শিক্ষকদের পেশাজীবী সংগঠন নীল দলে কখনো যোগদান করেননি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর সরকারি নির্যাতন ও-নিপীড়নের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়ে পত্রিকায় বিবৃতি প্রদান করেছিলেন। অপরদিকে অভিযোগ রয়েছে, ভিসি ড. শুচিতা শরমিন ছিলেন সেই ৩৫০ জন বিশিষ্ট নাগরিক, শিক্ষা ও বুদ্ধিজীবীর একজন, যারা দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধীদলের পরিচালিত আন্দোলনকে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
শুধু এ ঘটনায় নয়। বিভিন্ন সময়ে ফ্যাসিবাদী সরকারের সাথে যুক্ত শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের পদায়ন করেছেন ড. শুচিতা। সূত্র অনুযায়ী, মনপুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. মনিরুল ইসলামকে অবসরে যাওয়ার পরেও অবৈধভাবে নির্বাহী আদেশে রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে অবশ্য শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তাকে অপসারণের ঘোষণা দিয়েছেন ভিসি।
অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় ব্যয় নির্বাহের সকল দরপত্র ওপেন কমিটির আহ্বায়ক হলেন ড. মো. আবদুল কাইউম, যিনি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণার স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ছিলেন এবং দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক ড. আবদুল বাতেন চৌধুরী ছিলেন উক্ত নির্বাচনী প্রচারণার একটি উপকমিটির আহ্বায়ক। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়মানুযায়ী ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ঘ ইউনিটের সমন্বয়ক হওয়ার কথা ব্যবসায় অনুষদের ডিনের। কিন্তু নিয়ম ভেঙ্গে ড. মোহাম্মদ তানভীর কায়ছার, ডিন, কলা অনুষদকে এই সমন্বয়ক বানানো হয়েছে, যিনি গত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ছিলেন।
অর্থ বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ফ্যাসিস্ট সময়ের সংরক্ষিত সংসদ সদস্য লুৎফন নেছার সন্তান মো. আতিক রহমানকে। এদিকে অনেক বিভাগের চরম শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও কোনো নিয়োগ বোর্ড ডাকেননি তিনি।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি প্রো-ভিসি হওয়ায় তিনি এ বোর্ড আহ্বান করেন না। এছাড়া অর্থ কমিটির কোনো সভা কল না করে গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় তিনি নিজেই পরিচালনা করে আসছেন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের নামে করা মামলার এজাহারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি, ট্রেজারার ও সদ্য সিন্ডিকেট থেকে বাদ দেওয়া মুহসীন উদ্দিনের নামেও অভিযোগ তুলেছেন ভিসি।
এদিকে যোগদানের দুইমাসের মাথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্যসহ আরও দুইটি কমিটিতে সদস্য হিসেবে নেওয়া হয় নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে একটি কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাকে। এখনো দুইটি কমিটিতে কলিমউল্লাহ বহাল রয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মকর্তা আওয়ামীপন্থী
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মকর্তা আওয়ামীপন্থী। অন্যদিকে, প্রশাসনের শীর্ষ থাকা ভিসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। তাছাড়া বর্তমান প্রো-ভিসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী ও ট্রেজারার পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পরিস্থিতি বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশ। তাছাড়া ট্রেজারার বরিশালের স্থানীয়, তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে ইন্ধনের অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মকর্তা আওয়ামীপন্থী। এখন কিছু শিক্ষক-কর্মকর্তা ভিসির সঙ্গে এবং কিছু কর্মকর্তা প্রো-ভিসি ও ট্রেজারারের পক্ষে রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ এক কর্মকর্তা ও কয়েকজন শিক্ষক জানান, ভিসি ড. শুচিতা শরমিন শুরুর দিকে ভালোই চালিয়েছেন। তবে সম্প্রতি তার বেশকিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারারের সঙ্গে মতানৈক্য এবং নিয়মিত ক্যাম্পাসে না গিয়ে ঢাকায় লিয়াজোঁ অফিসে অফিস করা প্রভৃতি কারণে অবস্থা নড়বড়ে হয়ে যায়। ফলে ফাইল নিয়ে ঢাকায় চলে যান। খুবই কমই ক্যাম্পাসে থাকেন। ফলে সেশনজটের সম্ভবনা রয়েছে শিক্ষার্থীদের। এভাবে তো আর বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। এর ফলে এই আন্দোলন।
ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলনের ইন্ধন প্রসঙ্গে ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. মামুন অর রশিদ বলেন, অভিযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণটি মিথ্যা। আমি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে কোনো ধরনের উসকানি দিইনি।
ভিসির বক্তব্য
বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান আন্দোলন এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় ভিসি অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি যখন নিয়োগ পাই, রেজিস্ট্রার দপ্তর চালানোর মতো কোনো লোক ছিল না। সবসময় তার সহযোগিতা পেয়েছি বলব না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজগুলো ব্যাহত হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনেও এই ভদ্রলোককে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকেই এখানে আছেন এই বিবেচনায় আমি উনাকে সুযোগ দিয়েছিলাম এবং সিন্ডিকেটেও এটা পাশ হওয়ার কথা ছিল। প্রথম সিন্ডিকেটে হয়নি। কিন্তু দ্বিতীয় সিন্ডিকেটে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি দুইজনকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছিলাম। একজনকে পিএ টু ভিসি আরেকজন পিএ টু রেজিস্ট্রার হিসেবে একবছরের জন্য চুক্তিতে, সবচেয়ে কম বেতনে। কারণ সেখানে আমি কোনো নির্ভরযোগ্য লোক পাচ্ছিলাম না। দেখলাম কোনো তথ্যই গোপন থাকে না। আমি পরিকল্পনা করছি ভবিষ্যতে সেসব বিষয় সংশোধন করার।’
নিয়োগপ্রাপ্ত দুইজনের সাথে অধ্যাপক কলিমউল্লাহর সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন দেখলাম কলিমউল্লাহর সাথে ট্রেজারার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এটা প্রচার করছে। একটা মানুষের পলিটিক্যাল আইডেন্টিটির চাইতে বড় কথা উনি আমার কলিগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। ছোটবেলা থেকেই তাকে দেখেছি। এমন অনেক অসংখ্য মানুষকে আমি ছোটবেলা থেকে দেখেছি, কারণ তারা জ্ঞানী ও পড়ালেখা করা মানুষ। তাদের আমি আমার বাবার বাসায় দেখেছি। আমার বাবা বাংলা অ্যাকাডেমির সভাপতি হিসেবে আছেন। অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক। বর্তমান শিক্ষা উপদেষ্টাকেও আমরা দেখে আসছি। এখন তিনি বেরোবি ছিলেন বলেই তাকে সবার আত্মীয়স্বজন ভাবার কোনো দরকার নেই। আর আমি তো আমার সুবিধার জন্যই নিব। কারণ একজন মানুষকেও ভরসা করা যাচ্ছে না।’
একক স্বাক্ষরে অর্থ দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ট্রেজারারের মাধ্যম হয়ে ভিসির কাছে আসে। বিভিন্ন কাগজ দেখলেই বোঝা যায়, ট্রেজারার ভিসিকে পরামর্শ না দিয়ে নির্দেশ দিচ্ছেন। পরিষ্কারভাবে লেখা আছে উনার কাজ হচ্ছে পরামর্শ দেওয়া।’
আর্থিক নীতিমালা অনুসরণ না করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে এটা চালু ছিল না। অতীতের কোনো একসময় আর্থিক নীতিমালার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল, কিন্তু এটা কার্যকর ছিল না। কার্যকর করব কিনা সে পর্যন্ত সিদ্ধান্তে যাওয়ার জন্য সিন্ডিকেটে যাওয়ার দরকার ছিল।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সর্বোচ্চ পদের অধিকারী। বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর দায়িত্ব তার ওপর থাকে। কারো অনুমতি নিয়ে তাকে কাজ করতে হয় না। তাকে পরামর্শ দিতে পারে।’
সিন্ডিকেট থেকে মহসিন উদ্দিনকে অব্যাহতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অব্যাহতি দেওয়ার পেছনে কারণ ব্যাখ্যা করা আছে। উনি হাইকোর্ট রিট করেছেন। এটা একটা সাবজেকটিং কেইস। এই বিষয়ে বক্তব্য দেওয়া বা আলোচনা করার মতো পরিস্থিতি না। এটা আদালতের অবমাননা হয়। সুতরাং এ বিষয়ে আলোচনা করার কোনো সুযোগ নেই।’
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩৫০ জনের লিস্টে নাম থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি এটার ডকুমেন্ট ফেইক। সেখানে আমার স্বাক্ষর ছিল না। আমি কখনোই রাজনীতি করি নাই। রাজনৈতিক কোনো প্রোপাগান্ডা নিয়ে কখনো কোনো রাজনৈতিক ক্যাম্পেইনও করি নাই।’
আওয়ামী লীগের ব্যক্তিদের বিভিন্ন পোস্টে বসানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের আকাঙ্ক্ষার বিষয় তো থাকেই। ২০১১ সালের পর থেকেই প্রতিটি নিয়োগই পতিত সরকারের আমলের নিয়োগ। জুলাই আন্দোলনের পরে ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ব্যতীত নতুন আর কোনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি।’
কলিমউল্লাহ শ্বেতপত্রে ওনার নাম থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কলিমউল্লাহ স্যারের নামে শ্বেতপত্র থাকলে তিনি (কলিমউল্লাহ) জেনে থাকতেন। আর উনি যদি এত বড়ই সমস্যা হতো তাহলে উনি এভাবে কথা বলতে পারতেন না। তিনি দীপু মনির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের আমলেই কথা বলেছেন। এবং কথা বলার কারণে তার বিরুদ্ধে সরকার মামলা পর্যন্ত হয়েছে। সেগুলোতে তিনি জয়ী হয়েছেন।’
আওয়ামী লীগের আমলের শিক্ষকদের পদায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কে ফ্যাসিস্ট আমলের, কে ফ্যাসিস্ট আমলের না, সেটা শনাক্ত করার জন্য সিন্ডিকেট থেকে করে দিয়েছি। কমিটি নির্ধারণ করে দিবে কে ফ্যাসিস্ট, কে ফ্যাসিস্ট না। এ কাজের জন্য ৩৫ কর্ম দিবস বেধে দেওয়া হয়েছে।’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা অনেক সময়ই ভুল বুঝে। তাদের ভুল বুঝানো হয়। এবং শিক্ষার্থীদের জন্য আমি সবসময় সহমর্মী ফিল করি। তারা অনেক কিছু বুঝে, না বুঝেই করে ফেলে। আন্দোলনকারীদের বিষয়গুলো সাধারণ শিক্ষার্থীরা পছন্দ করে না। শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ৩৫ থেকে আজকে ১৫ হয়ে গেছে। আগামীকাল তারাও থাকবে কি না-আমার মনে হয় না।’
ক্যাম্পাসের বাহিরে অবস্থান করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বাইরেও যারা থাকেন তারা সবাই ডি-নথিতে কাজ করেন। ইউনিভার্সিটির প্রয়োজন ছাড়া একদিনও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরে থাকিনি।
একদফা দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীরা
গত ৪ মে থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ভিসির অপসারণ ও পাতানো সিন্ডিকেট সভা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তার বাসভবনের ফটক ভাঙচুর করে বিক্ষোভ করেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এরপর গত ১৩ এপ্রিল ভিসির নির্দেশে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক নোটিশে অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তাকে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর চার দফা দাবিতে আবার আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
দাবিগুলো হলো অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনকে পুনর্বহাল, রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণ, ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারের দোসর শিক্ষকদের বিভিন্ন কমিটি থেকে অপসারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যমান উন্নয়ন না করে একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসন করায় ভিসিকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া।
২৭ এপ্রিল রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামেন একদল শিক্ষার্থী। তারা রেজিস্ট্রারকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ দাবি করে কুশপুত্তলিকা দাহ করেন এবং রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে তালা দেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) কে এম সানোয়ার পারভেজ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভিকারুল ইসলাম ভুবন বলেন, বর্তমান ভিসি বিরোধী আন্দোলন আগেও একবার হয়েছিল এখন এটা দ্বিতীয় বারের মতো আন্দোলন। এই আন্দোলন সূত্রপাত হয় অধ্যাপক মুহসিন স্যারকে সিন্ডিকেট থেকে বাদ দেওয়া ও সৈরাচারের দোসরদের পূনর্বাসনের কারণে। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের এর চেয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ হলো আমাদের একাডেমি ভবনের সংকট, সেশনজট নিরসন। এগুলো নিয়ে কোন আন্দোলন হলে আমরা পূর্ণ সমর্থন থাকবে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে কে আসলো কে গেলো এটা নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিনহাজ ওয়াসিম সারফারাজ ‘আমাদের বর্তমান ভিসি নিয়োগ পর থেকেই শিক্ষার্থীদের কে ফ্যাসিস্ট বলে বিতর্ক জন্ম দিয়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় আসা থেকেই ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসন করেই চলেছে। দিন দিন অহংকারী হয়ে যাচ্ছেন। এবং তিনি শিক্ষার্থীদের কে কিছুই মনে করেন না। শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলেই তিনি মামলা দিয়ে দেন। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রমের পরিপন্থী। তার এই সকল অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তই মেনে নিচ্ছেনা শিক্ষার্থীরা। সেজন্যই আমরা তার পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি। যেটা বর্তমান আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য খুবই জরুরি হয়ে দাঁড়াইছে।’
ভিসির পদত্যাগের আন্দোলনে সংহতি শিক্ষকদের
ভিসি ড. শুচিতা শরমিনের পদত্যাগ দাবিতে চলমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে এবার সংহতি প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আজ বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে ক্যাম্পাসের গ্রাউন্ড ফ্লোরে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন। তারা শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়ে একটি লিখিত বিবৃতি প্রদান করেন।
বিবৃতিতে শিক্ষকরা বলেন, “২০২৪ সালের গৌরবময় জুলাই বিপ্লবের পরে আমরা আশা করেছিলাম বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় একটি নতুন, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবান্ধব পরিবেশে উত্তরণের পথে যাত্রা করবে। কিন্তু বাস্তবে আমরা বরং দেখছি, একাধিক বিভাগে মাত্র দুই বা তিনজন শিক্ষক কর্মরত থাকা সত্ত্বেও গত আট মাসে কোনো নিয়োগ হয়নি। ফলে শিক্ষাদান কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। অথচ ভিসি ঢাকায় নির্বিকারভাবে সময় কাটাচ্ছেন এবং বেআইনি উপায়ে নিম্নপদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে যাচ্ছেন।”
তারা অভিযোগ করেন, এইসব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের নথিপত্র ট্রেজারার অনুমোদন না করায়, ভিসি নিজে এককভাবে স্বাক্ষর দিয়ে এসব নিয়োগ কার্যকর করছেন ও বেতন-ভাতা প্রদান করছেন—যা পুরোপুরি বেআইনি। ভিসির অনুপস্থিতি ও দায়িত্বহীনতার চিত্র তুলে ধরে শিক্ষকদের বক্তব্যে বলা হয়, “সপ্তাহে মাত্র কয়েক ঘণ্টা তিনি ক্যাম্পাসে থাকেন, বাকিটা সময় ঢাকায় অবস্থান করেন। প্রো-ভিসিকে দায়িত্ব পালনের সুযোগও দেন না। একাডেমিক প্রস্তাবগুলো মাসের পর মাস তার টেবিলে পড়ে থাকে। এমনকি, ক্যান্সারে আক্রান্ত এক শিক্ষার্থীর সাহায্যের আবেদন মাসের পর মাস খোলাই হয়নি, এবং ছাত্রটি মৃত্যুবরণ করেছে।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভিসির দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটি বা পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটির কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। বরং তিনি যে দুটি দিভিকেট সভা আয়োজন করেছেন, তার একটি ছিল ‘গোপন এজেন্ডা’র দুরভিসন্ধিমূলক সভা এবং অপরটি ছিল একটি বিশেষ সুবিধাভোগী সভা। এতে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্তগুলো আটকে আছে। আইনবহির্ভূতভাবে শিক্ষক প্রতিনিধি অপসারণ করে, নিজের পছন্দমতো লোকজনকে সিন্ডিকেটে অন্তর্ভুক্ত করে তিনি একনায়কতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন শিক্ষকরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ব্যয়েও চরম অদক্ষতার অভিযোগ এনে বলা হয়, “২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬ কোটি ২ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও বছর শেষে এসে মাত্র ৭৭ লাখ টাকা ব্যয় করা গেছে। ৫০ লাখ টাকার বইয়ের বাজেট থেকেও কোনো বই কেনা হয়নি।”
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা আরও জটিল হয়ে উঠছে: ইউজিসি
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় ইউজিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। তারা বলেন, নিয়োগের পর থেকেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বেশ কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত পরিলক্ষিত হয়েছে। এসব সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা চেয়ে আমরা তিন সপ্তাহ আগে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু প্রাপ্ত ব্যাখ্যাগুলো সন্তোষজনক হয়নি। এছাড়াও নিয়োগসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশিত একাধিক সংবাদ প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে এ ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। তবে, কোনোটিই গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়নি।
ইউজিসি কর্তৃপক্ষ বলেন, শিক্ষার্থীরা প্রথম থেকেই আন্দোলন করে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে তার (ভিসির) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অন্তত একদিন বসা উচিত ছিল। কিন্তু তিনি তা করেননি। ফলে সমস্যাটি আরও জটিল হয়ে উঠছে।