শিক্ষার্থীকে মারধরে চুপ পুলিশ, সেনা পরিচয়ে কুবি প্রক্টরকে হুমকি

ক্যাপ্টেন শামীম ও রাব্বি এলাহী
ক্যাপ্টেন শামীম ও রাব্বি এলাহী  © টিডিসি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থী আনাস আহমেদকে চুরির অভিযোগে তুলে নিয়ে অর্ধনগ্ন অবস্থায় মারধর করা হয়। এ ঘটনায় রাব্বি এলাহীসহ তিনজনকে আটক করলেও, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কোতয়ালী থানার ইনচার্জ (আইসি) রাকিব ঘটনাটি জানলেও কোনো পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা তিনজন হামলাকারীকে ধরে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যায়। এদের ছেড়ে দিতে কোটবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ডিউটি অফিসার টিটু এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মাহমুদুল হাসান রাহাতকে সেনা অফিসার পরিচয়ে ফোন দিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। ফোনকারী নিজেকে ‘ক্যাপ্টেন পলাশ’ পরিচয় দিয়ে রাব্বি এলাহীর বন্ধু বলে দাবি করেন।

জানা গেছে, কুমিল্লা শহরের একটি হোটেলে বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়ে আনাস আহমেদ ও তার সহপাঠী শামীম ভূঁইয়া ‘নবাব’ ফটো ও ভিডিওগ্রাফি এজেন্সির একটি ক্যামেরার লেন্স চুরি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজে তাদের শনাক্ত করা হয়। এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাব্বি এলাহীর নেতৃত্বে ৬টি মোটরসাইকেলযোগে একটি দল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এসে আনাসকে ধরে একটি দোকানের স্টোর রুমে নিয়ে গিয়ে মারধর করে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ অনুযায়ী, মারধরের সময় তার পেটে পিস্তল ঠেকিয়ে বলা হয়, "আমরা কুমিল্লা শহর চালাই।" পরে তার স্বীকারোক্তিমূলক একটি ভিডিও জোরপূর্বক ধারণ করা হয় এবং অপহরণের চেষ্টা চালানো হয়। ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রক্টর অফিসে হট্টগোল সৃষ্টি হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় তিনজন হামলাকারীকে আটক করা হয়। বাকি হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে রাব্বি এলাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর এবং পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তাকে ফোন দিয়ে ‘ক্যাপ্টেন পলাশ’ পরিচয়ে তাদের ছেড়ে দিতে চাপ প্রয়োগ করেন।

রাব্বি এলাহী বলেন, ‘আনাসকে মারধরের সময় আমি সেখানে ছিলাম না। আমি ও আইসি রাকিব বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ম্যাজিক প্যারাডাইসে ছিলাম। আমি পুরো বিষয়টি আমার বন্ধু ক্যাপ্টেন পলাশকে জানাই, সে ফোনে কথা বলে।’

রাব্বির এক বন্ধু বাহার বলেন, ‘মারধরের ঘটনা ঘটেছে, তবে আমরা সরাসরি সেখানে ছিলাম না।’

আইসি রাকিব বলেন, ‘আমরা একটা জিডি পেয়েছিলাম লেন্স হারিয়ে যাওয়ার। সন্ধ্যাবেলায় আমার কাছে কল আসে বাদীপক্ষের একজনের। উনি বলেছেন যে উনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে চুরির অভিযুক্ত আনাসকে ধরে ফেলেছেন। উনারা আমাকে না জানিয়ে একা একা চলে যাওয়ায় আমার রাগ হয়। তখন আমি কোটবাড়ি বার্ডের সামনে ছিলাম। এটা শুনার পর আমি সেখান থেকে চলে যাই।’

সহকারী প্রক্টর মাহমুদুল হাসান রাহাত বলেন, “রাব্বি আমাকে তার ফোনে ক্যাপ্টেন পলাশের সঙ্গে কথা বলতে দেন। ক্যাপ্টেন পলাশ বলেন, যেহেতু মারধরের ঘটনা ঘটেছে, বিষয়টি যেন আমি সহজভাবে সমাধান করি।” তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, কেউ সেনা পরিচয়ে ফোন দিয়ে এমনভাবে কথা বলতে পারেন কি না, তিনি সে বিষয়ে তিনি না সূচক উত্তর দেন। 

কোটবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা টিটু বলেন, ‘রাব্বি আমাকে ক্যাপ্টেন পলাশের সঙ্গে কথা বলার জন্য ফোন দেন। ক্যাপ্টেন পলাশ বলেন, বিষয়টি যেন সমাধান করি। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানাই, কারণ তারা ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে, কাউকে মারধর করেনি।”

পরে ‘ক্যাপ্টেন পলাশ’ পরিচয়ে যিনি ফোন করেছিলেন, তিনি জানান, তার প্রকৃত নাম ক্যাপ্টেন শামীম এবং তিনি বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে ‘আর্মার্ড কোর্পস সেন্টার অ্যান্ড স্কুল’-এ কর্মরত। তার ব্যাচ ৭৭। তিনি বলেন, ‘আমি সেনা অফিসার পরিচয়ে প্রক্টরের সাথে কথা বলেছি। সে (রাব্বি) আমার কাছের মানুষ বিধায় এই সময়ে আমি কল দিতেই পারি। কাছের মানুষ বিপদে পড়লে কনভে করার দরকার আছে না? আমি কাউকে হুমকি দেইনি।’

সদর দক্ষিণ থানার দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা ফেরদৌস বলেন, ‘আমরা পুরো বিষয়টি জেনেছি। অপরাধের সত্যতা পেয়েছি। আইসি রাকিবের বিষয়ে তদন্ত হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence