বিএসসি প্রকৌশলীদের প্রতি বৈষম্য নিরসনের ৩ দাবিতে বিক্ষোভ
- ইবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৩ PM , আপডেট: ২৪ জুন ২০২৫, ১২:৫৮ PM
বিএসসি প্রকৌশলীদের প্রতি বৈষম্য নিরসন ও তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) বেলা ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের ব্যানারে সিএসই, ইইই, আইসিটিসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এই বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘চব্বিশের বাংলায় বৈষম্যর ঠাঁই নাই’, ‘ডিপ্লোমা কোটা নিপাত যাক, প্রকৌশলীরা মুক্তি পাক’ স্লোগান দিতে থাকেন।
শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবিত দাবিগুলো হলো- প্রথমত, ইঞ্জিনিয়ারিং ৯ম গ্রেড/অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার/সমমান পদে প্রবেশের জন্য সবার জন্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং অবশ্যই বিএসসি ডিগ্রি থাকতে হবে। কোনো কোটা বা সমমান পদ তৈরি করে পদোন্নতির সুযোগ দেওয়া যাবে না।
দ্বিতীয়ত, টেকনিক্যাল ১০ম গ্রেড/ সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার/সমমান পদ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে, যাতে ডিপ্লোমা ও বিএসসি ডিগ্রিধারী উভয়েই চাকরির পরীক্ষায় সুযোগ পান।
তৃতীয়ত, বিএসসি ডিগ্রি ছাড়া কেউ ‘ইঞ্জিনিয়ার’ পদবি ব্যবহার করতে পারবে না। এ জন্য আইন পাস করে গেজেট প্রকাশ করতে হবে। আইইবি অ্যাক্ট অনুযায়ী কেবল বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররাই প্রকৃত ‘ইঞ্জিনিয়ার’ হিসেবে স্বীকৃত। এই শব্দের অপব্যবহার বন্ধ করা জনস্বার্থে জরুরি।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, দিনের পর দিন ডিপ্লোমা কোটার পরিমাণ বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের প্রকৌশল খাতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা কিছু কাঠামোগত বৈষম্যের মাধ্যমে প্রকৌশলীদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে। একজন বিএসসি ডিগ্রিধারী প্রকৌশলী কখনোই ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের সমান হতে পারেন না। এ বৈষম্যের ফলে দেশের প্রকৌশল ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার সংকট ও ন্যায্যতার অভাব তৈরি হচ্ছে। আমরা চাই প্রতিটি ক্ষেত্রে মেধার মূল্যায়ন হোক।
প্রশ্ন রেখে তারা বলেন, সারা দেশের এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেসব প্রকৌশলী বের হচ্ছেন, তারা পড়াশোনা শেষ করে কী করবেন? পড়াশোনা শেষ করে চাকরির আবেদনই করতে না পারলে আমাদের পরিশ্রমের মূল্য কোথায়? তাদের সাত দফা দাবির বিপরীতে আমাদের তিন দফা দাবি আদায়ের পক্ষে আমাদের কর্মসূচি চলবে।
প্রকৌশল খাতে কোটা ব্যবস্থা প্রকৌশলীদের জন্য ন্যায্য প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করবে এবং দেশের প্রকৌশল খাতকে আরও শক্তিশালী করবে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, ১০ম গ্রেডে বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা আবেদন ই করতে পারে না। প্রকৌশল খাতে নিয়োগ ও পদোন্নতি অবশ্যই মেধার ভিত্তিতে হওয়া উচিত, কোনো ধরনের কোটা বা বিশেষ সুবিধার মাধ্যমে নয়। কেউ যদি ৯ম গ্রেডে যেতে চান, তাহলে তাকে অবশ্যই পরীক্ষার মাধ্যমে মেধার জানান দিয়েই আসতে হবে। ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের জন্য ৩৩ শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে, তা অবশ্যই বাতিল করতে হবে এবং ৯ম গ্রেডে কোনোভাবেই ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের স্থান দেওয়া যাবে না। যত দিন পর্যন্ত আমাদের তিন দফা বাস্তবায়ন না হবে, তত দিন আমাদের আন্দোলন চলবে। এ ছাড়া সব পর্যায়ের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান বক্তারা।
আইসিটি বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে অনেক প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল বিভাগ আছে। এসব জায়গার শিক্ষার্থীরা দেশের জন্য কিছু করতে চায়। আমরা শুধু হাহুতাশ করি যে দেশ থেকে মেধা পাচার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের মতো প্রকৌশলী অনুষদের শিক্ষার্থীদের যদি পড়াশোনা শেষে দেশের জন্য কাজ করার সুযোগ দেওয়া না হয়, তাহলে তো মেধা পাচার হবেই।
আহ্বান জানিয়ে সাজ্জাদ বলেন, অযোগ্যদের এসব জায়গায় সুযোগ দিলে তো দেশ আগাবে না। এ ছাড়া ইবির ৫টি প্রকৌশল বিভাগকে আইইবির অ্যাক্রিডিয়েশনের আওতায় যাবতীয় সুবিধা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।