আবাসন সংকট থেকে মুক্তি চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে জবি শিক্ষার্থীর খোলা চিঠি

জবি
জবি  © লোগো

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের আবাসন সংকট ও শিক্ষার্থীদের দুরবস্থা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি আবেগময় খোলা চিঠি লিখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী মো. ফয়সাল মুরাদ। চিঠিতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ বছরের ইতিহাস, শিক্ষার্থীদের ত্যাগ, আন্দোলন এবং বর্তমান বাস্তবতা তুলে ধরেছেন।

চিঠিতে মুরাদ লিখেন, “একসময় জগন্নাথ কলেজের হলগুলো দখল করে নেয়া হয়েছিল আওয়ামী দলের সহযোগী সংগঠনের দ্বারা। আজ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পথচলার ২০ বছর অতিক্রম করলেও, একটি ছেলের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।”

তিনি অভিযোগ করেন, গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করেও শিক্ষার্থীরা বাস্তব কোনো সমাধান পায়নি। ২০১৪, ২০১৬, ২০২৪ ও ২০২৫ সালে একাধিকবার আন্দোলন, অনশন এবং রক্তাক্ত সংঘর্ষের পরও শিক্ষার্থীরা চরম অবহেলার শিকার।

সর্বশেষ অনশন কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি উত্থাপন করেন, যার মধ্যে রয়েছে—
১. সেনাবাহিনীর কাছে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তরের চুক্তি অনতিবিলম্বে স্বাক্ষর।
২. পুরান ঢাকার বাণী ভবন ও ড. হাবিবুর রহমান হলের নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করা।
৩. স্থায়ী আবাসনের পূর্ব পর্যন্ত অন্তত ৭০% শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন ভাতা নিশ্চিত করা।

ফয়সাল মুরাদ চিঠিতে জানান, “প্রথম দাবিটি পূরণ হলেও সেনাবাহিনীর হাতে কাজ হস্তান্তরের পরও ডিপিপি, সংশোধিত ডিপিপি ও একনেক অনুমোদনের জটিলতায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন থমকে আছে। আর কবে নাগাদ প্রকৃত আবাসন সুবিধা পাওয়া যাবে, তা অনিশ্চিত।”

তিনি আরও বলেন, ‘পুরান ঢাকার অস্বাস্থ্যকর ও মানবেতর পরিবেশে শিক্ষার্থীরা টিকে আছে টিউশনি ও পার্টটাইম চাকরির ওপর নির্ভর করে। অথচ আবাসনের সুবিধা তো দূরের কথা, ন্যায্য আবাসন ভাতাও নিশ্চিত হয়নি।’

২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে বলেও চিঠিতে দাবি করা হয়েছে। “আমরা একরামুল হক সাজিদ ভাইকে শহীদ করেছি, গুলিবিদ্ধ হয়েছে ফেরদৌস, নাসিম, অনিক, প্রভা সহ অনেকেই। আহত হয়েছে শতাধিক—কারো হাত ভেঙেছে, কারো পা, কারো মাথা ফেটেছে,” লিখেছেন তিনি।

অবশেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আবেদন জানিয়ে তিনি লেখেন, “আমাদের দিকে দয়া করে একটিবার সুদৃষ্টি দিন। আমরা আর পারছি না। হয় আবাসনের ব্যবস্থা করুন, না হয় অবিলম্বে ন্যায্য আবাসন ভাতা দিন। আমরা ক্লান্ত, আমরা বিপর্যস্ত—আর টিকে থাকতে পারছি না।”


সর্বশেষ সংবাদ