বদলি আর প্রশাসনিক অস্থিরতার চক্রে বন্দি মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি

মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির নতুন উপাচার্য এবং লোগো
মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির নতুন উপাচার্য এবং লোগো  © সম্পাদিত

দেশের ৩৭ তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি (বিএমইউ)। বিশেষায়িত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রশাসনিক পদগুলোর দায়িত্বে থাকেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা। তবে এসব গুরুত্বপূর্ণ পদে ঘন ঘন রদবদল যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘমেয়াদি অগ্রগতির অন্যতম বাধায় পরিণত হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী উপাচার্য পদে নিয়োগ পান নৌবাহিনীর রিয়ার এডমিরাল বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার চাকরিরত বা অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নতুন উপাচার্যসহ মোট ৫ জন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন। আগামী ৯ মে বিদায় নিবেন উপাচার্য রিয়ার এডমিরাল আশরাফুল হক চৌধুরী। দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র ৬ মাসের মাথায় অবসরে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ উপাচার্য। তার আগের উপাচার্য রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসাও দেড় বছরের মধ্যেই বদলি হয়ে যান।

গত ৫ আগষ্ট সরকার পরিবর্তনের পর উপাচার্য রিয়ার এডমিরাল আশরাফুল হক চৌধুরীর দ্রুত স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণসহ ৫ আগষ্ট পরবর্তী বিভিন্ন পরিস্থিতি সামলে নিয়ে দৃঢ়তার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। গতকাল(বুধবার)  রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এবং বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি আইন, ২০১৩-এর ১২ (১) ধারা অনুসারে রিয়ার এডমিরাল খন্দকার আক্তার হোসেন, এনইউপি, এনডিসি, পিএসসি, পিএইচডি (পি নং-৭৫৬)-কে বিএমইউ’র নতুন ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। তিনি পরবর্তী ৪ বছর বা অবসর গ্রহণের আগপর্যন্ত দায়িত্বে থাকবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপাচার্যসহ প্রশাসনের শীর্ষ পদগুলোতে বারবার রদবদল হওয়ায় দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। একজন কর্মকর্তা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বুঝে উঠতে শুরু করেন, তখনই তাকে বিদায় নিতে হয়। এই অস্থিরতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাঠামোতে স্থায়িত্ব আনতে বাধা দিচ্ছে।

প্রশাসনিক এই রদবদলে সেমিস্টার ফি কমানো, দ্রুত স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরসহ বিভিন্ন দাবি পূরণের বিষয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিকে এগিয়ে নিতে নতুন উপাচার্য এগিয়ে আসবেন এবং চলমান আন্দোলনের বিভিন্ন দাবির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করবেন।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পরিবর্তনের চেয়েও বড় প্রভাব পড়ে ডিন পরিবর্তনের ফলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি অনুষদের মধ্যে শুধুমাত্র আর্থ অ্যান্ড ওশান সাইন্স অনুষদেই গত ৩ বছরে ৪ জন ডিন পরিবর্তিত হয়েছেন। তাদের অধিকাংশই ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যেই দায়িত্ব ছেড়েছেন। অন্যান্য অনুষদেও ডিন পদে ঘন ঘন পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। যদিও আইন অনুযায়ী সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডিন হতে পারেন, তবে এখন পর্যন্ত সব ডিনই নৌবাহিনী থেকে আসা কর্মকর্তা।

এভাবে ঘন ঘন রদবদলের ফলে কর্মকর্তারা শিক্ষক, শিক্ষার্থী কিংবা কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার আগেই বদলি হয়ে যান, যা প্রশাসনিক এবং একাডেমিক পরিবেশে সমন্বয়হীনতা তৈরি করে। পাশাপাশি, বিশেষায়িত বিষয়ে শিক্ষক সংকট এবং একাডেমিক পরিকল্পনার অভাবও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।

প্রশাসনিক রদবদলের এই সমস্যা সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা জরুরি বলে মনে করছেন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা । যা অনুসরণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হওয়া উচিত। ব্যক্তি পরিবর্তনের সাথে  নীতিমালা পরিবর্তন হলে তা একাডেমিক এবং প্রশাসনিক জটিলতার সৃষ্টি করে।

আগামী মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভিসি হিসেবে রিয়ার এডমিরাল খন্দকার আক্তার হোসেন দায়িত্ব গ্রহণ করলেও জাতীয় নির্বাচনের পরে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে পুনরায় প্রশাসনিক রদবদলের সম্ভাবনা প্রবল। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা আবারও অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা অনেকের।


সর্বশেষ সংবাদ