সাত বছর ধরে ৫ম সমাবর্তনের আশায় ইবির হাজারো শিক্ষার্থী
- ওয়াসিফ আল আবরার, ইবি
- প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৫, ০৪:৩৮ AM , আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৫, ০৪:৪০ AM

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন যেন অমাবস্যার চাঁদ। প্রতিষ্ঠার পরে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে মাত্র ৪ বার। সর্বশেষ ২০১৮ সালে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির সমাবর্তন। সাত বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়টির হাজারো শিক্ষার্থী সমাবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছেন। নিয়মিত সমাবর্তন না হওয়ায় আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাচ্ছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মূল সনদপত্রের পরিবর্তে সাময়িক সনদপত্র নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হচ্ছে তাদের। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বপ্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৩ সালে। পরবর্তীতে ১৯৯৯ ও ২০০২ সালে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু তারপরেই নানা কারণে আবারো বন্ধ হয়ে যায় নিয়মিত সমাবর্তন। দীর্ঘ ১৬ বছর পর অবশেষে ২০১৮ সালে চতুর্থ সমাবর্তনের দেখা পায় ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। চতুর্থ সমাবর্তনে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার গ্র্যাজুয়েট, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রিধারী মূল সনদপত্র হাতে পান। চতুর্থ সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ ও ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত স্নাতকোত্তর এবং ২৩৬ তম সিন্ডিকেটে অনুমোদন প্রাপ্ত এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রিধারীরা অংশগ্রহণ করেন। তারপর থেকেই বন্ধ রয়েছে সমাবর্তন আয়োজন, মূল সনদ হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ৪৬ বছরে পদার্পণ করলেও সমাবর্তন হয়েছে মাত্র চার বার। সমাবর্তন শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, এটি তাদের পরিশ্রম ও অর্জনের স্বীকৃতি। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমাবর্তনের সুযোগ পেলেও আমরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত দ্রুততম সময়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবর্তনের তারিখ ঘোষণা করা।
বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এনামুল হক বলেন, নিয়মিত গ্রাজুয়েশন শেষ করে শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে গেলেও নিয়মিত সমাবর্তন না হওয়াটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বেমানান। সমাবর্তনটা শিক্ষার্থীদের একটা অধিকার। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতেও প্রায় নিয়মিত সমাবর্তন হয় কিন্তু ইবিতে কেন হয়না তা জানা নেই। দীর্ঘদিন সমাবর্তন না হওয়ায় জটিলতা বাড়ে, বাজেট কর্মসূচি সবকিছুই জটিল হয়। প্রতিবছর হয়ে গেলে সমস্যাগুলো এতো জটিল হতো না। সম্ভবত ২০১২-১৩ সেশন পর্যন্ত সমাবর্তন পেয়েছে, সামনে অনেক গুলো ব্যাচ অপেক্ষায় আছে। নিয়মিত সমাবর্তন হলে আমাদের সনদ কেন্দ্রিক সমস্যাটা হতো না।
বর্তমান শিক্ষার্থী ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রার শুরু থেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয় অবহেলার শিকার। এই প্রায় অর্ধশত বছরের ক্যাম্পাসটি মাত্র ৪ বার সমাবর্তনের সাক্ষী হতে পেরেছে। একজন বর্তমান শিক্ষার্থী হিসাবে এটি আমার জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক যেখানে ঢাবি প্রতিবছর তাদের গ্রাজুয়েটদের জন্য সমাবর্তন করতে পারে সেখানে ইবি কেন এত পিছিয়ে? শুধু সমাবর্তন এর জন্য আমরা আমাদের মূল সনদ পত্র তুলতে পারছি না, যা আমাদের পরবর্তী উচ্চা শিক্ষার জন্য অন্যতম প্রধান অন্তরায়। নতুন পুরাতন সকল ভিসি স্যারই আমাদের আশ্বাস দেন সমাবর্তনের কিন্তু সেই আশ্বাস আর বাস্তবায়ন হয় না। বর্তমান প্রশাসনের কাছে অনুরোধ যেন শুধু এবছর না, প্রতিবছর আমরা সমাবর্তন পাই।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা-নিয়ন্ত্রক ড. ওয়ালিউর রহমান পিকুল বলেন, সমাবর্তন না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের সনদ কেন্দ্রিক ভোগান্তি হচ্ছে এটা সত্য। নিয়মিত সমাবর্তন না হওয়ায় শিক্ষাজীবন শেষ করেও সদ্য গ্র্যাজুয়েটরা আনুষ্ঠানিকভাবে সনদ নিতে পারছেন না। অনেক সময় চাকরির প্রয়োজনে বা বিদেশে স্কলারশিপের ক্ষেত্রে আমরা মূল সনদ দিয়ে দেই কিন্তু এটার সংখ্যা খুবই কম। যেহেতু এখন দেশে একটি পরিবর্তিত পরিস্থিতি চলছে, সেক্ষেত্রে হয়তো সমাবর্তন আয়োজন কিছুটা দেরি হতে পারে। তবে প্রশাসন থেকে নির্দেশনা পেলে আমরা এব্যাপারে প্রস্তুত আছি৷
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, পৃথিবীটা অনেক দেশে ফ্যাকাল্টি কেন্দ্রিক সমাবর্তন হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বাংলাদেশের মতো বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক সমাবর্তন কোথাও হয় না। আমার ইচ্ছে ছিলো ডিসেম্বরের দিকে সমাবর্তন আয়োজন করার। কিন্তু বাংলাদেশে যেহেতু এখন নির্বাচনমুখী রাজনীতি চলছে, ডিসেম্বর জানুয়ারীর দিকে সমাবর্তন আয়োজন করা হয়তো সম্ভব হবে না। কারণ সমাবর্তনের সাথে আমন্ত্রিত অতিথি, সিকিউরিটি ইত্যাদি অনেক বিষয় জড়িত থাকে। তবে দ্রুতই সমাবর্তন আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।