ইবিতে প্রিন্টিং মেশিন অকেজো, বছরে ক্ষতি ১০ লাখ টাকা
- ওয়াসিফ আল আবরার, ইবি
- প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৩০ PM , আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৩০ PM

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) পাঁচ বছর ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে প্রায় ৭০ লাখ টাকায় কেনা প্রিন্টিং মেশিন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস অফিসের প্রিন্টিং কাজ, প্রশ্ন ছাপানো, ডায়েরি, ক্যালেন্ডার ও অন্যান্য বিল রশিদ প্রিন্ট করাতে হয় বাইরে থেকে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবছর ক্ষতি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা। অপর দিকে কর্মহীন সময় কাটিয়েও নিয়মিত বেতন-ভাতা নিচ্ছেন প্রেস অফিসের কর্মচারীরা৷
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেস অফিসের জন্য ৭০ লাখ টাকায় কেনা হয়েছিল প্রিন্টিং মেশিন। ২০২০ সালে করোনাকালীন মেশিনটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অকেজো হয়ে পড়ে। এর পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিন্টিং কার্যক্রম চলছে বাইরের প্রেস থেকে। এতে ভর্তিপরীক্ষার প্রশ্নপত্র অন্য স্থান থেকে প্রিন্ট করার ফলে নিরাপত্তাঝুঁকিসহ গুনতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।
প্রেস অফিসের তথ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ অফিস, সান্ধ্যকালীন কোর্স, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, পরিবহন অফিস, একাডেমিক শাখাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রিন্টিং কার্যক্রম এই প্রেস অফিসের আওতাভুক্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের বিল রশিদ, বালাম শিট, প্রশ্ন, খাতা, ক্যালেন্ডার, ডায়েরিসহ নানা কাজে প্রেস অফিসের মাধ্যমে মাসে ১ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৭ লাখ টাকার কাজ হয়ে থাকে। এর সবই করাতে হচ্ছে বাইরের প্রেস থেকে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবছর ক্ষতির পরিমাণ ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন: মারা গেলেন আত্মহত্যার চেষ্টা করা জবি শিক্ষার্থী
অন্যদিকে দীর্ঘদিন বন্ধ থেকে অকেজো হওয়া মেশিনটি বিদেশি ও দামি হওয়ায় মেরামত করতেও গুনতে হবে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা। অকেজো হওয়ার পর থেকে মেরামতের জন্য অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সময় নেওয়া হলেও পরবর্তী সময়ে তা আর মেরামত করানো হয়নি। এদিকে সময় দীর্ঘায়িত হওয়ায় মেশিনটি ধীরে ধীরে মেরামতের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রায় ৭০ লাখ টাকায় কেনা মেশিনটি এখন কেজি দরে বিক্রির উপক্রম হয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে প্রেস প্রশাসক অধ্যাপক ড. এ কে এম মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘২০২০ সালে প্রিন্টিং মেশিন নষ্ট হয়। তৎকালীন প্রেস প্রশাসকও চেষ্টা করেছিলেন মেশিন ঠিক করার। এত দিন যতগুলো রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে, সেগুলো মনগড়া মনে হওয়ায় আমি ঢাকা থেকে দুজন ইঞ্জিনিয়ার এনে যাচাই করিয়েছি। তারা মেশিনটি পরিষ্কারের জন্য ৮০ হাজার টাকার একটি বাজেট দিয়েছেন। সেটি প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। মেশিনটি পরিষ্কারের পর আসলে পূঙ্খানুপুঙ্খ সমস্যাটা বোঝা যাবে।’
আরও পড়ুন: কুয়েটে হামলা: বহিষ্কার হলেন যুবদল নেতা
আর্থিক ক্ষতির বিষয়ে মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘জনবলসহ সব সুবিধা থাকার পরও শুধু মেশিন নষ্ট থাকায় যাবতীয় প্রিন্টিং কাজ বাইরে থেকে করাতে হয়। এদিকে আমাকে কর্মচারীদের বিনা কাজে বেতন দিতে হচ্ছে। ৩৬টি বিভাগেই খাতা, খাম, প্যাড নিয়মিত দরকার হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওরিয়েন্টেশনে ম্যাগাজিন, শিক্ষকদের থিসিস, বই ছাপানোর প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া গোপনীয় কাগজপত্রও ছাপাতে হয়। মেশিনটা ভালো থাকলে অফিসের জনবলকে কাজে লাগাতে পারতাম। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ খরচ বেঁচে যেত।’
আরও পড়ুন: স্থানীয় নাকি জাতীয় নির্বাচন, কোনটা আগে চান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রেস অফিসের প্রিন্টিং মেশিনটা অনেক দিন ধরে অকেজো পড়ে রয়েছে বলে জেনেছি। এ প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর মেশিনটা কীভাবে আবার চালু করা যাবে, সে বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ জন্য ঢাকা থেকে টেকনিশিয়ান এনে মেরামতের উপযোগিতা দেখানো হচ্ছে। টেকনিশিয়ানদের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে মেশিনটা সচল করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’