কলেজ সভাপতির দায়িত্ব পেলেন জুলাই আন্দোলনে হামলার আসামি, এলাকাজুড়ে সমালোচনা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:১৫ PM , আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৩:৪৭ PM
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় একাধিক মামলার আসামি ও আওয়ামী লীগপন্থী এক সমর্থককে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী হাজী মো. নুরুল হক ডিগ্রি কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি মনোনীত করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এরপর কলেজটির এডহক কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অধ্যাপককে এই দায়িত্ব দিতেও অনুরোধ করা হয়েছে।
সৈয়দ হারুন উর রশীদ নামে স্থানীয় এক শিক্ষানুরাগী কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি মো. এনামুল হকের মনোনয়ন সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, অগ্রহণযোগ্য ও অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে অভিযোগপত্রে বলেন, এনামুল হক বিগত ২০১৫ সালে অনিয়মের মাধ্যমে কলেজের সভাপতি মনোনীত হওয়ার পর থেকে কলেজ প্রশাসনে তার লাগামহীন স্বেচ্ছাচারিতা, সীমাহীন দুর্নীতি, কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে প্রভাব বলয়ে রেখে জিম্মি করা, ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেন। তিনি কলেজে একচ্ছত্র পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে কলেজের নিয়মতান্ত্রিক প্রশাসনিক ব্যবস্থার ক্ষতি করেছেন, সেইসঙ্গে কলেজের শিক্ষার পরিবেশকে চরমভাবে বিনষ্ট করেছেন।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, তার মেয়াদকালীন দীর্ঘ ৯ বছর ধরে অধ্যক্ষ নিয়োগ না দিয়ে কলেজকে অধ্যক্ষহীন অবস্থায় রেখে নিজে সব কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন। তাছাড়া তিনি একজন কট্টরপন্থী আওয়ামী লীগ সমর্থক হওয়ায় বিগত স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে কলেজকে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের মত ব্যবহার করে শিক্ষদেরকে দলীয় কর্মসূচি পালনের আতুড়ঘরে পরিণত করেছেন।
জানা যায়, ১৯৯২ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন বোয়ালখালী উপজেলার তৎকালীন স্থানীয় ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হাজী মো. নুরুল হক সওদাগার। এরপর প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৫ সালে এমপিওভুক্ত করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, গত ৯/১০ বছরে হাজী মো. নুরুল হক সওদাগারের বড় ছেলে এবং কলেজের সভাপতি এনামুল হক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের মত ব্যবহার করেছেন। আর এ কাজে তাকে সহায়তা করেছেন তার ছোট ভাই জাহিদুল হক, যিনি নৌকা প্রতীকে উপজেলাটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। দক্ষিণ চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের এই উপদেষ্টার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে নিয়মবহির্ভূভাবে ১০ বছর ধরে কলেজের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এনামুল হক।
এদিকে, গত ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের আগ পর্যন্ত এনামুল হক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তবে ২৯ আগস্ট জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি বা অ্যাডহক কমিটি বাতিল করা হয়েছে এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলেজটিতে এডহক কমিটি করা হলে বিভিন্ন কলাকৌশল অবলম্বন করে ফের সভাপতির দায়িত্ব পান এনামুল হক। এই এডহক কমিটির মেয়াদ আগামী ২৪ মার্চ পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে নিয়মিত গভনিং বডি গঠনের কার্যক্রম অবশ্যই শেষ করতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, এনামুল হক সশরীরে উপস্থিত থেকে জুলাই বিপ্লবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতাকে নিষ্ঠুরভাবে দমনে চেষ্টা করেছেন। পরবর্তীতে তার নামে একাধিক মামলাও রুজু হয়েছে। সরকারকে দ্রুত এই প্রজ্ঞাপন বাতিল করে নতুন একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে একজন স্বনামধন্য শিক্ষাবিদের নেতৃত্বে কলেজের কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা নিতে হবে। এনামুল হক যদি কলেজের সভাপতি হিসেবে কাজ করেন, তবে এটি কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। এই পরিস্থিতি আরও সংকটজনক হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন অভিযোগকারী সৈয়দ হারুন উর রশীদ।
জানা যায়, হাজী মো. নুরুল হক সওদাগার ব্যক্তি জীবনে তিনটি বিয়ে করেছেন। প্রথম ঘরে তিনজন ছেলে সন্তানদের মধ্যে যথাক্রমে রয়েছে মো. এনামুল হক, মো. জাহিদুল হক ও মো. জসিমুল হক। দ্বিতীয় ঘরে দুইজন ছেলে সন্তানদের মধ্যে যথাক্রমে রয়েছে মো. নেসারুল হক ও মো. সাইদুল হক। তবে অপরটিতে কোনো পুত্র সন্তান ছিলেন না।
মো. নেসারুল হক বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে এনামুল কলেজে যা বলতো তাই হতো। ভুল বললে ভুল, সঠিক বললে সঠিক। আওয়ামী লীগ করার কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস করত না। দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে কলেজের বিভিন্ন জনকে হয়রানি করত সে। ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনি কলেজের কমিটিতে রয়েছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধানে এতোদিন কেউ থাকতে পারে কী না আমার জানা নেই। সে গভর্নিং বডিতে আসার ৬ মাস পরেই অধ্যক্ষকে সরিয়ে দেন।
তিনি আরও বলেন, তাকে সভাপতি মনোনয়নের পর থেকেই কলেজে শিক্ষার পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সে কলেজে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যক্রম ও নির্বাচন সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। সে কলেজে শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগ করতে বাধ্য করত। বোয়ালখালী ছাত্রলীগের কার্যক্রমও কলেজ থেকে পরিচালিত হতো। কলেজ থেকে আওয়ামী দোসরদের বিতাড়িত করার দাবিও জানান তিনি।
কলেজটির উপাধ্যক্ষ মো. কায়সার বলেন, তিনি (এনামুল হক) দীর্ঘদিন ধরে কলেজের সভাপতি রয়েছে এটা সত্য। আসলে সভাপতি মনোয়ন দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আমরা তো এখানে চাকরি করি, এ ব্যাপারে আমরা সেরকম কিছু জানি না।
বিষয়টি নিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফখরুদ্দীনকে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেনি।
এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ জানান, এ বিষয়টি তার জানা নেই। তবে এরকম কাউকে মনোনয়ন দেয়া হলে তা বাতিল করা হবে।