একক নয়, সাত কলেজের সমন্বিত বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে এবার তিতুমীর শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:২১ PM , আপডেট: ৩০ নভেম্বর -০০০১, ১২:০০ AM

রাজধানীর সরকারি সাতটি বড় কলেজের জন্য পৃথকভাবে ‘স্বতন্ত্র’ একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার পরিকল্পনা করছে সরকার। ইতিমধ্যে সেটির নামও প্রস্তাব করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজের নেতৃত্বাধীন কমিটি।
তবে ‘স্বতন্ত্র’ এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে তিতুমীর কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। একক নয়, একটি পক্ষ সাত কলেজ নিয়ে ‘স্বতন্ত্র’ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে থাকার দাবিতে ইউজিসি চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানের কাছে এই স্মারকলিপি জমা দেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ২০১৭ সাল থেকে সরকারি তিতুমীর কলেজসহ অন্য ৬টি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি ছিলো। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ অধিভুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয়। যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল, সেটা দীর্ঘ ৮ বছরেও বাস্তবায়ন করতে না পারায় শিক্ষার্থীরা অধিভুক্তি বাতিলের এ দাবি তুলেছেন। একইসঙ্গে অধিভুক্তি বাতিলের পর শিক্ষার্থীরা সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানায়। যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ এখনও চলমান রয়েছে।
‘‘অধিভুক্তি বাতিলের পর সাত কলেজের সমন্বয়ে শিক্ষার্থীরা যেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি তুলেছে, সেখানে তিতুমীর কলেজের কিছু শিক্ষার্থী একক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি শুরু করেছেন। ‘তিতুমীর ঐক্য' নামে একটি ব্যানারের অধীনে তারা সরকার ও জনগণকে জিম্মি করে এ আন্দোলন শুরু করেন। আমরা তিতুমীর কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলতে চাই, তাদের এ অযৌক্তিক দাবি ও আন্দোলনে আমাদের কোনো ধরনের সমর্থনও নেই, অংশগ্রহণও নেই।’’
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, এ অযৌক্তিক আন্দোলনে আমাদের সমর্থন না থাকার কথাটাও স্বাধীনভাবে বলার সুযোগ পাচ্ছি না। আমরা কথা বলতে গেলেই তারা আমাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। এখনো আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমরা তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা সাত কলেজের সমন্বয়ে যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হচ্ছে, সেখানে থাকতে চাই। আমরা চাই না, কাউকে একক সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে সারাদেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শান্তিশৃঙ্খলা পরিবেশ বিনষ্ট হোক ।
‘‘আমরা দেখেছি, তিতুমীর কলেজের কিছু শিক্ষার্থী একক বিশ্ববিদ্যালয়ের অযৌক্তিক দাবি তুলে ঐতিহ্যবাহী এ কলেজকে দেশবাসীর কাছে হাসি-তামাশার প্রতিষ্ঠান হিসেবে উপস্থাপন করেছে। যারা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে, তারা তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে এসব কর্মকাণ্ড করছে। এদের বেশিরভাগই বিভিন্ন ক্লাবের শীর্ষ নেতা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্য। আধিপত্য বিস্তারই তাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল।’’
স্মারকলিপিতে বলা হয়, তারা একক বিশ্ববিদ্যালয়ের অযৌক্তিক দাবি আদায়ে কখনো বাস ভাঙচুর করছে, কখনো ট্রেন লাইন বন্ধ করে ট্রেনে পাথর ছুড়ে নারী ও শিশুকে রক্তাক্ত করছে আবার কখনো নিজেরা নিজেরা কলেজের নামের উপর বিশ্ববিদ্যালয় লেখা ব্যানার ঝুলিয়ে দিচ্ছে। তাদের এসব কর্মকাণ্ড দেশবাসীর সামনে তিতুমীর কলেজকে একটা জোকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে উপস্থাপন করেছে। যেটা আমাদের মত সাধারণ শিক্ষার্থীদের চরম হতাশায় ফেলে দিয়েছে।
‘‘তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলে যুক্তি দেয়। তারা বলে, জগন্নাথ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় হলে তিতুমীর কলেজও বিশ্ববিদ্যালয় হতে হবে। অথচ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এখন ক্যাম্পাস সংকটে রয়েছে। তারা পুরান ঢাকার ক্যাম্পাস ছাড়াও এখন ঢাকার বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। অন্যদিকে, আবাসন সংকট, শিক্ষকের অপ্রতুলতাসহ নানা সমস্যা তো রয়েছেই। আমরাও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে উদাহরণ হিসেবে নিয়ে তিতুমীর কলেজকে একক বিশ্ববিদ্যালয় করা হোক, সেটা চাই না।
স্মারকলিপিতে চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্যে করে বলা হয়, আমরা সমন্বিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে থাকবো। আর আপনারা যদি একটি অংশের শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে তিতুমীরকে ছাড়া সমন্বিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা দেন, তাহলে আমাদের সে বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্তি করার ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা আশা করবো, কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবি বিবেচনা করবেন। যদি তারা আমাদের দাবি বিবেচনায় না নেন, তাহলে আমরা মাঠ পর্যায়ে কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
এ বিষয়ে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, তিতুমীর কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ইউজিসিতে এসে তাদের কথা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, সাত কলেজের সমন্বয়ে যে বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, তারা সেখানে থাকতে চান। তারা তিতুমীর কলেজকে একক সুবিধা দেওয়ার বিপক্ষে। এক্ষেত্রে তারা সারা দেশের অন্যান্য সরকারি কলেজগুলোর যুক্তি দেখিয়েছেন।
‘‘আমরা দেখছি, বিশ্ববিদ্যালয় ইস্যু নিয়ে তিতুমীর কলেজে স্পষ্ট দুটি পক্ষ তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, এমন পরিস্থিতি নিয়ে যেন কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে। ইউজিসি অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে।’’