সেশনজট নিরসনসহ ১০ দাবিতে আন্দোলনে ইবির সমাজকল্যাণ বিভাগের শিক্ষার্থীরা
- ইবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:১৩ AM , আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:৫৫ PM
শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষক সংকট, সেশনজট নিরসনসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সমাজকল্যাণ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। শনিবার (১১ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন চত্বরে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন তারা। এ সময় বিভিন্ন দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে স্লোগান দেন তারা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের প্রতি বছর একটি করে সেমিস্টার পরীক্ষা নেওয়া হয়। রেজাল্ট প্রকাশ করতে ৭-৮ মাস লেগে যায়। বিভাগে বর্তমানে সাতটি ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষা চলমান। কিন্তু এর বিপরীতে মাত্র একটি ক্লাসরুম এবং তিনজন শিক্ষক রয়েছেন। ঠিকমতো ক্লাস পরীক্ষা হয় না। ফলে তারা দীর্ঘ সেশনজটে পড়ে আছেন।
২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বাধন বলেন, ‘আমরা আমাদের দাবির অতি দ্রুত বাস্তবায়ন চাই। আমরা আর সেশনজটে থাকতে চাই না। আমাদের বিভাগে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ দেওেয়া হোক এবং শ্রেণিকক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হোক। এসব বিষয়ে আজকেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস চাই। আমরা আন্দোলন ছেড়ে ক্লাসরুমে ফিরে যেতে চাই।’
এ সময় তারা ‘শিক্ষক নিয়ে তালবাহানা, আর না আর না’, ‘অন্য বিভাগ স্বর্গে, আমরা কেন মর্গে’, ‘অন্য বিভাগ ৪ বছরে, আমরা কেন ৭ বছরে’, ‘আজকেই চাই সমাধান, সেশনজটের অবসান’, ‘ক্লাসরুম ছাড়া ক্লাস, আর না আর না’, ‘শিক্ষকদের রোষানলে, আর না আর না’, ‘পরীক্ষা কেন ধীরগতি, কি করেন সভাপতি’-সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
আরো পড়ুন: ৫ মাস পর জুলাই আন্দোলনে আহত আরেকজনের মৃত্যু
তাদের দাবিগুলো হলো- নির্দিষ্ট রুটিন প্রণয়ন করে প্রতিটি কোর্সের ন্যূনতম ক্লাস নিতে হবে; সেশনজট নিরসনে তিন মাসের মধ্য সেমিস্টারের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে; পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া এবং শিক্ষক নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত গেস্ট টিচার দ্বারা ক্লাস নিতে হবে; পর্যাপ্ত ক্লাসরুমের ব্যবস্থা করা, সেমিনার লাইব্রেরী বরাদ্দ দেওয়া, ইনকোর্স সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার পরে নিতে হবে এবং নম্বর প্রদান করতে হবে; ট্রেজারার অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলমকে বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দিতে হবে; আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্য পুর্ণঙ্গ অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে; প্রতি বছর বিভাগ থেকে শিক্ষা সফরে যেতে হবে এবং আন্দোলনের পরবর্তী প্রভাব কোনো শিক্ষার্থীর উপরে যেন না পড়ে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে বিভাগের সভাপতি আসমা সাদিয়া রুনা বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে আলোচনা করছি। আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের ডিপার্টমেন্টের মতো মানহীন আর কোন ডিপার্টমেন্ট আছে বলে মনে হয় না। এতগুলো ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জন্য মাত্র ১ টা ক্লাসরুম, সময়মতো পরীক্ষা হয় না, রেজাল্ট দিতে দেরি হয়। ফল প্রকাশে দেরি হওয়ায় অন্যান্য পরীক্ষা নিতেও দেরি হয়। সবমিলিয়ে যাচ্ছেতাই অবস্থা।
নাম প্রকাশ না করার ও মুখে কালো মাস্ক ব্যবহারের কারণ জানতে চাইলে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, সেশনজট এত প্রকট হওয়ার অনেক আগে থেকেই তারা এসব সমাধানের জন্য শিক্ষকদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু যেসব শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় দাবীদাওয়া নিয়ে শিক্ষকদের কাছে গিয়েছে পরবর্তীতে তাদের ফলাফল রহস্যজনকভাবে খারাপ হয়েছে। এজন্য নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে তাদের এই পদক্ষেপ।
পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী এবং ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম শিক্ষার্থীদের দাবীদাওয়া শোনেন এবং বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। এসময় শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে আরো দুইটি ক্লাসরুম বরাদ্দ দেন এবং বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ট্রেজারার দায়িত্ব নেন। এছাড়াও, দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ ও অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রণয়নের কাজ শুরুর আশ্বাস দিলে বেলা ১ টার দিকে আন্দোলন স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, আমি গাড়ি থেকে নেমে অফিসে আসার আগে তাদের সাথে কথা বলেছি তাদের দাবিগুলো শুনে আমার সবগুলো দাবি যৌক্তিক মনে হয়েছে। পরবর্তীতে আমি বিভাগের শিক্ষকদের ডেকে কথা বলেছি। তিনজনেরই বয়স কম হওয়ায় তারা পরীক্ষা পদ্ধতি, রেজাল্ট দ্রুত প্রকাশ করা এবং বিশেষ করে সেশনজট নিরসনের উপায় সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। শিক্ষক স্বল্পতা, ক্লাসরুমের সংকট সহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে তারাও যথাযথ ভাবে বিভাগ পরিচালনা করতে পারেনি বলে জানিয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে ভাইস চ্যান্সেলরের অনুমতি সাপেক্ষে ট্রেজারার মহোদয় কে বিভাগের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। আমরা সবাইকে বলব যেন সবাই সবার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে।