বাদ অধ্যাপক, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় ‘এক্সপার্ট’ ইউজিসি চেয়ারম্যানের পিএস

মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও ইউজিসি লগো
মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও ইউজিসি লগো  © সংগৃহীত

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় ‘এক্সপার্ট (পরীক্ষক)’ হিসেবে অধ্যাপককে বাদ দিয়ে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানের একান্ত সচিবকে (পিএস)। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠার পর এই পদ থেকে একান্ত সচিবের নিয়োগ বাতিল করার কথা বলেছে প্রশাসন। এমনটি ঘটেছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের পরীক্ষায়।

জানা গেছে, আগামী ২ ডিসেম্বর ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৫ম সেমিস্টারের (L-3, S-I) Presentation and Argumentation Skill কোর্সের ব্যবহারিক পরীক্ষার বহিঃস্থ পরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজের একান্ত সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে। এর জন্য বাদ দেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সয়েল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কবিরুল ইসলামের নাম। গত ২৮ অক্টোবর এনভার্নমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অনুষদ থেকে বিষয়টি অনুমোদন দেয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বহিঃস্থ পরীক্ষক নিয়োগের জন্য ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ নাম প্রস্তাব করে বিশ্ববিদ্যালয়টির সয়েল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কবিরুল ইসলাম, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমেদ পারভেজ এবং ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. আয়েশা আক্তারের নাম। নিয়ম অনুযায়ী অনুষদ প্রস্তাবিত যেকোনো একজন অধ্যাপকের নাম অনুমোদন দেয়ার কথা থকলেও অনুষদ ইউজিসি চেয়ারম্যানের একান্ত সচিবকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ দেয়।

‘আমরা সেটা বাতিল করেছি। আমার প্রচেষ্টা হলো যতটা সুন্দরভাবে সবকিছু সম্পন্ন করা যায়। যেহেতু বাতিল হয়েছে, আমরা এটা নিয়ে আর কথা বলতে চাই না— অধ্যাপক কাজী রফিকুল ইসলাম, উপাচার্য, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় 

এ বিষয়ে ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সামসুজ্জোহার সাথে কথা হলে তিনি জানান, ‘আমি বিষয়টি অবগত নয়। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন অধ্যাপকের নাম প্রস্তাব করি। কিন্তু ডিন অফিস প্রস্তাবিত নামের বাইরে একজনকে যুক্ত করার বিষয়ে বোধগম্য নয়। আপনি তাদের সাথে কথা বলুন।’

ইউজিসি চেয়ারম্যানের একান্ত সচিবকে বিশেষজ্ঞ পদে নিয়োগের চিঠিটি স্বাক্ষর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়টির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো. ইফতেখারুল আলম বলেন, ‘একজন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাজ হলো এ ধরনের কমিটির লিস্ট উপাচার্যের অনুমতিতে নিয়ে স্বাক্ষর করা। কমিটির প্রস্তাবনা দেয় এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অনুষদ। অনুমোদন দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। সুতরাং উপাচার্য এবং ডিন অফিস এটার বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারবে।’

আরও পড়ুন: প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের বই বছরের শুরুতে পেলেও মাধ্যমিকের কবে?

এছাড়াও আগামী ২৮ নভেম্বর বিভাগটির ৫ম সেমিস্টারের (L-3, S-I) Evacuation, Search and Rescue কোর্সের ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এতেও একজন অধ্যাপককে বাদ দিয়ে বহিঃস্থ পরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সিনিয়র ম্যানেজার আদিত শাহ দুর্যয়কে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. নুরুল আমিন প্রতিবেদকের কাছে পালটা প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, ‘আমি আপনার কাছে জানতে চাই, আপনি এই গোপনীয় নথি কোথায় পেলেন? যেই পরীক্ষা এখনো অনুষ্ঠিত হয়নি সেটার তথ্য আপনাকে কে দিয়েছে? আপনি জানেন এই কোর্সের কন্টেন্টগুলো কি?’

অধ্যাপক নুরুল আমিন আরও যোগ করেন, ‘একান্ত সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমানের প্রফেশনাল অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি মনে করি Presentation and Argumentation Skill কোর্সের ব্যবহারিক পরীক্ষায় তিনি শিক্ষার্থীদের সেই অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারবে।আরেকটি কোর্সে রেডক্রস সোসাইটির একজন সদস্যকে রাখা হয়েছে। বিষয়গুলো তাদের অভিজ্ঞতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আর এটার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।’

ইউসিজি সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যানের এই একান্ত সচিব বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। এরপরে ধাপে ধাপে পদোন্নতি পেয়ে তিনি চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব হয়েছেন। অভিযোগ আছে ইউজিসির এই কর্মকর্তাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যোগসাজশে বহিঃস্থ পরীক্ষক পদে নিয়োগ করা হয়।

একজন অধ্যাপকের পরিবর্তে ইউজিসির কর্মকর্তা হয়েও বিশেষজ্ঞ পদে নিয়োগ পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। তারা আমাকে না জানিয়েই পদটিতে রেখেছে। ইতোমধ্যে বিষয়টা রিজেক্ট করেছি। এ সেক্টরে আমার তেমন অভিজ্ঞতাও নেই।’ তবে ইউজিসির অন্য কর্মকর্তা ছাড়া চেয়ারম্যানের পিএস হয়েও যুক্ত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তারা কেন আমাকে পছন্দ করেছে, সেটা তারা ভালো বলতে পারবে। এটা সমস্যা হবে দেখেই আমি না করেছি।’

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম জানান, ‘আমরা আগের লিস্ট পরিবর্তন করেছি। ইউজিসি চেয়ারম্যানের পিএসের নিয়োগও বাতিল হয়েছে। তবে রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্য আছেন, কারণ শিক্ষার্থীরা তাদের কাছে সংশ্লিষ্ট কোর্সের ইন্টার্নশিপ করায় তাদেরকে এখানে রাখাটা আমরা জরুরি মনে করেছি।’

ইউজিসি চেয়ারম্যানের পিএস কোন যোগ্যতায় বহিঃস্থ পরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, ‘আমরা সেটা বাতিল করেছি। আমার প্রচেষ্টা হলো যতটা সুন্দরভাবে সবকিছু সম্পন্ন করা যায়। যেহেতু বাতিল হয়েছে, আমরা এটা নিয়ে আর কথা বলতে চাই না।’


সর্বশেষ সংবাদ