সহপাঠীরা ক্লাসে ফিরলেও ফেরেনি বেরোবির আবু সাঈদ

আবু সাঈদ
আবু সাঈদ  © টিডিসি ফটো

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) দীর্ঘ তিনমাস পর শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরলেও ফেরেনি আবু সাঈদ। এতদিন পর তার সহপাঠীরা ক্লাসে একত্রিত হওয়ার পরও হারিয়ে ফেলেছেন আনন্দ অনুভূতি। আবু সাঈদের হত্যার বিচার দাবি করেন সহপাঠীসহ বিশ্ববিদ্যালয়টির সব শিক্ষার্থী।

গত বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খোলার পর শিক্ষার্থীরা হলে-মেসে ফিরতে শুরু করেছে। কিন্তু আবু সাঈদের রুম এখনো ফাঁকা। এটা মেনে নিতে পারছে না তার সহপাঠী ও বন্ধুরা।

ক্লাসে বসেও আবু সাঈদকে কথা মনে করেছে তার সহপাঠীরা। সাঈদের খালি চেয়ারটি দেখে সবার চোখের জল ঝরছে। সহপাঠীরা বলছেন, ‘আবু সাঈদকে ছাড়া ক্লাস আর আগের মতো হবে না। তার অভাবে ক্যাম্পাসটা নিস্তব্ধ মনে হচ্ছে।’

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব আহমেদ বলেন, ‘এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভিসি নিয়োগ হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম আরম্ভ হয়েছে। আমরা ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরেছি। কিন্তু, বেদনার বিষয় হচ্ছে আমাদের ভাই শহিদ আবু সাঈদ আর কখনোই ক্লাসে ফিরবেন না। তাকে ছাড়া বিভাগে এসে ক্লাস করে কতটা শূন্যতা অনুভব করি, তা ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়। দুই হাত টান করে বুক চিতিয়ে দেওয়া আবু সাঈদকে কাছ থেকে যেভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, সেই দৃশ্য মনে হলে কিছুটা নিস্তব্ধ হয়ে যাই, নির্বাক হয়ে যাই। 

আরও পড়ুন: ১৮ দিন ধরে বন্ধ ইবির বঙ্গবন্ধু হলের ডাইনিং, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

তিনি বলেন, ‘আবু সাঈদ সর্বদা বিপদ-আপদে পাশে থাকতেন, যেকোনো বিষয়ে সাহায্য সহযোগিতায় এগিয়ে আসতেন, সেই আবু সাঈদ আজ আমাদের মাঝে নেই। আজ ক্লাসে যে সিটে তিনি আসন গ্রহণ করতেন, সেই সিটও আবু সাঈদের শূন্যতা অনুভব করছে। সেই সিটটিও একা পড়ে আছে। তার সেই বুক পেতে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য মনের কোণে ভেসে ওঠে, হৃদয়টা হাহাকার করে ওঠে। আর কখনোই আবু সাঈদকে আমরা ক্যাম্পাসে দেখতে পারবো না, এই শূন্যতা আমাদের অন্তরে আজীবন থাকবে।’

ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া তাহসীন বলেন, ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। এই স্বাধীনতার প্রথম শহিদ আমাদের ক্যাম্পাসে বড় ভাই আবু সাঈদ। স্বৈরাচার পতনের পর দেশ স্বাধীন হলেও আবু সাঈদ আর ফিরলেন না। বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছে, ক্যাম্পাসে ফিরে এসেছি আমরা। কিন্তু ৭৫ একরের এই ক্যাম্পাসে আবু সাঈদকে আর কখনোই দেখা যাবে না। আমাদের সহপাঠী, শিক্ষক, বন্ধুরা সবাই আছে, শুধু নেই আবু সাঈদ। 

‘আবু সাঈদের স্মৃতি আজও বেরোবিয়ানদের মনে হাহাকার করছে। তার হত্যাকারীরা এখনো প্রাপ্ত সাজা পায়নি, যা বেরোবিয়ানদের জন্য আরেকটি বেদনার বিষয়। আবু সাঈদ হয়ত আর ফিরবে না, কিন্তু তার হত্যার ন্যায়বিচার হলে কিছুটা স্বস্তি মিলবে। তবে তার অনুপস্থিতির শূন্যতা কখনো পূরণ হবে না। আবু সাঈদ চিরকাল বেরোবিয়ানদের মাঝে বেঁচে থাকবেন।’

e873b877-bd98-4d45-8960-6edec71d60b0

শিক্ষার্থী ফাতিহুল ইসলাম শোভন বলেন, ‘শহিদ আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। তার নেতৃত্বে এই আন্দোলন দেশের মানুষের স্বাধীনতা ফেরানোর পথে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে দাঁড়ায়। দীর্ঘ তিনমাস ক্লাস বন্ধ থাকার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে। কিন্তু সেই ক্লাসে আর সাঈদ নেই। তার শূন্যতায় আমরা সবাই শোকাহত। তার ন্যায়বিচার এখনো সম্পন্ন হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, শহিদ আবু সাঈদের হত্যার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করে তার আত্মার শান্তি নিশ্চিত করা হোক।’

শিক্ষার্থী নুসরাত তাবাসসুম বলেন, ‘আবু সাঈদ ভাইকে আমরা সবসময় বিপদে-আপদে পাশে পেতাম। কিন্তু আজ তাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। ১৬ জুলাই হঠাৎ করেই তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। মেসে তার জিনিসপত্রগুলোও ঠিক আগের মতোই রয়ে গেছে। অথচ তিনি আর কখনো ফিরে আসবেন না। ক্যাম্পাস, ক্লাস, মেস—সব জায়গাতেই তার অনুপস্থিতি আমাদের মনে কষ্টের স্মৃতি হয়ে আছে। 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence