মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাসে সিট বরাদ্দ দিচ্ছে ঢাকা কলেজ

মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে
মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে  © টিডিসি ফটো

ঢাকা কলেজের আটটি ছাত্রাবাসে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য মেধার ভিত্তিতে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়মিত ছাত্রদের সিট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। ছাত্রাবাসের মোট ৮৫৫ সিটের বিপরীতে প্রতিটি বিভাগ থেকে বিভিন্ন বর্ষের ৪৫ জনের মধ্যে সিট বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। 

রবিবার (২৫ আগষ্ট) কলেজের স্ব স্ব বিভাগে ছাত্রাবাসে আবেদনকৃত শিক্ষার্থীদের বাছাইয়ে মৌখিক সাক্ষাৎকারের আয়োজন করা হয়। এতে বৈধ অনিয়মিত/নিয়মিত শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে অংশগ্রহণ করেন। সকল বিভাগের সাক্ষাৎকার আগামী ২৭ আগষ্টের মধ্যে শেষ হবে বলে কলেজ সূত্র থেকে জানা যায়। 

এ বিষয়ে ইংরেজী বিভাগের শিক্ষার্থী মুরাদ হোসাইন বলেন, এটা ভালো সিদ্ধান্ত। তবে এই আন্দোলনে এমন অনেক ছেলে ছিলো, যারা সরাসরি আমাদের বিরুদ্ধে (সাধারণত শিক্ষার্থীদের) আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। নানা ভাবে আমাদের হেনস্তা করে। তারাও সিটের জন্য আবেদন করছে। এমনও তো হতে পারে য়ারা ছাত্রলীগের পক্ষে থেকে আমাদেরকে হেনস্তা করেছে তাদের একটা বিশাল গোষ্ঠী সিট পাবে। তখন আর আমাদের কষ্টটা বিফলে গেলো না? মার খেলাম অপমানিত হলাম হলের সিটও হারালাম বিষয়টা কেমন না? আমার ডিপার্টমেন্টের এমন অনেক ছেলে সিটের জন্য আবেদন করছে, যারা ১৬ তারিখে আমাদেরকে রামদা নিয়ে মারতে আসছে। এখন ওই ছেলেগুলো যদি সিট পায় তাহলে আমাদের কি হবে? হোক তারা গরীব কিংবা অসচ্ছল পরিবারের। তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষের উচিৎ সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সিট বিতরণ করা।

ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী তাহসিন হাসিব বলেন, যেহেতু প্রতিটি ক্যাম্পাস ছাত্র রাজনীতি মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে তাই আবাসিক হলগুলাতেও এখন সংস্কার প্রয়োজন। অছাত্র ও আদু ভাইদেরকে বহিষ্কার করে মেধাবী ও বৈধ ছাত্রদের হলের সিট নিশ্চিত করলে অসচ্ছল ও মেধাবী ছাত্ররা তাদের একাডেমিক পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারবে। ঢাকা কলেজের আবাসিক হলগুলোতে মেধার ভিত্তিতে সিট বণ্টন করা হচ্ছে যা কার্যকরী পদক্ষেপ। এভাবে মেধার ভিত্তিতে মৌখিক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সিট বণ্টন হলে সেখানে কোন অছাত্র ও আদু ভাইয়েরা সিট দখল করে সাধারণ ছাত্রদেরকে হয়রানি করতে পারবে না। ভবিষ্যতে যাতে কোন ছাত্র রাজনীতি কোনো ভাবে ঢাকা কলেজকে প্রভাবিত করতে না পারে সেটাও কলেজ প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে।

মৌখিক সাক্ষাৎকার বিষয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক রহমতুল্লাহ রাজন বলেন, বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের পারিবারিক অবস্থা খুবই খারাপ। আমার খুব কষ্ট লাগছে যদি সবাইকে সিট দিতে পারতাম, কিন্তু ছাত্রাবাসে সিটের সংখ্যা খুবই সীমিত। আমরা মেধার ভিত্তিতে বৈধ শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দ দিবো।

হলে সিট বরাদ্দের বিষয়ে বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ফেরদৌসী হক বলেন, কোন দল থেকে সিট দেওয়ার ব্যাপারে কেউ কিছু বলেনি। আমরা ফেয়ার সিট বরাদ্দ দিবো। ৪৫ টি সিট এবং ৫ টি হিন্দুদের জন্য সিট আমরা বরাদ্দ দিয়ে দিবো। আমরা একটি ফর্ম তৈরি করেছি যেখানে শিক্ষার্থীর রেজাল্ট, বাসা কোথায়, পারিবারিক অবস্থা কি এবং মন্তব্য। কোন দলের যদি হয়, আমরা পরে আবার খোজ খবর নিবো যে সে কোন দলের কিনা। আমরা মেধার ভিত্তিত্তে সিট বরাদ্দ দেওয়ার চেষ্টা করবো।

উল্লেখ, ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাসগুলো সরকার দলীয় রাজনৈতিক ছাত্রগঠনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হত। সেসময় অবৈধ শিক্ষার্থীরা কলেজ ছাত্রাবাসের বেশিরভাগ সিট পেশিশক্তির মাধ্যমে দখলে রাখতো। ছাত্রাবাসে থেকে তারা সিট বানিজ্য, মাদক সেবন, চাদাবাজি, র‌্যাগিং সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করতো। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর কলেজের ছাত্রাবাসের নিয়ন্ত্রণে নেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। এরপর কলেজর হলের পরিবেশ ও ছাত্রাবাসের সিট বরাদ্দের ১১টি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। 

ছাত্রাবাসের ১১টি নীতিমালার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নীতিমালা হল:  বৈধ শিক্ষার্থীরা ছাত্রাবাসে সিটের আবেদন করতে পারবে, মাস্টার্স পরীক্ষার ১৫ দিনের মধ্যে শিক্ষার্থীকে ছাত্রাবাস ত্যাগ করতে হবে, ছাত্রাবাসে গণরুম, গেস্টরুম, র‌্যাগিং নিষিদ্ধ থাকবে, যার নামে সিট বরাদ্দ দেওয়া হবে তাকে ছাত্রাবাসে থাকতে হবে অন্য কেউ থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ইত্যাদি নীতমালাসমূহ ছাত্রাবাসের সিট বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।


সর্বশেষ সংবাদ