‘শিল্প নিয়ে না পড়েও শিল্পের সাথে যুক্ত থাকা যায়’

ফাতেমা আক্তার ও তার আঁকা অবিসংবাদিত নেতা চিত্রকর্ম
ফাতেমা আক্তার ও তার আঁকা অবিসংবাদিত নেতা চিত্রকর্ম  © টিডিসি ফটো

দেয়ালে টাঙানো ছবি। শিরোনাম লেখা ‘অবিসংবাদিত নেতা’। ছবিটির শিল্পী সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার। বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি এটি। এই চিত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন ও সাধারণ মানুষের প্রতি তার অবিসংবাদিত নেতৃত্বকে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছেন এই চিত্রশিল্পী।

সম্প্রতি সাত কলেজের অংশগ্রহণে তিতুমীর আর্ট ক্লাব কর্তৃক আয়োজিত চিত্রপ্রদর্শনীতে এভাবেই নিজের চিত্রের বর্ণনা দিয়েছেন ফাতেমা। সুনিপুণ দক্ষতা ও বর্ণনায় জিতে নেন জয়নুল আবেদিন পুরস্কার।

ফাতেমা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন,‌ ছোট বেলায় চিত্রাঙ্কনে তার হাতেখড়ি। বড় ভাইয়ের পছন্দের অ্যানিমে চরিত্রের চিত্র আঁকার মাধ্যমে তার এই আগ্রহ আরও গভীর হয়। যখন আর্ট করতে ইচ্ছা করত তখন সামনে যে কাগজ পেতেন আঁকাআঁকি করতেন। 

তিনি বলেন, এমনও হয়েছে পরদিন পরীক্ষা কিন্তু আগের দিন আঁকাআঁকি করেছি। ভালো না লাগলেও আর্ট করতে বসতাম। এভাবেই আমার আঁকা শেখা। কলেজ জীবনে এসে আমার আর্টের প্রতি ভালোবাসা আরো বাড়তে থাকে। প্রযুক্তির কল্যাণে ইউটিউব থেকে আর্টের নানান খুঁটিনাটি বিষয় শিখেছি। 

জানা যায়, ‘অবিসংবাদিত নেতা’ শিরোনামের চিত্রটি চারুকলা অনুষদের একটি প্রদর্শনীতেও স্থান পেয়েছিল।

এছাড়াও ফাতেমার ঝুলিতে রয়েছে আরও অনেক সফলতা। তিনি ফটো, আর্ট ফেস্ট এন্ড ওয়ার্কশপ ২০১৯ এ প্রথম হয়েছেন। এনিমে আর্ট ফেস্ট এন্ড এক্সিবিশনে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছেন। এছাড়াও পঞ্চম ডিআরএমসি প্রথম আলো ন্যাশনাল আর্ট এন্ড মিউজিক ফেস্ট-২০১৯ এ তার কমিক এক্সিবিট করা হয়েছে।

ফাতেমা জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী স্মরণে আমার শিল্পকর্ম নির্বাচিত হয়েছিল এবং ম্যাগাজিনে স্থান পেয়েছিল। মাহফুজ ক্যানভাস কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতেও আমার চিত্র নির্বাচিত হয়। শিল্প বাংলা আর্ট এক্সিবিশনেও আমার চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। এছাড়াও ভিজুয়াল স্টোরিস বইয়ে আমার কমিক প্রকাশ পেয়েছে। 

তিতুমীর কলেজের জনপ্রিয় সংগঠন তিতুমীর আর্ট ক্লাবের সাথে ফাতেমা যুক্ত রয়েছেন শুরু থেকেই। ক্লাবে সভাপতি হিসেবে করেছেন দায়িত্ব পালন। বর্তমানে তিনি কোন দায়িত্বে না থাকলেও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তার নেতৃত্বে ক্লাব অনেক সাফল্য অর্জন করেছে। 

তিনি জানান, পরিবার থেকে সবসময় অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। আর্টে কোনো ভুল হলে বাবা ধরিয়ে দিতেন। যা তার দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। যেকোনো প্রদর্শনীতে তার মা, বাবা, ভাই, ভাবী সবাই তার আর্ট দেখতে গিয়েছেন এবং তাকে উৎসাহ দিয়েছেন। 

ফাতেমা বলেন, এনিমে আর্ট দিয়ে শুরু করলেও পরবর্তীতে পোর্ট্রেট, কমিক, রিয়েলিস্টিক আর্টেও দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছি। পেন্সিল কালার থেকে শুরু করে ওয়াটার কালার, পোস্টার কালার, এক্রেলিক কালার, মার্কার কালার সব মাধ্যমেই এখন আঁকতে পারি। ট্র্যাডিশনাল আর্টের পাশাপাশি ডিজিটাল আর্টও শেখা শুরু করেছি।

একসময় শিল্প নিয়ে পড়ার আগ্রহ থাকলেও এখন আর সেই ইচ্ছা নেই ফাতেমার। তার মতে, শিল্প নিয়ে না পড়েও শিল্পের সাথে যুক্ত থাকা যায়। যেকোনো বিষয়ে আগ্রহ থাকলে সেই বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব, তবে তার জন্য প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম। ভবিষ্যতে শিল্প নিয়ে কোন নির্দিষ্ট পরিকল্পনা না থাকলেও যতদিন বেঁচে আছেন, আঁকাআঁকির মাঝেই থাকতে চান তিনি। নিজের শিল্পকে নিয়ে যেতে চান অনন্য উচ্চতায়।

তার আঁকা প্রতিটি চিত্রকর্ম যেন জীবনের গল্প বলে, সংগ্রামের গল্প বলে এবং মানুষের মধ্যে প্রেরণা জাগায়। ফাতেমার এই শিল্পীসত্তা একদিন তাকে নিয়ে যাবে অনন্য উচ্চতায়, এমনটাই তার পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রত্যাশা।

 

সর্বশেষ সংবাদ