টিউশন মিডিয়ার ফাঁদে টাকা খোয়াচ্ছেন কুবি শিক্ষার্থীরা

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

‘প্রথমে আমি ২ হাজার টাকা দিয়েছি। এরপর আমাকে একটা নম্বর দিয়ে বলে, এটা অভিভাবকের। আমি নম্বরে ফোন দিয়ে কথা বলি। আমাকে ২৫ এপ্রিল যেতে বলা হয়। ২৪ এপ্রিল রাতে আমি জানতে পারি, এটা একটা ভুয়া পেইজ। পরে অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কথা বলতে পারিনি।’ কথাগুলো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান রিফাতের।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) বেশ কিছু  শিক্ষার্থী এভাবে ভুয়া অনলাইন টিউশনি মিডিয়ার প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। ৩০ জনের অধিক শিক্ষার্থীর অন্তত ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন। এ ঘটনায় প্রক্টরিয়াল বডির কাছে মৌখিকভাবে ও পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এরপরও চক্রটি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি তাদের।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, চক্রটি ‘কুমিল্লা আরবান টিউশনি মিডিয়া’ নামে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম চালিয়েছে যাচ্ছে। পরিচালক নিজেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। টিউশনি দেওয়ার পূর্বেই ২০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ দাবি করেন তারা।

এ সময় অভিভাবক পরিচয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথাও বলিয়ে দেন তারা। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে আশ্বস্ত হয়ে অর্থ পরিশোধ করলে যোগাযোগের সব পথ বন্ধ করে দেয় চক্রটি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ জনের বেশি শিক্ষার্থী প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। 

অভিভাবক পরিচয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথাও বলিয়ে দেন তারা। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে আশ্বস্ত হয়ে অর্থ পরিশোধ করলে যোগাযোগের সব পথ বন্ধ করে দেয় চক্রটি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ জনের বেশি শিক্ষার্থী প্রতারণার শিকার হয়েছেন

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল বলেন, টিউশন চাইলে আমার কাছে ২ হাজার টাকা দাবি করে। তখন আমি অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে এবং কিছুদিন টিউশন করিয়ে টাকা দেব বললে তারা রাজি হননি। তবে সত্যতা না পাওয়ায় টাকা দিইনি। কিন্তু পরদিন দেখলাম, অ্যাকাউন্টিং বিভাগের এক মেয়েকে মেনশন করে বলা হয়েছে, তাকে টিউশনি দেওয়া হয়েছে। পরে আমি সে মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানায়, তাকে কোনো টিউশনি দেওয়া হয়নি। বরং তার কাছ থেকে ২ হাজার টাকা কমিশন নিয়েছে। তখন তিনি পেজে আবার কথা বললে তাকে গালাগাল করে হুমকি দেওয়া হয়।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী মিম বলেন, আমার এক জুনিয়য়ের একই টিউশন মিডিয়ার সঙ্গে ৩ হাজার টাকায় একটি টিউশনি দেওয়ার কথা ঠিক হয়। কমিশন হিসেবে ১ হাজার টাকা দেওয়া হয়। তবে টাকা দেওয়ার পর তাঁরা যে অভিভাবকের নম্বর দেয়, সে নম্বরে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না, বন্ধ দেখায়। ফলে তখন মিডিয়ার ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলা হয়। তখন তিনি বলেন, আমি তো আপার সঙ্গে গার্ডিয়ানের যোগাযোগ করে দিয়েছি। এখন আপনি টিউশনি না পেলে এর দায়ভার আমি নিতে পারব না।

অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, গত ১৭ এপ্রিল আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে টিউশন না দিলে আমি প্রক্টরকে মৌখিকভাবে জানাই। পরে প্রক্টরের নির্দেশে থানায় অভিযোগ করি। এ সময় অভিযোগের তদন্তভার আসে এসআই মোরশেদ আলমের ওপর। গত এক মাসে তার কাছে তদন্তের অগ্রগতি কতদূর জানতে চাইলে বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে আশানুরূপ কোনো কথা তিনি বলতে পারেননি।

এদিকে টিউশনের আবদার করে চক্রটির অ্যাডমিনের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। এ সময় তিনি নিজেকে সাদমান ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দেন। তার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তিনি দেখা করবেন না বলে জানান। পরে অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি অস্বীকার করেন। এ সময় অকথ্য ভাষায় কথা বলে ফোন কেটে দেন তিনি।

এ বিষয়ে প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, আমার কাছে মৌখিক অভিযোগ জানালে আমি তাদেরকে পুলিশের কাছে পাঠিয়েছিলাম। এটি পুলিশের ব্যাপার। আমরা খুঁজে বের করতে পারব না। পুলিশ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। এখনো হয়ত খুঁজে পায়নি। পেজটি যদি সক্রিয় থাকে, তবে আমি আবার পুলিশকে জানাব।

আরো পড়ুন: সেক্রেটারি হওয়ার পর বদলে গেল সৈকতের লাইফ স্টাইল

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার উপপরিদর্শক (এস আই) মোরশেদ আলম বলেন, বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা তদন্ত করছি। কিন্তু এখনো তাদেরকে খুঁজে বের করা যায়নি। যে নগদ এজেন্ট নম্বরে যোগাযোগ টাকা লেনদেন হয়েছে, সেখানে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে এখনো তথ্য দেয়নি তারা। 

তিনি বলেন, আমাদের কাছে ব্যক্তি শনাক্তকরণ প্রযুক্তি যথেষ্ট নেই। সিমগুলো লিগ্যাল আইডেন্টিটি নিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে না। যে সিমগুলো তারা ব্যবহার করছে, সেগুলো রেজিস্ট্রেশন করা একজনের নামে- ব্যবহার করছে অন্যজন। তারা ভুয়া নম্বর ও এনআইডি ব্যবহার করছে। ফলে কাজটা আমাদের জন্য আরো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, এটি একটি বড় প্রতারণা চক্র। এমনও আছে, তাঁরা দেশের বাইরে থেকে এ প্রতারণা করছে। আমরা কত সহজে প্রতারিত হচ্ছি, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। আমি আজকে আবার কথা বলে দেখব। আর শিক্ষার্থীদের আরো সতর্ক হতে হবে।

 

সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence