মধ্যরাতে ছাত্রীকে চায়ের নিমন্ত্রণ নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের

বহিষ্কার চেয়ে আল্টিমেটাম

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহা
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহা  © সংগৃহীত

ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীকে অশোভন ইঙ্গিত ও হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে। 

মধ্যরাতে চা পানের নিমন্ত্রণ, অংক বুঝাতে ব্যক্তিগত চেম্বারে ডাকা ও প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় নম্বর কমিয়ে দেওয়া এবং থিসিস রিপোর্ট তৈরিতে হয়রানি করার অভিযোগ তুলে রবিবার (৩ মার্চ) ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করেন বিভাগটির ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তরের এক নারী শিক্ষার্থী।

পরবর্তীতে এই ঘটনা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে জানাজানি হলে দীর্ঘ সময় ধরে নীরবে নির্যাতনের শিকার হওয়া অনেক নারী শিক্ষার্থী মুখ খুলতে শুরু করেন। ফলে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে ওই শিক্ষকের আপত্তিকর কথোপকথন।

ভুক্তভোগী ছাত্রীদের শাড়ি পরে তার সঙ্গে দেখা করতে বলা, ইনবক্সে ছবি চাওয়া, রিকশা নিয়ে ঘুরতে যাওয়া, ক্যাম্পাসের বাহিরে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার নিমন্ত্রণ, ম্যাসেঞ্জারে অন্তরঙ্গ ভিডিওর লিংক শেয়ার করার মতো নানান অভিযোগ জানিয়েছেন শিক্ষক সাজন সাহার বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় সোমবার (৪ মার্চ) প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সাজন সাহাকে শাস্তির আওতায় এনে চাকরি থেকে স্থায়ী বহিষ্কারসহ ৬ দফা দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। 

তাদের দাবিগুলো হলো- অভিযুক্ত শিক্ষকে চাকরিচ্যুত, অপরাধের সাথে জড়িত সকলকে শাস্তির আওতায় আনা, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অনতিবিলম্ব পরীক্ষার ফল প্রকাশ, ভবিষ্যতে এ ঘটনার কোন বিরূপ প্রভাব না পরার নিশ্চয়তা এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দাবির বাস্তবায়ন।

২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তরের ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী বলেন, আমি উপাচার্য, প্রক্টর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর ই-মেইলে অভিযোগ পাঠিয়েছি। এর আগে বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রকে জানালে তিনি কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে বরং বিষয়টি গোপন রাখতে বলেন। এ ঘটনায় প্রশাসন যদি সুষ্ঠু ব্যবস্থা না নেওয়া হয় প্রয়োজনে আইনগত পদক্ষেপ নেবো। ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে কোনো নারী শিক্ষার্থী এরকম হেনস্তার শিকার না হয়।

বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র বলেন, বিষয়টি শোনার পর আমি ছোঁয়াকে ইন্টার্নশিপ রিপোর্ট তৈরির বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেই। কিন্তু হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় আমি বিভাগে কয়েকদিন আসতে পারিনি। আমার কাছে শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব সবার আগে। অপরাধ করলে দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। 

এ ধরনের ঘটনাকে বিব্রতকর বলে উল্লেখ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। আন্দোলনকারীদের সাথে সাক্ষাৎ শেষে তিনি বলেন, ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ এখনো হাতে পাইনি, সে নিজেও উপস্থিত হয়নি। আমি তার সাথে কথা বলেছি, আগামীকাল সে দেখা করবে। 

এ ঘটনায় একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাজন সাহার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এদিকে ভুক্তভোগীর এমন পোস্টের পর আরও অনেক শিক্ষার্থীর সাথে সাজন সাহার কথোপকথনের স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়তে থাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আবার সেসব কথোপকথনের ছবি প্রিন্ট করে পুরো ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় লাগিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা।


সর্বশেষ সংবাদ