ক্রমেই অতিথি পাখিশূন্য হচ্ছে ইবির লেক, দেখা মিলবে না কয়েকযুগেও

অতিথি পাখিশূন্য হচ্ছে ইবির লেক
অতিথি পাখিশূন্য হচ্ছে ইবির লেক  © সংগৃহীত

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) লেকে প্রতি বছর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে অতিথি পাখির আগমন ঘটে। এসব পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয় পুরো ক্যাম্পাস। তবে এ বছর দেখা মেলেনি পাখির। একদিকে কনস্ট্রাকশনের কাজ এবং লেকটিকে কৃত্রিম করায় অনুকূল পরিবেশের অভাবে অতিথি পাখি আসেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদরা মনে করছেন কয়েকযুগেও দেখ না মিলতে পারে এসব পাখির। 

প্রতি বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে হিমালয়ের উত্তরে সাইবেরিয়া অঞ্চলে নামে হাড় কাঁপানো শীত। এ শীত সহ্য করতে না পেরে তুলনামূলক কম শীত অঞ্চলের দিকে ছুটে আসে পাখিরা। উষ্ণতার খোঁজে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল বাংলাদেশে পাড়ি জমায় তারা। গত কয়েক বছর ধরে শীত এলেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকে পাখিরা এসে বসবাস শুরু করে। এদের মধ্যে অধিকাংশ থাকে হাঁসজাতীয় পাখি। গত বছরগুলোতে ডিসেম্বর মাস নাগাদ অতিথি পাখির দেখা মিললেও এ বছর দেখা মেলেনি এসব পাখির।

সরেজমিন দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৭ কোটি টাকা মেগা প্রকল্পের আওতায় লেকের পাশে ১০তলা একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। নির্মাণাধীন ভবনে ব্যবহার করা হচ্ছে উন্নত মেশিন। ফলে সবসময় নির্মাণ শ্রমিকদের উপস্থিতি, উচ্চ শব্দের সৃষ্টি এবং লেক এলাকায় বড় বড় বৃক্ষ নিধনের কারণে পাখিদের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদরা বলছেন, কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে এবং লেক ও পুকুরটিকে কৃত্রিম করা হয়েছে। ফলে কয়েক যুগেও লেকে এসব পাখিদের দেখা মেলা ভার হয়ে দাঁড়াবে। ঋতু বৈচিত্র্যে সিজন ব্রেক এবং অতিথি পাখি শিকারের কারণে পুরো দেশে এদের সংখ্যা কমেছে। আগে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আসলেও এখন কয়েক প্রকারের দেখা মেলে। অতিথি পাখিরা নির্জনে থাকতে পছন্দ করে। ঘন বসতি ও বৃক্ষনিধনের কারণে দেশে আসছে না পাখিরা। দ্রুত অতিথি পাখি সংরক্ষণের উদ্যোগ না নিলে তাদের আর দেখা মিলবে না।

আরও পড়ুন: ‘গুচ্ছে ফেরা’ নিয়ে ইউজিসির সভায় যাবেন না ইবি শিক্ষক নেতারা

প্রতিবছর অতিথি পাখিদের খুনসুটি ভাগাভাগি করে শিক্ষার্থীরাও। এবছর পাখির দেখা না মেলায় মন খারাপ তাদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারভেজ আহমেদ রবিন বলেন, ‘পাখিদের আগমনে ক্যাম্পাসে এক অন্যরকম আবহ তৈরি হয়। দর্শনার্থীদের ভিড় জমে। আমরাও সকাল-বিকাল পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ উপভোগ করি। এ বছর তাদের মিস করছি। বৃক্ষনিধন না করলে হয়ত এবছরও পাখিরা আসত।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সভাপতি ইনজামুল হক বলেন, ‘লেকের আশেপাশের এলাকায় বৃক্ষ নিধনের কারণে অতিথি পাখিদের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ফলে এ বছর এসব পাখির দেখা মেলেনি। এসব পাখি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায়ও অবদান রাখে। লেকের পাশে পিকনিক না করা, নিরব জায়গাসহ উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পারলে আবার দেখা মিলতে পারে।’


সর্বশেষ সংবাদ