ইবিতে ইমাম নিয়োগকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি শিক্ষক-ছাত্রলীগ

  © টিডিসি ফটো

ইমাম নিয়োগকে কেন্দ্র করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যাল্যালয় (ইবি) মুখোমুখি অবস্থানে শিক্ষকদের একাংশ এবং ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তারা নিয়োগ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। ছাত্রলীগ শিক্ষকদের একাংশকে গালিগালাজ এবং লাঞ্চিত করেছেন বলে বিবৃতিতে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকরা। এদিন বেলা ৩টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করেন কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিয়োগ কার্যক্রম চলমান ছিল। তবে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের একাংশ নিয়োগের পক্ষে রয়েছেন বলে জানা গেছে। 

মঙ্গলবার (৬ জানুয়ারি) সকালে উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের দুর্নীতির বিচারের মধ্যেও নিয়োগ বোর্ড ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম নিয়োগের বোর্ড অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। নিয়োগ বন্ধ করতে কর্মকর্তারা চাকুরীর বয়সসীমা ৬২ বছরে উন্নীতকরণ, নতুন শিক্ষার্থী ভর্তিতে পোষ্য কোটায় মার্ক শিথীলকরণসহ ১৩ দফা দাবিতে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। তাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ বোর্ড বন্ধ রাখার দাবি জানান। একপর্যায়ে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে যান কর্মকর্তারা। এসময় উপাচার্যকে নিয়োগ বোর্ড বন্ধের দাবি জানান এবং বাকবিতন্ডায় জড়ান।

এরপর উপাচার্যবিরোধী শিক্ষকরা উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এসময় তারা উপাচার্যের নিয়োগ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে ইউজিসি কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিল এবং বঙ্গবন্ধু চেয়ার নিয়োগের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়োগ বন্ধ রাখার দাবি জানান। একপর্যায়ে উপাচার্য ও শিক্ষকরা বাকবিন্ডায় জড়ান। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শাপলা ফোরাম ও শিক্ষক সমিতির একাংশ শিক্ষকদের গালিগালাজ এবং শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেন বলে অভিযোগ শিক্ষকদের। তবে নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রাখার দাবি জানান উপাচার্যপন্থী শিক্ষকরা ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।

এ ঘটনার পর শিক্ষক সমিতি এবং শাপলা ফোরামের শিক্ষকদের একাংশ মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। এ সময় তারা উপাচার্যের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যসহ দুর্নীতির নানা অভিযোগ তোলেন এবং ইউজিসির গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের পর নিয়োগ কার্যক্রমে যাওয়ার দাবি জানান তারা। এছাড়া  শিক্ষক সমাজকে লাঞ্চনার প্রতিবাদ শিক্ষকরা জানান।

এদিকে গতকাল ইমাম নিয়োগ সংক্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদের একটি ওয়াটসঅ্যাপের কথোপকথন  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সেখানে জাহাঙ্গীর স্যার উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছেন কাজটা হয়ে যাবে এমন কথা লেখা দেখা যায়। যাকে কেন্দ্র করে আজকের উত্তাল অবস্থা। এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ বলেন, ‘যেটি ভাইরাল হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ ভুয়া। যারা এমনটি করেছে তাদের বিচার দাবি জানাই।’

ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দীকি আরাফাত বলেন, ‘আমরা কখনো নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। সুষ্ঠুভাবে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান থাকুক ।’

কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালীদ হাসান মুকুট বলেন, ‘কর্মকর্তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত  আন্দোলন চলমান থাকবে।’

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান বলেন, ‘আমরা কিছু দাবি দাওয়া নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। এসময় বহিরাগত পেটুয়া বাহিনী দিয়ে আমাদেকে লাঞ্চিত করেন। নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। এর বিচার দাবি জানাই। এছাড়া উপাচার্যের অর্থ লেনদেনের দুর্নীতির বিচার না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখার আহ্বান জানাই।’

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রমাণ থাকলে তারা সেটি দেখাক। তাদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এসব করছেন।’

শাপলা ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্ম্মণ বলেন, ‘উপাচার্যের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। আজকের নিয়োগ নিয়েও অভিযোগ ছিল। যে অডিওগুলো ভাইরাল হয়েছে তাতে স্পষ্ট উপাচার্য ও তাদের পক্ষের শিক্ষকদের নাম এসেছে। তিনি বঙ্গবন্ধু চেয়ার নিয়োগের দিকে যাচ্ছেন না। যেখানে টাকা আছে সেসব নিয়োগে তৎপর উপাচার্য।’

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, ‘আমি নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে কখনো জড়িত ছিলাম না। আমি সততা নিয়ে কাজ করছি এবং এই সততা নিয়ে লড়াই করতে চাই।’


সর্বশেষ সংবাদ