বিজয় অর্জিত হয়ে গেলেই সংগ্রাম শেষ হয়ে যায় না
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এবং ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় এ স্বাধীনতা। দেখতে দেখতে বাংলাদেশ আজ বিজয়ের ৫২ বছরে এসে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের ৫৩তম বিজয় দিবস নিয়ে নিজেদের ভাবনার কথা জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষক। তাদের কথাগুলো তুলে ধরেছেন—রিশাদ হোসেন।
বিজয় দিবসে স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল সকলের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাক
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমাদের ‘বিজয় দিবস'। আমরা বিজয়ের ৫৩তম বছরে পদার্পণ করেছি। বিজয়ের এতোগুলা বছর খুব সহজেই অতিবাহিত হয়নি। অনেক বাধা-বিপত্তি ও দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আমরা নানা সূচকে অগ্রগামী হলেও সর্বস্তরের দোরগোড়ায় স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল কতটুকু পৌঁছেছে এটি একটি প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়।
প্রশাসনে অধিকতর জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা আনা, দুর্নীতি নির্মূলে সরকারি নীতির যথাযথ বাস্তবায়ন, অর্থপাচার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ এবং সর্বত্র বৈষম্য দূর করে জনবান্ধব নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল সকলের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাক, এমনটাই প্রত্যাশা।
শরাফত আলী
সহযোগী অধ্যাপক, বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং বিভাগ
বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার কথা বলেছেন, কাঙ্ক্ষিত সে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে?
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাকে যে স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে সেই কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি কিনা? যে মুক্তির কথা তিনি বোঝাতে চেয়েছেন তা আমরা প্রকৃতপক্ষে অনুধাবন করতে এখনও সক্ষম কিনা? যদি সে স্বাধীনতা আমরা এখনও না অর্জন করে থাকি, বা প্রকৃত মুক্তির দেখা এখনও না পেয়ে থাকি তবে সামনের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় উন্নয়নে স্বাধীনতা ও মুক্তির সপক্ষের শিক্ষা আন্দোলন সফলের প্রতিজ্ঞা করার কথা উল্লেখ করতে চাই।
এ আন্দোলন সফলের জন্য প্রতিটি পরিবারকেই উদার ও প্রগতিশীল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে হবে মনে করি। এছাড়াও এ লক্ষ্যে কাজ করতে দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতি একজন শিক্ষাকর্মী হিসেবে আমার উদাত্ত আহ্বান থাকবে। এমনকি এধরনের যেকোনো উদ্যোগে নিজের মেধা-মনন-পরিশ্রম সবসময়ই নিবেদন করতে প্রস্তুত ছিলাম, আছি এবং থাকবো।
জাকিয়া সুলতানা মুক্তা
সহকারী অধ্যাপক, বশেমুরবিপ্রবি
আরও পড়ুন: কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হবে
মহান বিজয় দিবস আমাদের রক্তে রঞ্জিত চেতনার বিজয়
মহান বিজয় দিবস আমাদের রক্তে রঞ্জিত চেতনার বিজয়। আমাদের জাতীয় আত্মপরিচয়ের বিজয়। এ বিজয় আমাদের কাছে তাই একইসঙ্গে প্রেরণার ও গৌরবের। আমাদের বিজয় দিবসের গুরুত্ব যে যার জায়গা থেকে সৎ, নীতিবান এবং দায়িত্বসম্পন্ন হতে পারলে সেটি অক্ষুণ্ন রাখা সম্ভব। তাহলেই কেবল আমাদের বিজয়ের যে উদ্দেশ্য সে উদ্দেশ্য সফল হবে।
মানসুরা খানম
সহকারী অধ্যাপক, বশেমুরবিপ্রবি।
বিজয় অর্জিত হয়ে গেলেই সংগ্রাম শেষ হয়ে যায় না
যুদ্ধে বিজয় অর্জিত হয়ে গেলেই সংগ্রাম শেষ হয়ে যায় না। বিজয় আমাদের ন্যায় ও সত্য উন্মোচন ও উদযাপনে উৎসাহী করে তুলে। ১৯৭১ সালে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর যে বিজয় অর্জিত হয়েছিল, বাংলাদেশ নামক যে ভূখণ্ডের জন্ম হয়েছিল, তা আমাদের সকলের জন্য আবেগ, ভালোবাসা ও গর্বের।
মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের তাৎপর্য নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরার মাধ্যমেই কেবল স্বাধীনতার চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। বর্তমান সময়ে তরুণ-তরুণীদের অনেকেই জীবনমান উন্নতির উদ্দেশ্যে হোক অথবা উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যেই হোক বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। এদের অনেকেই দেশ সম্পর্কে অনেক নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন।
আমাদের সকলেরই একটা বিষয় মনে প্রাণে বিশ্বাস ও ধারণ করতে হবে যে, দেশের উন্নতি, জীবনযাত্রার মান, দেশের সম্মান রক্ষার জন্য প্রত্যেকের নিজ নিজ জায়গা থেকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। তবেই বিদেশের মাটিতে বাঙালি মায়ের কোলে বেড়ে ওঠা শিশু বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে।
আসিফ খালেদ
প্রভাষক, মার্কেটিং বিভাগ, বশেমুরবিপ্রবি।