চলছে পরীক্ষা, সোহরাওয়ার্দী কলেজের ওয়াশরুমে মিলছে সমাধান

সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ
সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ  © ফাইল ছবি

রাজধানীর সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ওয়াশরুমে প্রশ্নের সমাধান পাওয়া গেছে। অভিযোগ উঠেছে, কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার রাহাত মোড়ল ও তার কয়েকজন কর্মীরা ১-২ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রশ্নের উত্তর সমাধান করে পরীক্ষার্থীদের মাঝে বিক্রি করেছেন। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে কলেজ শাখা ছাত্রলীগ।

গত বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ইংরেজী (২২১১০৯) বিষয়ের পরীক্ষা ছিল। দ্বিতীয় বর্ষ ছাড়াও অন্যান্য বর্ষের ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। এ পরীক্ষা নিয়ে ওঠা অনিয়মের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহসিন কবির।

জানা যায়, দুপুর ১টায় পরীক্ষা শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা পর রাহাত ও তার কর্মীরা এক হাজার টাকার বিনিময়ে কলেজ ছাত্র সংসদ ও প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলার ওয়াশরুমে প্রশ্নের সমাধান বিক্রি শুরু করেন। পরে কলেজ প্রশাসন বিষয়টি বুঝতে পেরে ওয়াশরুম বন্ধ করে দেয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কবি নজরুল কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, পরীক্ষা শেষ করে তারা হল থেকে বের হয়ে জানতে পারেন, এক হাজার টাকায় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও তার কর্মীরা প্রশ্নের সমাধান বিক্রি করেছেন। বেশ কয়েকজন তা দিয়ে পরীক্ষাও দিয়েছেন। আবার অনেকে সেই উত্তরপত্র নিয়ে পরীক্ষার হলে ধরাও পড়েছেন।

সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রলীগের এক কর্মী জানান, এমন ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। এটা কলেজের ছাত্র সংসদে বসে করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা পরে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে। পরবর্তীতে তা ওয়াশরুমে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ১-২ হাজার টাকা নিয়ে বিক্রি করা হয়েছে। অনেকের কাছে টাকা ছিল না বলে তারা নাম-রোল নম্বর দিয়ে বিকাশে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

ছাত্রলীগের এই কর্মী আরও জানান, দীর্ঘদিন থেকে কলেজ ছাত্র সংসদের রুমটি ছাত্রলীগ নিজেদের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে এই কাজটি করা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে সোহরাওয়ার্দী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার রাহাত মোড়ল বলেন, “এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ। বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের প্রোগ্রাম নিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে জরুরি কাজ থাকায় আমি ওইদিন ক্যাম্পাসে ছিলাম। তবে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে আমি আমাদের ছাত্র সংসদে ছিলাম না।

তিনি বলেন, “কারা ওয়াশরুমে প্রশ্নের উত্তর বিক্রি করেছে তা আমাদের জানা নেই। তবে ছাত্রলীগের যদি কেউ এর সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কলেজ প্রশাসনকে তদন্ত করতে ছাত্রলীগ সাহায্য করবে বলেও তিনি জানান।

কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর ইসলাম আশিক বলেন, “এ বিষয়ে আমাকে প্রিন্সিপাল জানিয়েছেন। আমি পরীক্ষা চলাকালীন ক্যাম্পাসে ছিলাম না। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে ক্যাম্পাসে আসি। তাই আমি এবিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহসিন কবির বলেন, ওয়াশরুমে প্রশ্নের উত্তর বিক্রি প্রসঙ্গে এমন কোনো তথ্য আমার জানা নেই। তবে ওইদিন পরীক্ষার কেন্দ্রে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে নকল পাওয়া গেছে। শিক্ষকরা জানিয়েছেন ওই শিক্ষার্থীরা ওয়াশরুমে গিয়ে নকল নিয়ে এসেছিলেন। যাদের কাছ থেকে নকল পাওয়া গেছে তাদের সবার খাতা রেখে পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো।


সর্বশেষ সংবাদ