প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির ৪৫ বছরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
- রাকিব ইবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:২৬ AM , আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:৫৩ PM
১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে ১৭৫ একর জায়গাজুড়ে যাত্রা শুরু হয় স্বাধীনতাত্তোর দেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি)। আজ মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়টি ৪৪ বছর পূর্ণ করে ৪৫ বছরে পা দিয়েছে।
পিছনে ফেলে আসা ৪৪ বছরের পথচলায় শত বাঁধা আর প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে শিক্ষা-গবেষণা, সংস্কৃতি-ক্রীড়াঙ্গনে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে চলেছে বিদ্যাপীঠটি। নানা আয়োজনে দিনটি পালন করবে কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও এগিয়ে নিতে নানা পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে প্রশাসন।
১৯৮৬ সালের ২৮ জুন মাসে দুটি অনুষদের চারটি বিভাগে ৩০০ শিক্ষার্থী নিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় প্রতিষ্ঠানটির। বর্তমানে ৮টি অনুষদের ৩৬টি বিভাগে ১৪ হাজার ৯৯ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। এর মধ্যে ছাত্র ৯ হাজার ২৪ এবং ছাত্রী ৫ হাজার ৭৫ জন। বর্তমানে ৪০৪ জন শিক্ষক শিক্ষাদানে নিয়োজিত রয়েছেন।
এছাড়াও ৫০৪ জন কর্মকর্তা, ১০৮ জন সহায়ক কর্মচারী এবং ১৫৪ জন সাধারণ কর্মচারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রেখে চলেছেন। শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিতে ৮ টি আবাসিক হল (৫ টি ছাত্র হল ও ৩ টি ছাত্রী হল) রয়েছে। এছাড়া আরো দুটি দশতলা হলের কাজ চলমান রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টি এ পর্যন্ত ৬২৭ জনকে পিএইচডি এবং ৭৭৪ জনকে এম.ফিল ডিগ্রি প্রদান করেছে। বর্তমানে ১৭২ জন পিএইচডি এবং ৪২ জন এম.ফিল গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন। এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্স প্রকাশিত “ওয়ার্ল্ড সায়েন্টিস্ট র্যাংকিং-২০২৩” এ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ৭৪ জন গবেষকের নাম এসেছে।
এছাড়া ৫৩৭ কোটি ৭ লাখ টাকার মেগা প্রকল্পের আওতায় নয়টি দশ তলা ভবনের সবগুলোর নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। একটি ১০ তলা ছাত্র হলের প্রায় ৮০ শতাংশ নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অপর আরেকটি ১০ তলা ছাত্র হল এবং শেখ রাসেল হল বি ব্লকের আনুমানিক ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়াও ১০ তলা ছাত্রী হল, একাডেমিক ভবন, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবন, কর্মচারীদের আবাসিক ভবন, প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
দশতলা বিশিষ্ট আবাসিক হলগুলো নির্মাণ শেষ হলে আবাসন সুবিধা নিশ্চিত হবে ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর। বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে ২টি গভীর নলকূপ এবং ১টি উন্মুক্ত জলাশয় তৈরির কাজ সম্পন্ন হওয়ার পথে।
উল্লেখযোগ্য সফলতার মধ্যে একটি হল অনলাইনে ফি জমাদান করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। যেটির আজ উদ্বোধন করবেন উপাচার্য। এ ছাড়া বর্তমানে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতে বই রয়েছে এক লক্ষ ২৩ হাজার (প্রায়)। এছাড়াও জার্নাল, ম্যাগাজিন এবং নিউজ পেপার এর সংখ্যা ১৯ হাজার (প্রায়)। রিমোট এক্সেস এর মাধ্যমে অনলাইনে সাবস্ক্রাইবড ই-বুক এবং ই-জার্নাল পড়ার সুবিধা রয়েছে। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
আরও পড়ুন: ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের রাতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করল ববি প্রশাসন
প্রাপ্তির মাঝে কিছু অপ্রাপ্তিও রয়েছে। এর মধ্যে আবাসন সংকট ও সেশনজট অন্যতম। এ ছাড়া চিকিৎসা সেবার ভোগান্তি, আবাসন সংকট, সনদপত্র ও নম্বর উত্তোলনে ভোগান্তি, শিক্ষকদের আভ্যন্তরীণ রাজনীতির কোন্দল এবং হলের নিম্নমানের খাবারসহ না সংকট রয়েছে। বর্তমান মোট আটটি আবাসিক হলে শিক্ষার্থী থাকছেন প্রায় আট হাজার। এর মধ্যে ছাত্রদের পাঁচটি আর ছাত্রীদের তিনটি। আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও তা আজও সম্ভব হয়নি। ফলে যাতায়াতের জন্য পরিবহন নির্ভর শিক্ষার্থীরা। বছর ঘুরে শিক্ষার্থী বাড়লেও পরিবহন সংকট থেকেই যাচ্ছে ।
যার কারণে প্রত্যেক বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ব্যয়ের দশ শতাংশ গুনতে হয় পরিবহনের পেছনে। এছাড়াও শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণা কাজ, অঞ্চলভিত্তিক রাজনীতিসহ বেশকিছু বিষয় কাটিয়ে উঠতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি। মেগাপ্রকল্পের কাজ শেষ হলে আবাসন সুবিধাসহ নানা সংকট কাটিয়ে উঠবে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মামুনুর রশীদ মামুন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি গৌরবের ৪৫ বছরে পদার্পণ করলেও প্রাপ্তির সঙ্গে রয়েছে অনেকগুলো অপ্রাপ্তিও। তবুও মানবসম্পদ তৈরির সূতিকাগার বিদ্যায়তনটি। সকল সংকট কাটিয়ে এগিয়ে যাক এটায় প্রত্যাশা।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু সংকট রয়েছে। সংকট কাটিয়ে উঠতে প্রতিনিয়ত কাজ করছি। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী ও দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলতে, স্বচ্ছতার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে সকলের সহযোগীতা কামনা করছি।