ইউজিসির ৫৫ দফা সতর্কতা

আর্থিক খাতে যত অনিয়ম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে

বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউজিসির লোগো
বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউজিসির লোগো  © টিডিসি ফটো

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ২০ খাতে আর্থিক অনিয়মের তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। প্রতিষ্ঠানটির দীর্ঘ অনুসন্ধানে দেখা যায় বেতন-ভাতা, বাড়িভাড়াসহ বিভিন্ন খাতে অনিয়মে জড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। 

দেখা গেছে, দেশে বর্তমানে ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। কয়েকটি বাদে প্রায় সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ঘটনা ঘটছে। এ ক্ষেত্রে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ও পিছিয়ে নেই। এসব বিষয়ে শৃঙ্খলা আনতে শিগগির সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ৫৫ দফা সতর্কপত্র পাঠানো হচ্ছে।

ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, ড্রাইভারদের ‘টেকনিক্যাল অফিসার’ দেখিয়ে উপ-সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার সমান বেতন-ভাতা দেওয়া হয় ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষি, ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুয়েটে। সহকারী রেজিস্ট্রাররা নবম গ্রেডে বেতন পাওয়ার কথা থাকলেও ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা বেতন নিচ্ছেন পঞ্চম বা ষষ্ঠ গ্রেডে। আর উপ-রেজিস্ট্রারের সপ্তম গ্রেডে বেতন পাওয়ার কথা থাকলেও নিচ্ছেন চতুর্থ ও পঞ্চম গ্রেডে।

নানা কারণ দেখিয়ে অনর্জিত ইনক্রিমেট হিসেবে সর্বোচ্চ ছয়টি পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এদের মধ্যে বুয়েট ও রুয়েটে নিয়োগের দিন থেকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নয়ন বা উচ্চতর স্কেল নেওয়ার ঘটনা ঘটছে।

এমনকি অতিরিক্ত ভাতা নিচ্ছেন স্বয়ং উপাচার্যরাও। বুয়েট, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ইসলামী এবং শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা কেউ বিশেষ ভাতা, কেউবা দায়িত্ব ভাতার নামে বেতনের অতিরিক্ত ২০ শতাংশ হারে অর্থ নিচ্ছেন। বাংলো থাকার পরও বাড়ি ভাড়া নিচ্ছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।     

শিক্ষক-কর্মচারীদের পূর্ণ বাড়ি দেওয়ার পর বর্গফুটে কম ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সিটি করপোরেশনের বাইরে থাকার পরও সিটি করপোরেশন হারে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতা দেওয়া হচ্ছে তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এর বাইরে নিয়োগ, নির্মাণ, সংস্কারসহ আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ  আছে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে লিফটসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ৫ কোটি টাকার অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে। 

এছাড়া অভিযোগ আছে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন আয় নিয়ে। সেসব আয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাজেটে দেখায় না বলে অভিযোগ আছে। এছাড়া এক খাতের টাকা অন্য খাতে ব্যয় এবং টেন্ডার ছাড়া কেনাকাটা এবং পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুৎপাদনশীল ব্যয়ের বড় একটি খাত হচ্ছে ঢাকায় রেস্ট হাউজ বা লিয়াঁজো অফিস স্থাপন। উপাচার্যরা ঢাকার বাইরে না যাওয়ার লক্ষ্যে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে এগুলো স্থাপন করে থাকেন। আবার ঢাকায় অবস্থানের সুবিধার্থে শিক্ষক-জনবলের জন্য রেস্ট হাউজ রাখা হয়েছে।

এসব বিষয়ে শৃঙ্খলা আনতে শিগগির মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানকে ৫৫ দফা সতর্কপত্র পাঠানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে গত রবিবার সংস্থাটির পূর্ণ কমিশনের বৈঠকে ৫৫ নির্দেশনা সম্বলিত পরিপত্র চূড়ান্ত করা হয়েছে।

পরিপত্রে আগামী ১০ জুনের মধ্যে ৫৩ বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের চলতি অর্থবছরের সংশোধিত ও নতুন বছরের প্রাথমিক বাজেট পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হবে। পরিপত্রে উল্লেখযোগ্য নির্দেশনার মধ্যে আছে- ঢাকায় রেস্ট হাউজের বাইরে কোনো ধরনের লিয়াঁজো অফিস রাখা যাবে না। প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার আয়ের সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। বাকি ৪০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা করতে হবে। এই আয় নিজস্ব আয়ের মধ্যে অবশ্যই দেখাতে হবে। 

এছাড়া ভর্তি, টিউশন, পরীক্ষা, ল্যাব টেস্ট, বিশেষ কোর্স, বেতন থেকে কর্তনাদি, সম্পত্তি থেকে লব্ধ অর্থ অবশ্যই নিজস্ব আয় হিসেবে বাজেটে দেখাতে হবে। বিভিন্ন প্রকার ব্যয়ে প্রযোজ্য হারে ভ্যাট ও কর আদায় করতে হবে।

শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দায়িত্বভাতা বেতনের ১০ শতাংশ বা দেড় হাজার টাকার মধ্যে যেটি কম সেটি দেওয়া যাবে। অগ্রিম দেওয়া অর্থ সংশ্লিষ্ট অর্থবছরের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। এক খাতের অর্থ অন্য খাতে কিংবা মূল খাতের অর্থ অভ্যন্তরীণ কোনো খাতেই সমন্বয় করা যাবে না।

কমিশনের অনুমতি ছাড়া কোনো খাতে বরাদ্দের অতিরিক্ত ব্যয় করা যাবে না। কোনো খাতে বাড়তি অর্থের দরকার হলে ইউজিসিকে অবহিত করতে হবে। অনুমোদিত জনবলের বাইরে কোনো প্রকার নিয়োগ করা যাবে না। বিধিবহির্ভূত নিয়োগে ব্যয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তরা অবসরপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান থেকেই উৎসব ও নববর্ষভাতা গ্রহণ করবেন। চুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করতে হলে তাকে অঙ্গীকারনামা দিতে হবে যে, তিনি অবসরপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান থেকে এসব ভাতা নেন না। এ ধরনের জনবলকে চুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে কনসোলিডেট পেমেন্ট ফিক্সেশনের সময়ে কোনোভাবেই উল্লিখিত দুই ভাতা অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। 

ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া অ্যাডহক, দৈনিকভিত্তিক বা আউটসোর্সিং করা যাবে না। আর শূন্যপদে অনুমোদনের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ অনুমোদন সাপেক্ষে নিয়োগ করা যাবে।

পরিপত্রে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টার বা ডরমেটরিতে বসবাসরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাসাভাড়া, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ইত্যাদি ক্ষেত্রে সরকারের প্রচলিত নিয়মে আদায় করতে হবে। সুবিধাভোগীর কাছ থেকে অন্যান্য (পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস) প্রকৃত বিল আদায় করতে হবে। কোনো ভর্তুকি দেওয়া যাবে না। 

পুরাতন যানবাহন পুনঃস্থাপন, জমি/ফ্ল্যাট ক্রয় কিংবা বাড়ি ভাড়া, পেনশন-বিধি ও আর্থিক বিষয়ে প্রণীত নীতিমালাসহ অন্যান্য অর্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো অনুমোদনের জন্য ইউজিসিতে পাঠাতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence