খুলনায় জবি অধ্যাপককে আটকে পেটালেন ইউপি চেয়ারম্যান

আহত অধ্যাপক নজরুল ইসলাম
আহত অধ্যাপক নজরুল ইসলাম  © সংগৃহীত

পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে রাজি না হওয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপককে আটকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। 

ঘটনাটি ঘটেছে খুলনার কয়রায়। নির্যাতনের শিকার নজরুল ইসলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলাম ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক। অপরদিকে আব্দুল্লাহ্ আল মাহমুদ মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।

জানা গেছে, শুক্রবার (৫ মে) সন্ধ্যায় কয়রা উত্তরচক আমিনিয়া বহুমুখী কামিল মাদরাসার সামনে ওই প্রফেসরের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর তাকে মারধর করে একটি বাড়ির ভেতরে নিয়ে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। ঘটনার পর রাত ১০টায় মুমূর্ষু অবস্থায় প্রফেসর নজরুল ইসলামকে কয়রা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য পুলিশ পাহারায় গভীর রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

আরো পড়ুন: ভর্তিচ্ছুদের সহায়তায় এসে ঢাবিতে হামলার শিকার ছাত্রদল

কয়রা উত্তরচক আমিনিয়া বহুমুখী কামিল মাদরাসা অধ্যক্ষ নিয়োগকে কেন্দ্র করে এ নির্যাতনে ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ্ আল মাহমুদ ওই মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদকও তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, ফেল করার পরও নিজের পছন্দের প্রার্থীকে পাশ মার্ক দিয়ে চাকরি পাইয়ে দিতে জোরজবরদস্তি করেন আব্দুল্লাহ্ আল মাহমুদ। সে কথা না মানায় ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে দায়িত্বে থাকা প্রফেসর নজরুল ইসলামের ওপর হামলা চালান মাহমুদ। এবং জোর করে নিয়োগপত্রে প্রফেসর নজরুলের স্বাক্ষর নেন তিনি।  

প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, কয়রা উত্তরচক আমিনিয়া বহুমুখী কামিল মাদরাসা অধ্যক্ষ নিয়োগ নিয়ে জটিলতা চলছিল। তারপরও আমরা চেষ্টা করছিলাম যাতে স্বচ্ছ নিয়োগ দিতে পারি। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির প্রতিনিধি হিসেবে ওখানে গিয়ে ২টার সময় লিখিত পরীক্ষা নেওয়া শুরু করি। এরপর ভাইবা নিয়ে খাতা দেখি। মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহমুদ চেয়ারম্যান আমাকে বার বার একটা খাতা নিয়ে বলছিলেন, এটা আমার কেন্ডিডেট। লিখিত পরীক্ষার সময় তিনি চেষ্টা করেন তার প্রার্থীকে সাহায্য করতে। তাকে বললাম, আপনি এলাকার জনপ্রতিনিধি একটু শান্ত থাকেন।  

আরো পড়ুন: ঢাবির কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটে ভর্তির প্রশ্নপত্র দেখুন

আহত প্রফেসর আরও বলেন, মাদ্রাসার যিনি প্রিন্সিপাল হতে চান তিনি বর্তমান ভাইস প্রিন্সিপাল। তিনি এক পর্যায় আমার পায়ে ধরে বসলেন। তখন ডাইরেক্টর স্যার বলেন, এখানে আর থাকা যায় না চলেন চলে যাই। এ সময় চেয়ারম্যান এসে বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। ডাইরেক্টর স্যারের প্রাইভেটকারের সামনে ডাইরেক্টর স্যার বসলেন। পেছনে আমি ও চেয়ারম্যান। সভাপতি আমাকে আঘাত করে মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। চেয়ারম্যানের বাড়ির একটু সামনে গাড়ি থামায়। যেখানে আগে থেকে ২০-৫০ জন লোক ছিল। সেই লোকজন গাড়ির দরজা খুলে আক্রমণ করে আমাকে। মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। বাড়ির ভেতর নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তারা। আমি একটি খুঁটি ধরে রাখতে চেষ্টা করি।

তিনি বলেন, ডাইরেক্টর স্যার অনেক চেষ্টা করেছিলেন আমাকে রক্ষা করতে। কিন্তু চেয়ারম্যান বলেন, ওকে দেখিয়ে দেব নিয়োগ দিতে এসে নিয়োগ দেবে না কেন? আমাকে মাটিতে ফেলে রাখে। জ্ঞান ফিরে দেখি সন্ধ্যা হয়ে গেছে। একপর্যায় আমি চিৎকার করি ওরা আমার মুখে গামছা বেঁধে রাখে। আমি প্রেশার হাই হয়ে যায় এ সময়। রাত ৮টার দিকে কয়রা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আসেন। এসময় অস্ত্র ঠেকিয়ে ৪-৫ টা কাগজে সই নেয়। সই নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে কয়রা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে দেয়। ওইখান থেকে ডাক্তারদের সহযোগিতায় সবাইকে বিষয়টি জানাই। আমার সঙ্গে যারা ছিল তারা কেউ কাউকে বিষয়টি জানায়নি। আমি যখন সই করি তখন দেখি ওই নিয়োগপত্রে ডাইরেক্টর স্যারের সই রয়েছে। রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ পাহারায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমাকে আনা হয়।

মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।
খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান (বিপিএম) বাংলানিউজকে বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর নজরুল ইসলামকে পুলিশ পাহারায় শুক্রবার রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে। শিক্ষক অভিযোগ করলে আইনগত সকল পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ