কল রেকর্ডে ফাঁস

জবির ভুক্তভোগী শিক্ষককে সিনিয়র অধ্যাপক, ‘তুই মুখটা বন্ধ রাখবি’

জবির দুই শিক্ষকের কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে
জবির দুই শিক্ষকের কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে  © ফাইল ছবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) অধ্যাপককে সহকর্মীদের মারধরের ঘটনা নতুন মোড় নিয়েছে। শিক্ষক সমিতি মারধরের ঘটনায় প্রতিবাদ লিপি দেয়ার পরের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেমস এবং ভুগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল কাদিরের তিনটি কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। এতে শিক্ষক মারধরের বিস্তারিত উঠে এসেছে। 

প্রথম দুই মিনিট ২৯ সেকেন্ডের অডিও ক্লিপে বলতে শুনা যায়,

অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম: একটা কথা কই, তুই কিন্তু আমার ভাই। মারস, কাটস, গালিগালাজ করস তুই আমার ভাই। তোর আল্লাহর দোহাই লাগি কোন অবস্থায় জিনিসটারে আর সামনে না আগাই।

অধ্যাপক আব্দুল কাদির: আমি ঠেকাব কীভাবে, আমার কি করতে হবে বলেন? 

অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম: কি করতে হবে মানে, আবুলকে ধরে নিয়ে আসবো, আবুল ত যত বাড়া বাড়ছে, সে আবুল আজকে তো বাড়ে নাই। তুর  (তোর) তো বুঝতে অনেক দেরি হয়েছে। আমার নমিনেশনটা কনফার্ম না কইরা তরা এই দরবারটা লাগাইছস। নেতা তো তোরা তৈরি করছস। যেভাবে হোক কালকে বসি বা পড়শু বসি তোর বাসায়। আবুল লুৎফরকে নিয়ে আরও যারা যারা আসা লাগব তাদের নিয়া। জিনিসটা কিন্তু আবুল একবার মাফ চাইছে ওখানে, আবার মাফ চাইবে, আমি মাফ চাই। গ্রুপে আর ঝামেলাটা বাধাইস না। ভাই আল্লাহর দোহাই জাকারিয়ারে আর সুযোগ দিস না, ঐ গ্রুপটারে আর সুযোগ দিস না।.... কথা বুঝস কি বুঝস নাই? 

অধ্যাপক আব্দুল কাদির: বুজছি ভাই।

অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম: তুই আমার ভাই।...তুই কি আমার ভাই, না ভাই না?

অধ্যাপক আব্দুল কাদির: ভাই তো বটেই।

অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম: তুই তোর এসাইনমেন্ট বাস্তবায়ন কর। যা এসাইনমেন্ট আছে সেগুলো বাস্তবতান কর।

অধ্যাপক আব্দুল কাদির: আমার কোন এসাইনমেন্ট নাই।

অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম: তোর আল্লার দোহাই জিনিস্টা নিয়া যেন আর বাড়াবাড়ি না হয়। তোর আল্লাহর দোহাই। গতকাল কিন্তু তুই আমারে কিল খাওয়াইছস, কিল কিন্তু আমি খাইছি এটা কাউরে আমি বলতে পারিনাই।

অধ্যাপক আব্দুল কাদির: এখন আমার করণীয় কি?

অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম: করণীয় হলো তুই এখন মুখটা বন্ধ রাখবি, আমি আবুল হোসেনকে বলি তরে ফোন দেওয়ার জন্য, লুৎফরকে বলি তরে আবার ফোন দেয়ার জন্য। এদের নিয়া সকলে ইফতারের পর তোর বাসায় আসি। কোন জায়গায় আমু তুই জায়গা আর টাইম ঠিক করে আমাকে জানা।

অধ্যাপক আব্দুল কাদির: আজকে তো সম্ভব না, এখন আমি ক্লাসে যাচ্ছি।

অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম: ক্লাস থেকে বের হয়ে আমাকে ফোন দে। 

অপর এক দুই মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের ক্লিপের কথোপকথনে অধ্যাপক শফিককে বলতে শুনা যায় আমি কি ফিরাইতে গিয়া ভুল করলাম?

অধ্যাপক আব্দুল কাদির: কেনো?

অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম: আমাকে অভিযুক্ত বানাইয়া, মানুষ ফোন টোন দিয়া, তোরে মারতে মারতে আমি রাখি নাই। এটা কোন কথা হইলো?

অধ্যাপক আব্দুল কাদির: এখন কি বলবো বলেন। 

অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম: আবুল, লুৎফররা তোর সামনে গেলে আমি কি বসে থাকবো? আমি তোর সামনে গিয়া দাড়াবো না?

অধ্যাপক আব্দুল কাদির: পত্রিকায় তো অনেক নানারকম রিপোর্ট আসে। আমাকে অনেকেই জিজ্ঞেস করেছে আমি কিন্তু কারো নামই বলি নাই।

অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম: কেউ বললে তুই নাম বলবি না কেন অবশ্যই বলবি।

অধ্যাপক আব্দুল কাদির: সেটা তো আমার মনে নাই।

অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম: আব্দুল্লাহ ভাই আমি ফিরাইছি কিন্তু আমরা দুইজনই। আর কেউ ফেরায়নি।

অধ্যাপক আব্দুল কাদির: সেটা এখন বলবো। অসুবিধা না।

অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম: ফেরানো যদি অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে পানিশমেন্ট পাবো অসুবিধা নাই।

অধ্যাপক আব্দুল কাদির: না না কেন পানিশমেন্ট হবে।

অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম: অভিযুক্ত দিলে তো বেডা কাঠগড়ায় দাড়াই গেছিগা না?

অধ্যাপক আব্দুল কাদির: সেটা পত্রিকায় তো আসেই।

অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম: আমিতো প্রথম মনে করছি এরা বসানোর জন্য গেছে কারণ লুৎফর ভাই, আবুল ভাই, জাকির স্যার, এরপর হইলো জামাল, আলিম ভাই এরা একটা কোর টিম আসছে। আমি প্রথম মনে করছি এরা বসানোর জন্য গেছে পরে তো দেখি ঘটনা অন্যরকম। এরপর আমি দৌঁড় দিয়া গেছি আমি দৌড়ে যাওয়ার পর তো কিছু হয়নাই। এরপর আমি বলছি একটা কিচ্ছু করতে পারবেন না। সরেন এখান থেকে সবাই। এরপরই তো সরে গেছে সবাই।

অধ্যাপক আব্দুল কাদির: হুম।

অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম: এখন তো অভিযুক্তের কাতারে আমাকে মেরে দিছিস।

অধ্যাপক আব্দুল কাদির: না না।

অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম: ঠিক আছে রে... 

আরেকটি ১৭ মিনিট ৪১ সেকেন্ডের এক ক্লিপের কিছু অংশের কথোপকথনে শফিকুজ্জামানকে বলতে শোনা যায় যে, তুই কি আমার ভাই না ভাই না ক তো? তুই কিন্তু আমার গালের মধ্যে চড় দিতাছস। 

অধ্যাপক আব্দুল কাদির: টেবিলে তো আমি আঘাত করতে পারি কিন্তু সে কি আমার গায়ে হাত দিতে পারে? 

অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম: লুৎফর ভাই তো মাপ চাইছে আবার কথা কেনো? 

অধ্যাপক আব্দুল কাদির: আমাকে কথা বলতে দিলেই তো হয়। আমাকে কেন কথা বলতে দেওয়া হলো না। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দল, সাদা দল মিলে কাজ করছে। দু’দিন পর বলবে এখানে উপাচার্য থাকবে না, ইউজিসি থাকবে না, মন্ত্রণালয় থাকবে না, দুদিন পর বলবে প্রধানমন্ত্রীও থাকবে না। বিএনপি কি এখনই ক্ষমতায় চলে এসেছে নাকি?

আন্দোলন করবেন ভালো কথা তাই বলে রেজুলেশনটাও উপাচার্যকে লিখতে দিবেন না নিজেরা লিখে এনে বলবেন সাইন দেন এরা কোন পক্ষের শক্তি? একপর্যায়ে তিনি অধ্যাপক আব্দুল কাদির: নূরে আলম আব্দুল্লাহ ভাইয়ের একটা কথা ভালো লেগেছে, সে বলেছে ওর কেনো মারছেন।আবার কিছু কিছু ম্যাডাম দেখলাম দূর থেকে বলছে যে আরো মারেন আরো মারেন। 

অধ্যাপক আব্দুল কাদির: মিটিংয়ের যে অবস্থা দেখলাম তাতে মনে হলো বিএনপি ক্ষমতায় চলে এসেছে। রইছ উদ্দীন বক্তব্য দিচ্ছে আর সবাই মনোযোগসহকারে শুনছে। এমন অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনদিন ছিলোই না।

সবশেষে শফিক কাদেরকে বলেন, ‘তুই ঘুমা তোর কাছে রিকুয়েষ্ট। শরীর ভারি ভারি হয়ে গেছে তোর।’

অডিও ক্লিপের বিষয়ে অধ্যাপক কাদের বলেন, আমি তো কোনও অডিও ক্লিপ কাউকে দিইনি। আমি জানিও না। আর আমার আইফোনে কল রেকর্ডও হয় না। আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না।

এবিষয়ে অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, কাদের আমার ছোট ভাই। ওর সাথে আমি কথা বলতেই পারি। আমি সামনাসামনি কথা বলেছি। কোন ফোন রেকর্ডের বিষয়ে আমি জানি না।


সর্বশেষ সংবাদ