মানববন্ধনে কুবি প্রক্টরকে নিয়ে অভিনব প্রতিবাদ
‘দৈনিক কাজী ওমর সিদ্দিকী রানা’
- কুবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২৩, ০১:১৩ PM , আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৩, ০৩:৫৯ PM

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী রানার আইন অমান্য করে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া সহিংসতা, সংঘর্ষ এবং হামলার ঘটনায় প্রত্যক্ষ যোগসাজশের অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন মহলে বারবারই প্রশ্ন উঠেছে এসব ঘটনায় তার ভূমিকা নিয়ে।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের তিন নেতাকে প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনায় প্রত্যক্ষ মদদদাতা হিসেবে প্রক্টরের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। তার প্রেক্ষিতে রবিবার (১২ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ সাধারণ শিক্ষার্থী বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও ব্যাঙ্গচিত্র হাতে নিয়ে মানববন্ধন করে। এসময় তারা প্ল্যাকার্ডে 'দৈনিক কাজী ওমর সিদ্দিকী রানা' নামে ব্যাঙ্গাত্মক এক দৈনিকের পরিচয় করিয়ে দেন।
এর ব্যাখ্যায় আন্দোলনের মুখপাত্র ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম জানান, প্রক্টরের দায়ীত্বে আসার পর থেকে ৫টি বড় ধরনের সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু উনি কোন ধরনের কার্যকরী পদক্ষেপ নেন নি। এসব ঘটনায় যখন আমরা অভিযোগ দিতে গিয়েছি উনি কোন অভিযোগই গ্রহণ করেন নি। আমাদের এসব অভিযোগ গ্রহণ করতে নাকি ভিসি স্যারের অনুমতি লাগবে! তাহলে তো আর উনার প্রক্টরশীপ থাকার দরকার নেই। এমনই প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়ে প্রক্টর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নাম টেনে আনছেন। উনার সকল অপকর্ম দিয়ে একটি নতুন দৈনিক প্রচার করা সম্ভব হবে। তাই উনার নামেই দৈনিকের নাম ঠিক করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী দায়িত্ব নেওয়ার আগের চার বছরে ক্যাম্পাসে বড় কোনো সংঘর্ষ হয়নি। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পাঁচ মাসের মাথায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও কাজী নজরুল ইসলাম হল ছাত্রলীগের মধ্যে পথে সাইড দেওয়ার মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বাঁধে। সে ঘটনা সেপ্টেম্বরের ৯ তারিখ দুপুরেই মিটমাটও হয়ে যায়। তবে রাতে এবং পরদিন দুপুরে আবারও সংঘর্ষ বাঁধে উভয় হল ছাত্রলীগের মাঝে। অভিযোগ ওঠে, প্রক্টর ও তার সহযোগীরা ইন্ধন দিয়েই সে ঘটনা বড় করেছেন। রাতের ঘটনার পর কার্যকরী কোনো পদক্ষেপও নেননি তিনি। এ ঘটনায় তাকে সদস্য সচিব করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও এখনো কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেননি তিনি। এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি নন বলে জানান।
দুই হলের ঘটনার তিন সপ্তাহের মাথায় ১ অক্টোবর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তির এক ধোঁয়াশা সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে প্রক্টরিয়াল বডির সামনেই বিপ্লব চন্দ্র দাসসহ আরও কয়েকজনের নেতৃত্বে শতাধিক বহিরাগত অস্ত্রসহ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ফাঁকা গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। ছাত্রলীগের দাবি অনুযায়ী, প্রক্টরের যোগসাজোশেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আগে থেকেই খবর দেন প্রক্টর। ক্যাম্পাস ফটকে অবস্থান করলেও প্রক্টরের বহিরাগতদের বিষয়ে প্রক্টরের সমর্থন থাকায় এবং তার অনুমতি না মেলায় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি পুলিশ।
গত ৬ মার্চ কুবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ। পরদিন শাখা ছাত্রলীগের নেতা এনায়েত উল্লাহ ও সালমান চৌধুরী হৃদয়কে এক সহকারী প্রক্টরের সাথে বাগবিতণ্ডার অভিযোগে ঘটনার এক মাস পর কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয়। পরদিনই বিপ্লব চন্দ্র দাসসহ আরও কয়েকজন সহযোগী স্থানীয় ছাত্রদলের এক নেতাকে নিয়ে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। সে ঘটনায় প্রক্টরের কাছে বিচার চাইলে তিনি ক্যাম্পাসের বাইরের ঘটনা দাবি করে হাস্যরস করে উড়িয়ে দেন বলে জানান ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। উপস্থিত আন্দোলনকারীরা তার প্রতিবাদ করলে তাদের জন্য নিজের সিম্প্যাথি শেষ হয়ে গেছে বলে জানান প্রক্টর।
এর আগে ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বাড়ার দাবি করে গত ৫ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা চেয়ে প্রক্টর বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সে স্মারকলিপিও তিনি গ্রহণ করেননি।
এরপর ৩০ জানুয়ারি ‘অবৈধভাবে’ হলে উঠার চেষ্টা করেন বিপ্লব চন্দ্র দাস ও তার সহযোগী সাবেক ছাত্র স্বজন বরণ বিশ্বাস, আমিনুর বিশ্বাস, মাহী হাসনাইন, ইকবাল খান ও ফয়সাল। সে সময় বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের এক নেতার দাবি, তাদের হলে ওঠার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে প্রক্টর তাদেরকে হলে উঠতে বলেছেন বলে জানান মাহী হাসনাইন। যদিও পরে প্রাধ্যক্ষের সামনে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মাহী।
এদিকে ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তির পেছনেও প্রক্টরের ভূমিকা রয়েছে বলে দাবি ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের। গত ৬ মার্চ কমিটি বিলুপ্তির আগে ও পরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন কাজী ওমর সিদ্দিকী রানা ও তার সহযোগী শিক্ষকরা। ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মী বলেন, এই প্রক্টর নিজে দায়িত্ব নিয়ে হত্যা মামলার আসামিদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করিয়েছে। তারা হয়ত ২০১৬ সালের মতো ক্যাম্পাসে আরেকটি লাশের অপেক্ষা করছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, আমার বিরুদ্ধে যদি সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে অভিযোগকারীদেরকে অবশ্যই তা প্রমাণ করতে হবে। আমি এগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট না।